নিশব্দ প্রস্থানেও তুমি এক মহাবিস্ফোরণ রেখে গেছো আমার অন্তর্গত জগতে।
তুমি চলে গেছো—তাতে কোনো দুঃখ নেই, এ কথা আমি উচ্চারণ করি প্রতিদিন,
ঠিক যেমন মৃতরা প্রতিদিন কবরের নিস্তব্ধতা মেনে নেয়।
তবুও প্রতিটি অন্যমনস্ক মুহূর্তে,
যখন নিঃশ্বাস ছুঁয়ে যায় ভেজা জানালার কাচ,
তোমার স্মৃতি এসে চুলগুলোতে রেখে যায় একরাশ ছাই,
যা সমাজের চোখে এখন ‘বুড়ো’ হওয়ার সনদপত্র।
তুমি চলে গেছো—তাতে কষ্ট নেই বলেই হয়তো
প্রতিদিন ঠোঁটে আগুন জ্বালি,
আর নিকোটিনের ধোঁয়ায় আঁকা দেহখানি হয়ে উঠেছে
এক জীবন্ত কবর,
যেখানে প্রতিটি হাসি গলে পড়ে বিষাদে।
এই ঠোঁট, যা একদিন তোমার নামের উচ্চারণে পবিত্র ছিল,
আজ সমাজের চোখে শুধুই এক পেত্নীর অভিশপ্ত প্রতিচ্ছবি।
তুমি চলে গেছো—তাতে কোনো যন্ত্রণা নেই,
কিন্তু তোমার একফোঁটা হাসির জন্য যে টাকা আমি বাবার পকেট থেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম,
তা আজও আমার গায়ে চোরের লেবেল হয়ে লেগে আছে।
সেই সময় বুঝিনি—ভালোবাসার খরচ এত উচ্চ হবে,
যেখানে পিতৃস্নেহ, আত্মসম্মান, এবং সামাজিক মর্যাদার সবই বন্ধক দিতে হয়।
তুমি ছিলে আমার নির্বোধ কবিতার প্রথম ছত্র,
আমি ভেবেছিলাম ভালোবাসা মানেই উচ্ছ্বাস,
অথচ এখন জানি—ভালোবাসা কখনও কখনও আত্মহননের আরেক নাম।
তুমি রেখে গেছো এক অদৃশ্য অনুপস্থিতি,
যা আমার অস্তিত্বের প্রতিটি ইঞ্চিতে বিষের মতো ছড়িয়ে আছে।
না, তোমার চলে যাওয়া নিয়ে কোনো দুঃখ নেই—
আছে শুধু আত্মপরিচয়ের এক দীর্ঘ অবক্ষয়,
যেখানে আমি নিজেকেই চিনতে পারি না আর।
তুমি আর ফিরে এসো না—
কারণ আমি আর আগের আমি নেই,
তোমার ভালোবাসায় যে আমি গড়ে উঠেছিলাম,
সে তো তোমার চলে যাওয়ার সঙ্গে কবেই বিলুপ্ত হয়েছে।