কোথাও শৈশব ছায়া নিয়ে দাড়িয়ে আছে কিশোর ---মাগরিবের আজানের পাশে স্থির।  ঘরে ফেরার তারায় হারিয়ে ফেলেছে তার এক পাটি জুতা। সন্ধ্যার পিছু একান্ত অনিচ্ছায় ঘরে ফেরে সন্তর্পণে। তখন আম্মা কি যতনে হারিকেনের কাঁচের কালি টুকু মুছেন যেতেন যেন সমস্ত আলোটুকু ভবিষ্যৎ হয়ে ঠিকরে পরে পড়ার টেবিলে অথবা আতসি কাচের মত চোখ রাখেন গোল কাচের ভিতর।কি যে সংসয় নিয়ে কেরোসিনের বোতল হাতে নেন আর ঢেলে দেন পরিমিত খরচটুকু। কতটুকু কোমল আলো কেনা যায় কতটুকু তরল কেরোসিনে --- মেপে নেন আঙুলের কড়ে অথবা অনুমানে। সে কিশোর কুপির সলতে টেনে বালিসের ওয়ারের ভিতর গোপন ওম থেকে বের করে ম্যাচের আগুন, স্যান্ডেলের ফিতে কুপির আগুনে পুড়ে জোড়া লাগে পাছ দুয়ারের আবডালে।তখন ছানাপোনা নিয়ে ঘরে ফেরে ফুফু আম্মার গিন্নী মোরগ।সন্ধ্যার সমস্ত নিস্তব্ধতা ভাঙে মাতামহের ইকামতে।তখনি হেলানো কাঠবাদাম গাছে নামে প্রহরের প্রথম বাদুরের দল।


ভোরের কুয়াশা জড়ো হয় মক্তবের চালে।ছোট দলে বেদলে কিশোর ফেরেস্তারা হেঁটে যায় মন্থর পায়ে। কিছু বলে না কেউ অথবা শোনা যায় না, ঘুম ভাঙা জড়ানো ফিসফাস স্বর।ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে চাদর মাফলার।কারো ঘর থেকে ক্ষিন আওয়াজে ভাসে মাতামহীর তেলাওয়াত ---- আর আঙুলের ইশারায় থাকে পূব আকাশের সদ্য ফোঁটা প্রভাতি সূর্যের লালে। খড়ের ধোঁয়া লাল চায়ে শুরু হয় ভোর, পিঠার নরম ভাজে মিশে থাকে সরের আস্বাদ।কল পাড়ে কি কৌশলে হাসে তরুনী দু'জন --ফিরে যায় দুই দিকে রেখে জলের ছাপ।ক্ষিন বেল বাজিয়ে পুরোনো সাইকেলে চলে যায় হেড স্যার পিছনে রেখে যায় বয়সি বাবলার সারি।


দীর্ঘ বর্ষার দিন গুলি আসে পৃথিবীর শেষ প্রান্তরে।নিয়ে আশে পক্ষকাল বিচ্ছিন্নতা।
প্রতিটি মানুষ চুপসে থাকে নিজ নিজ গৃহ দ্বিপ অন্তরিত। দীর্ঘ দুপুরে ভাসে ভিজে উনুনের ধোঁয়া, ডালের বাগার ভেসে যায় ছোট পুকুর পেরিয়ে বাড়ির চৌহদ্দি ছাড়িয়ে। আর তখনি একটি ধ্যানি মাছরাঙা ধ্যান ভেঙে ছোট মাছ ঠোঁটে নিয়ে উড়ে যায় পূবে।  ভাতের বলক ফাটে উনুনের আচ কমে আসে, বৃষ্টির ঝাপটায় মানকচু পাতা দুলে ওঠে ফের।পশ্চিম বারান্দা থেমে থাকে ভাতঘুমে।তখনও কারো শিসের উৎস ধরে নেমে আসে জালালি কইতরের ঝাঁক।