শান্তি, তোমায় হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়িয়েছি
জীবন্তিকার প্রহর থেকে প্রহরান্তরে ।

সুপ্রভাতের শুভ লগ্নে তোমায় পেয়েছিলাম--
মাতৃ হৃদয়ের স্নেহ কণার পবিত্রতায় ,
সেই মমতাময়ীর আঁচলের সুগন্ধি হাওয়ায় ,
প্রতিবেশীদের আদরে সোহাগে তুমি ছিলে
                                           কত হৃদয়গ্রাহী !
শৈশবের পাঠশালাতে তোমার উন্মুক্ত হৃদয়ের
অনাবিল মাধুরিতে আমি ছিলাম পরিস্নাত।

তারপর---যখন কচি কিশলয়ের বুকে এলো
পরিপক্কতার ছোঁয়া, তুমি হয়ে উঠলে অস্পষ্ট !
মাঝে মাঝে তুমি এসে উঁকি দিতে
সফলতার সুললিত মিলন বাসরে।
যখনই তোমার সঙ্গে পারস্পরিক মিলন ঘটেছে
আনন্দের আতিশয্যে ভুলে গেছি তোমার
                                          ঠিকানা জেনে নিতে ।
তোমার অভাবে যখন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে ,
তখনই তোমায় খুঁজে বেড়াই দিক থেকে দিগন্তরে।

তোমায় খুঁজেছি কুবের পুরীর হর্ম্য মহলের
বিলাস ব্যসনের তমসাচ্ছন্ন মোহ মাদকতায় ,
কান পেতেছিলাম লুঠেলদের কোষাগারের
                                                    লৌহ কপাটে ,
ভেতরে শুনতে পাইনি তোমার কোনো পদ শব্দ ;
বৃদ্ধাশ্রমের বনবাসে দেবতাদের বিদায় করে
টাকার মোহে ছুটে বেড়াচ্ছে যারা স্বর্গোদ্যানে--
তাদের বুকেও কান পেতেছিলাম---
তোমার উপস্থিতির কোনো স্পন্দন
                                       শুনতে পাইনি এতটুকু ।

স্বার্থান্ধ ,ভণ্ড,ভেজাল ব্যবসায়ী,প্রতারক,খুনী,ধর্ষক--
সবার খিড়কি দুয়ারে উঁকি দিয়ে দেখেছি--
তোমার ছায়ামূর্তির এতটুকু আভাস
                                            খুঁজে পাইনি কোথাও ।
পল্লীর পথ ধরে এগিয়ে গেলাম তোমার সন্ধানে ,
বিস্ময়ে হতবাক! যেখানে তোমার ছিল অবাধ বিচরণ,
সেথায় দেখেছি--- চুনকাম করা দখলি দেওয়াল ;
কান পাতলাম---উঃ কী ভয়ঙ্কর আগ্রাসী হুঙ্কার !
পিচ ঢালা পথ বেয়ে পল্লীবাংলার পথে পথে
এখন দাপিয়ে বেড়ায় দখলের দামামা !
এখান থেকেও তুমি পালিয়ে গিয়েছো
নেতাদের সেলাম জানিয়ে আপাতত বিদায় নিয়ে ।

অবশেষে সবুজ বনানী ঘেরা পায়ে চলা পথ বেয়ে
প্রত্যন্ত এক গ্রামে গিয়ে, তোমার দেখা পেলাম--
এক কিষাণের মাটির ঘরে,তুমি ছিলে গল্পে রত ;
উচ্ছল আনন্দে তিন পুরুষের গ্রন্থি বন্ধনে ,
তুমি সেথা স্বেচ্ছায় বন্দী হয়ে আছো নিশ্চিন্ত মনে ।

                          =======