শয়ন কক্ষের আলমারিতে অবরুদ্ধ
শৈশবের জন্মদিনে পাওয়া শৌখিন আয়নাটায়
নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে দেখতে কেটে গেল
তার শৈশব-কৈশোরের পরেও নব কিশলয়ের-
অনাবিল ঝকঝকে প্রহরগুলি ।
লাগাম পরানো বসন্তের দ্বিতীয় অধ্যায়ের
আস্তাবলে বাঁধা অবরুদ্ধ ঘোড়াটা
হঠাৎ বেলাগাম হয়ে গেল ;
মুক্তির উন্মাদনায় সে তখন অন্ধ ।
শৌখিন মুকুরটায় জমে উঠেছে ধুলোর আস্তরণ ,
ফিরে তাকাবার অবকাশ নেই আর ;
অন্ধকারের কাণা গলিতে নিঃশব্দ পদচারণায়
হয়ে গেল অচেনা একটা মানুষ---
যার বৈভবের অহমিকায় পিষ্ট হচ্ছে কত
সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের পাপড়ি ,
প্রতিনিয়ত চূর্ণ হচ্ছে কত পর্ণ কুটিরের
জীর্ণ আস্তানা !
রক্ত চক্ষুর পদাঘাতে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে সত্য ,
দাউদাউ করে জ্বলছে বস্তির ঝুপড়ির কান্না ,
ত্রাসের কিংবদন্তি সেজে সে আজ কুখ্যাত ;
শাসকের বদন্যতায় সে আজ জনপ্রতিনিধি ,
স্তাবকদের ভীড়ে তার মহাগুরুর তকমা !
আচমকা একদিন- - -
আস্ফালনের শেষ অস্ত্রটায় হ্যাঁচকা টান ,
আয়নাটা পড়ে গেল-----
রাজপ্রাসাদের বিলাসবহুল মূল্যবান মেঝেতে- - -
অক্ষত থেকে চেয়ে রইল সে নিষ্পলকে ।
ধুলোর আস্তরণ মুছে যেতেই
তার হারিয়ে যাওয়া শৈশব চমকে উঠলো---
কে , কে ওখানে- - -?
কার এই বীভৎস মুখ - - -?
ভয়ে আৎকে উঠল সে !
বিবেকের প্রতিচ্ছবি আরশির ভেতর থেকে-
বলে উঠলো-- 'ভয় পেয়ে গেলে !
ওটা তোমার নিজেরই প্রতিচ্ছবি- - -
সম্বিৎ ফিরেছে তোমার- - -!
চিনতে পেরেছো তুমি,আজকের আমিকে !
ফিরে এসো তবে তোমার হারানো শৈশবে ,
খুঁজে দেখো, ফিরে পাবে তোমার হারিয়ে যাওয়া
সুকোমল সেই সজীব সুকোমল পুষ্প-কোরক ।'
===সমাপ্ত===