পরাবাস্তব কবিতা
জীবনানন্দ ও আমি


গাঁজার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা নিঝুম গভীর রাত
একা, আমি একা জেগে আছি
জীবনানন্দের 'নগ্ন নির্জন হাত' নিয়ে;
পাশে অঘোরে ঘুমিয়ে আছে আমার প্রিয়তমা 'ধুসর পান্ডুলিপি' হয়ে।
হঠাৎ আমার ভিতরে প্রবেশ করলেন স্বয়ং জীবনানন্দ
আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন তর্জনী আঙ্গুল ধরে
সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে চারতলা ছাদে।
সামনাসামনি দু'জনেই
আমি নির্বিকার, তাকিয়েই রইলাম
তাঁর চোখে কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা '
তিনি আমাকে বললেন, আপনি কি আমার 'অদ্ভুত আঁধার এক ' কবিতাটি পড়েছেন?
ফেসবুক তো অনেকের কবিতায় ভরা
আপনি কি সে কবিতাটি ফেসবুকে আপলোড করেছেন?
আমার কবিতাটি কি এখনও সমকালীন নয়?
আমি নির্বিকার, আমার দুচোখ জলে ভরে উঠলো
আমি জড়িয়ে ধরলাম কবিকে।
আমি বললাম, হে কবি, হে শুদ্ধতম কবি
'অদ্ভুত আঁধার এক ' যখন লিখেছিলেন তখনও সমকালীন ছিল
আজ-ও সমকালীন, আগামীতেও সমকালীন।
জ্ঞানীদের হৃদয় তো আজ শকুনের খাদ্য
মুর্খরা সবথেকে বেশি দেখে;
দলিত ও মথিত আজ শিক্ষক সমাজ।
আমি কবিকে বললাম, হে কবি
বনলতা সেন নিয়ে বলবেন একটু,
তিনি এবার স্মিত হাসি হেসে বললেন,  
এটা বাদ দিন তো। শুধু জেনে রাখুন
দুদণ্ড শান্তি আমি তার কাছেই পেয়েছিলাম।
আমি বাদ দিলাম।
আমিও তখন এক নাছোড়বান্দা
কবিকে সহজে হাতছাড়া করতে চাইনা
আমি বললাম, হে কবি
আমি আপনাকে তো সবসময়ই দেখতে চাই, চাই অনুভব করতে
তিনি আমাকে সহসাই ছাদ থেকে নেমে এক গ্রামের মেঠোপথে নিয়ে গেলেন, বললেন -
ঐযে দেখুন ভাঁটফুল
আমাকে ভাঁটফুলের মাঝেই পাবেন।
আমাকে আরও দেখতে চাইলে,
অনুভব করতে চাইলে
পড়ুন, মনযোগ দিয়ে বারবার
'আবার আসিব ফিরে '।
কবি হঠাৎই চলে যেতে চাইলেন
আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম
কবি আপনি যাবেননা, অনেক কথা
বলার আছে আপনাকে
তিনি চলে যেতে যেতে বললেন
আমি আছি প্রতিদিনের সন্ধ্যার বাতাসে,
আমি আছি শিশু হয়ে কোন এক উঠানের ঘাসে।


#বেনাপোল
০৬/০৯/২০২০