আমার আমৃত্যু অপরিশোধিত ঋণ রয়েছে আমার মায়ের কাছে।
দ্বিতীয়তঃ কিন্তু প্রধানত আমি প্রচন্ডভাবে ঋণী, যিনি অতি যত্নে আমার মায়ের পেট থেকে বের করে এনেছিলেন।
তারপর বাবা
যার হাত ধরে প্রথম হাঁটতে শেখা
যিনি আমাকে প্রথম শিখিয়েছেন
ডু এর পাস্ট ফরম ডিড এবং পাস্ট পার্টিসিপল ডান
তিনি শিখিয়েছিলেন অসাম্প্রদায়িকতা
আমাদের বাড়ির সামনে অন্নবালা সাহা নামে এক মহিলার দোকান ছিল।
বাবা তাঁকে বড়মা বলতে শিখিয়েছিলেন
আমরা বড় মা বলতাম। তখন জানতামনা হিন্দু ও মুসলিমের প্রভেদ।
আমার বাবার কাছে রয়ে গেছে আমৃত্যু অপরিশোধিত ঋণ।
বোনদের কথা বলতে আমার কষ্ট হয়
তাদের কাছে আছে আমার পিপাসার খণ
কাঁখে করে ঘড়া ভর্তি জল আনলেই ভাতের বদলে জল খেতাম।
তখন তো ভাতের বড্ড অভাব ছিল,
আমি সবার ছোট
কোলে পিঠে মানুষ করেছে সবাই,
ভাইয়েরা পড়িয়েছেন, থাপড়িয়েছন
আজ তাই বাংলা লিখতে পারি,
পড়তে পারি ইংরেজি ;
পড়াতে পারি আমার সন্তানদের।
এত খণ!  
আমার মাষ্টার মশায়দের কাছে কত ঋণ
এত হিসাব যোগ্য নয়,
পাড়ার দাদা-দাদী, নানা-নানি, খালাফুফু
যারা হাত ধরে পার করেছিলেন রাস্তা,
একটিবারের জন্য হলেও নিয়েছিলেন কোলে তুলে,
এমন সময় গেছে, যখন চরম দুঃসময়
হাঁডিতে পানি থাকতো, পানিতে চাল থাকতোনা,
তখন!
কে দেখেছে আমায়?
আমার স্নেহময়ী বড় মা, ছোট মা
আমার  দু'ফুফু।
হাত ধরে টেনে নিয়ে মুখে একমুঠো হলেও
ভাত তুলে দিয়েছিলেন,
তাঁরা আর কেউ বেঁচে নেই
তাহলে তো ঋণী থেকেই গেলাম।
শুধু আমার আল্লাহ ভাবনায় তাদের জন্য দোয়া করেই ক্ষান্ত হয়, আসলে কি হতে পারি?
মাথায় ঋণের বোঝা চেপেই থাকে।
বয়ে বেড়াতে বেড়াতে আমি ক্লান্ত।
এ-সব খণ তো আমৃত্যুই অপরিশোধিত।
আমার মতো খণ কার আছে জানিনা
তবে আমি নিজেকেই বড় ঋণী মনে করি।
চাকুরীতে ঢুকেছি ষোল বছর আগে
আবারও ঋণী হতে থাকলাম
জনগনের কাছে,
মুঠে মজুর, ভ্যানওয়ালা, এমনকি যাদেরকে পতিতা বলি, তাদের কাছেও ঋণী।
এক পোয়া পেয়াজ, এক কেজি আলু বা
দু'টাকার মুড়ুি কিনেও আমাকে ঋণী করছে।
তাদের কেনা টাকায় চলছে দেশের অর্থনীতি,
সে টাকায় চলছে আমার সরকারি বেতনভাতা -
তাহলে আমি তো ঋণী হয়েই রইলাম
এসবই আমৃত্যু অপরিশোধিত ঋণ।
মৃত্যুর পর আরও এক ঋণ থাকবে
যারা নিয়ে যাবে আমায় অনন্তের পথে
মাটির মাঝে সমাধিস্থ করবে অতি যতনে
তাদের প্রতিও ঋণী হয়ে থাকতে হবে
জীবনে মানুষের প্রতি মানুষের ঋণ
সবসময়ই অপরিশোধিতই থাকে।


মহিষকুন্ডি
১১/১০/২০২০