মা ,
জানো তোমাকে নিয়ে সবাই মা দিবস পালন করছে ।
তাই হয় নাকি ? তোমাকে ভালোবাসার আবার কোন দিনক্ষণ আছে নাকি ?
তুমি জননী । তুমি যখনই আমাকে পেটে ধরেছিলে সেদিন থেকেই তুমি তোমার মৃত্যুর দিনক্ষণ কষছিলে । তাই না মা !
তুমিতো কখনোই তোমার কী হবে ভেবেই দেখনি ।
শুধুই ভেবেছিলে কী হবে এবং ক্যামন আছে আমার পেটে ধারণ করা সন্তানটি ।
তোমার মনে পড়বে না ।
এটাইতো স্বাভাবিক । নাড়ির ধনকে সুস্থ রাখার অদম্য প্রয়াস ছিল তখন তোমার । সব ধরনের কষ্ট তোমার কাছে সুখ মনে হয়েছিল ।
আমার কিন্তু সবই মনে পড়ে ।
যখন আমি তোমার পেটে শুধুই রক্তের দলা ।
তুমি কখনোই চলাফেরা - উঠা -বসা ও শুয়ে বিশ্রাম করতে পারনি খোলামেলা ।
বাম কাতে শুয়ে থাকলে আমি ভালো থাকতাম , তাইতো তুমি একপাশেই কাটিয়ে দিয়েছিলে সারাটা রাত ।
ভোরবেলা বিছানা ছাড়তে পিঠে ও ঘাড়ে ব্যাথা নিয়ে ।
কত জামবাকের কৌটা শেষ করেছো । জানো মা আমি সেই জামবাকের গন্ধ পেতাম । বিরক্ত লাগতো কিছুটা । দেখ , আমিই বিরক্ত হয়ে যেতাম । আর তুমি মিটিমিটি হাসতে ।
রক্তপিন্ড থেকে ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে গেলাম । আমার বয়স তখন মাত্র চার মাস অথবা একশো কুড়ি দিন। কেবল তোমার পেটে থেকেই শুরু করেছিলাম খাওয়া। আমার যেন কষ্ট না হয় সেজন্য তুমি প্রচুর পানি খেতে ।
আর এতো পানি সহ্য করতে না পেরে বমি করে দিতে কতবারই ।
আরো বড় হলাম । প্রায়ই ছ'মাসের কাছাকাছি । শুরু করে দিয়েছিলাম তোমার জঠরের ভেতরে খেলা ।
কখনো হাত কখনো পা দিয়ে মেরেছিলাম কতশতবারই ঠ্যালা ।
তবু তুমি কত খুশিই হতে । তুমিও পারতে বেশ ।
তুমিই বলো মা আমার ।
তোমাকে ভালোবাসার কোন দিনক্ষণ থাকতে পারে ?
আমার নড়াচড়া তোমাকে সর্বদাই খুশি করতো ।
সুস্থ ছিলাম আমি পেটে তোমার ।
নড়াচড়াই জানান দিত বারবার ।
বড় হতে হতে নয়-দশ মাস বয়স হয়েছিলো আমার ।
তখন ঘুম হারাম হয়েছিলো তোমার
কুনকুনে ব্যাথা অনুভব করতে ।
আমার কষ্ট হবে ভেবে অতি সাবধানে করতে নড়াচড়া ।
তারপরে একদিন প্রসব করলে তুমি আমায় ।
তীব্র ও তীক্ষ্ণ ছিলো সে যন্ত্রণা ।
আমি ধাইমার সাহায্যে বেরিয়ে আসলাম ।
কাতরাতে কাতরাতে আমাকে একপলক দেখেও নিয়েছিলে ।
আমাকে দেখে তোমার সব যন্ত্রণার অবসান হয়েছিলো ।
মাগো দোয়া করো আমি যেন তোমার সুযোগ্য সন্তান হতে পারি ।
তোমার ছেলে ।
১০ /০৫/২০১৫