দু:সময়ে শত্রুর সহানুভূতিও ঈশ্বরের আশির্বাদ বলে মনে হয়। প্রতিদিন যার মরণ কামনা করা হয়।  নিজের ক্রান্তি লগ্নে তার শুভ্র স্পর্শ সত্যিই ভুলিয়ে দেয় খুনোখুনির আদিমতা। তখন মনে হয় জগতে সত্যিই মানুষ বলে এক প্রকার জীব আছে।


কয়েকদিন আগের ঘটনা। যে হোস্টেলে থাকি সেখানে দুটো দল এলাকা ভিত্তিক বিভক্ত হয়ে গেছে। ক্ষমতা ভাইকে বিভক্ত করে দিতেও খুব একটা সময় নেয়না। এই এলাকায় বিভক্ত হতে গিয়ে চিরচেনা সেই বন্ধুদের মুখগুলো ক্ষণিকের মধ্যেই 'বিপক্ষ পার্টি' রুপ ধারণ করে সামান্য অসমতার জের ধরে অগ্নিমূর্তি হতে সময় নেয়না। রক্তের টান বড় টান। আর ভিন দেশে এলাকার টানে টানাটানি করতে করতে একসময় সেই এলাকাকেও বিভক্ত করে ফেলে। ফলশ্রুতিতে অপর এলাকার মোটামোটি সবল দলটি পুরো সবল হয়ে অশুরমূর্তি রুপ ধারণ করে। এমনি অবস্থার মধ্যে এক ধরনের অসস্থিকর পরিবেশ তৈরী হয় এবং হাতাহাতি মারামারি থেকে শুরু করে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে। নিজের ক্ষমতা প্রমাণ করতে তো আর কেউ কম যায়না। যেদিন সভাপতি ভাই হোস্টেল ছেড়ে চলে গেলেন তার পরপরই তার যত (সেপাই) ছিল তারাও বিতাড়িত হল। সে এক বিচ্ছিরি ব্যাপার। তাদের নিত্য ব্যবহারের সামগ্রী সমূহ এখন হোস্টেলে পড়ে আছে। কারও নিয়ে যাবার সাহসে কুলোয়না।


এমত দ্বন্দাবস্থায় সভাপতি সাহেবের মা মারা গেলেন। নিয়ম হলো-হোস্টেলের সবাই সেখানে যাওয়া। পরলোকে গমন মানুষকে অনেক আবেগ তাড়িত করে দেয়। আমরা সবাই গেলাম। এমনকি তথাকথিত শত্রুরাও। যেতে যেতে হঠাত হঠাতই আমার মনে হচ্ছিল যেন সদলবলে রাবণ পূরীতে যাচ্ছে হনুমানের দল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বড় ভাইয়ের বাড়ীতে পৌঁছে অবস্থা আরও পাল্টে গেল। বাঘ বন্দী খেলার বদলে তারা কোলাকুলি শুরু করলেন। তারপর হই হই কান্না। একেবারে বাংলা সিনেমার সেই সিন।  যেই সিনে আমরা দেখি-বাড়ী থেকে বের করে দেওয়া নায়ককে তার বড় ভাই খুশি হয়ে ভুল ক্ষমা করে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে। আমার বড় ভাইও তেমনি কাঁদতে কাঁদতে বলতেছেন-'তোরা আসবি আমি ভাবতেও পারিনি। আমার আর কোন দু:খ নেই। মা মরে যে কষ্ট পাইছি তোদের পেয়ে সেই কষ্ট ভুলে গেলাম।' হ্যাঁ। সব কষ্ট ভুলিয়ে দেওয়ার মতই এই শেষ সিনটি।


তারপরের কাহিনী-অবশেষে নিজ সম্প্রদায়ের দাঙ্গা হাঙ্গামা ভুলিয়া  গিয়া  তাহারা আবারও একত্রে বড়ই সুখে বসবাস করিতে লাগিল।


আর আমি মুচকি হেসে ভাবলাম- রাত হলে সব গরু একই গোয়ালে থাকে। কিন্তু মাঝে ঘাস খাওয়া নিয়ে নিরর্থক নিজেদের মধ্যে বিবাদ করে। আমরা সবাই কেন একসাথে একাত্ব হয়ে থাকতে পারিনা????????