১.উদয়াচল


উদয়ের দেশকাল ছুঁয়ে আসে রোজ
কার গলে বাধা সেই তামার কবজ,
হালাকু খাঁয়ের ঘোড়া চিঁহিঁচিঁহিঁ স্বরে
সামন্ত সিমায় রাখে অগম প্রাচীরে।
ফুজির শিখরদেশে খরতর তাপ
প্রথম প্রহর পাশে সকৃত অপাপ,
রাত ছেকে জমে থাকে স্বেত বিন্দু হেম
সুবহেসাদিকে ফোটে পবিত্র হেরেম।
পিঠের ক্ষততে তাই পেতে রাখি ভোর
চোখ ডলে দেখি নিজ শতেক কবর,
খুলে গেলে ভুলে তবে পুবের দুয়ার
নগরের মুখে বিষ দেখি বেশুমার!
উবে যায় যশোধন নিজ মহাকাল
কেউ কি দেখেনি সেই দিকচক্রবাল?


২.অস্তাচল


দিগন্ত সিমারেখায় উড়ে কলোচিল
রক্ত নদীতে ভাসে লাশ পিলপিল,
উড়ে যায় ব্যথাতুর পাখি ততোধিক
জননী আচলে ঢাকা শোক থিকথিক।
আসমানি সওয়াল জওয়াবে যদি
গমগম করে ওঠে হেরা গুহা ফের,
এমন হাশর নবীর,একান্ত নিজের
বুকেতে খঞ্জর বিধে আপন কাফের।
আসর ওয়াক্তে নামে মহা কালোরাত
আসমানে উবে যায় মহরম চাঁদ,
ফালাফালা কারবালা শিশুর গতর
দ্বিধায় কি কাঁপে হাত ভাগ্য বিধাতার?
আরসের ছায়াপথে হাঁটে দুলদুল
হোসেনের ধমনিতে ফোটে মরু-ফুল!


৩.দক্ষিণায়ন


সিকস্তি জলের ধান তুলিনি গোলায়
দখিন সাগর ধরে হেঁটে আসি রোজ,
মন্থন ছেকে তুলে আনি ব্যথার খবর
যে নদী ভাঙেনা তার হয়েছে কবর।
বেহুলা ভাসান লেখা তুলোট কাগজ
দেবালয় পারেনি দিতে মানুষের খোঁজ!
ব্যথার কুট লোনায় পচে গেছে চোখ,
কিন্নর কন্ঠে বলে,আমি তোমাদের লোক।
আমাদের দেখা হোক কুমেরুর জলে
লাশের পচন রোধ হবে হিম-শৈলে,
নারী গর্ভফুল ছিড়ে, আসে শিশু-স্বর
ক্লান্ত পৃথিবীতে আসে দুধের নহর।
তবুও ঘূর্ণাবর্ত পাশে আসে সন্দেহ
পরিচিত মুখের নিচে ঘাতক কেহ।


৪.উত্তরায়ণ


সারাদিন পালি এই নীল হিম রাত
পাখনার তলে গোঁজা আপন করাত,
কুটকুট করে কাটি সোনার পালক
শোকের পলিতে লেখা মিহিন শোলোক।
বহু সয়ে খুলে দেখি স্মৃতির প্যান্ডোরা
পৃথিবীর রক্ত-ক্লেদ ঠাসা আগাগোড়া,
বিষটুকু কন্ঠে ঢেলে বসেছি কৈলাসে
জগত নদীতে তবু মৃত দেবতারা ভাসে।
উড়ে আসে পাখি আর উড়ে সাদা হাস
পালকে লেখা হবে বুঝি এই ইতিহাস,
নদী চিরে পার হয় পরিযায়ী দল
মাটি ছিন্ন মুখে দেখি একই আদল।
ধরণির উৎস মূলে শোক নাভি পোতা
হাড়ের শঙ্খ বাজে,ঈশ্বর মৌন শ্রোতা।