(আজ ১১ই জ‍্যৈষ্ঠ, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মজয়ন্তী। এই শুভ দিনে তাঁকে জানাই অন্তরের সুগভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি------)

একটা আগ্নেয়গিরির আচমকা অভ্যুত্থান
ঘটেছিল বর্ধমানের সুপবিত্র তীর্থস্থান
চুরুলিয়ার কোমল মাটিতে ; তা থেকে এক বিচ্ছুরিত
অগ্নিস্ফুলিঙ্গ কাঁপন ধরিয়ে করে দিল ভীত-
সন্ত্রস্ত , মানবিক সমাজ থেকে শাসনযন্ত্রের তন্ত্রে তন্ত্রে
লেখনীর ভাষায় হুঙ্কার দিয়ে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি মন্ত্রে
বাধিয়ে দিলেন চরম হুলুস্থুল্ ;
সে আগ্নেয়গিরির আর একটি নাম বিদ্রোহী নজরুল !

শৈশব কৈশোরের ক্রীড়াঙ্গণে
যখন লুটোপুটি খেয়ে হৃষ্ট মনে
মায়ের আঁচলে খোঁজে নিরাপদ আশ্রয় ,
সে বয়সে তুমি ছিলে অসমসাহসী অকুতোভয় !
লেটোর দলে ডানা মেলে উড়তে উড়তে তখন
দাতা কর্ণ , শকুনি বধের কৃতিত্ব দেখিয়ে  
                                    ঘটিয়ে দিলে বিস্মায়ন !

বসন্তের দখিনা হাওয়ায় হৃদয়-বনে যখন
ভেসে আসে আনন্দ হিল্লোলের নব গুঞ্জরণ ,
তখন তুমি দেশ প্রেমের নৈবেদ্যের ডালি সাজিয়ে
নিজেকে উৎসর্গ করলে সেনানির বেশে
                                             তূর্য নিনাদ বাজিয়ে ।

বাংলার আকাশে ধূমকেতুর আচমকা উদয়--
স্পষ্ট ঘোষণা করলো তোমার দুর্নিবার অভ্যুদয় ;
রবির জ্যোতি  বিচ্ছুরিত হলে তার অগ্নিময় শেখরে ,
স্বরাজের পবিত্র ধ্বনি উচ্চারিত হয় ভারত-অম্বরে--
উদ্দীপিত তারুণ্যে দেখা দেয় স্বতঃস্ফূর্ত স্পন্দন ,
রাজরোষের তপ্ত বাষ্পে কারাগারে হলে অন্তরণ ;
কারার অন্তরালে অগ্নিবীণা বাজিয়ে
    শিকল পরার ছলে শোনালে তুমি কারা ভাঙার গান ,
লৌহ কপাট ভেঙে লোপাট করার জানালে আহ্বান  ।

যুব-বিতানের চির কাঙ্ক্ষিত প্রেমের ডালিতে ভরি'
গানের স্রোতে ভাসিয়ে দিলে পালতোলা পরিপূর্ণ তরী !
সাম্যের গানে প্রাণ ফিরে পেল বাংলার মুক্ত অঙ্গন ,
ভারতবর্ষের ধমনীতে তুমি বহালে রক্ত সঞ্চালন ;
সাম‍্যবাদের উদাত্ত আহবানে
                                খুলে দিয়েছিলে ঐক্যের দোর,
আচমকা হলে তুমি নীরবতায় বিলীন বিভোর !

"হে বিদ্রোহী রণক্লান্ত" !
মধ্য গগনে হয়ে গেলে কেন চির নির্বাক, চির শান্ত !

           =====সমাপ্ত=====