তোমায় আজ খুব মনে পড়ে বাবা ,
স্মৃতির মুকুরে ভেসে ওঠে শৈশবের কতো
টুকরো টুকরো জীবনালেখ্য !
আষাঢ় এখন মধ্য গগনে,আজ জামাইষষ্ঠী ;
জামাইষষ্ঠীতে আমাদের বাড়িটা হতো আনন্দাশ্রম ,
বিভাজনের যূপকাষ্ঠে বিভাজিত মামাবাড়িটা ছিল
কামারশালার হাপরের মতো দীর্ঘশ্বাসের তপ্ত হাওয়া ;
মামা বাড়ির স্বাদটা তাই তুমি পুষিয়ে দিতে বাড়িতেই ।
আষাঢ়ের ভরা কোটালের জলস্ফীতি আর
সহযোগী ধারা বরিষণের যুগপৎ উচ্ছাসে
উঠোন বাগান যখন প্লাবিত হতো ,
অবিশ্রান্ত ধারা বরিষণে উচ্ছল আনন্দে তোমার সঙ্গে
নৃত্যরত হরিণ শিশুর মতো ছলাৎ ছলাৎ করে
ছুটে যেতাম পুকুর পাড়ে ,তুমি আমায় সাঁতার শেখাতে
তোমার স্নেহের বাহু প্রসারিত করে ,
মাভৈঃ বাণীর ভরসা দিয়ে ।
তারপর ছুটতে ছুটতে ফিরে এসে সুরভিত
ভাজা ইলিশের লোভাতুর সুগন্ধে দাঁড়াতাম গিয়ে
মায়ের কাছে উনুনের পিছনে উষ্ণতার স্বাদ নিতে ।
ঠাকুর ঘরে তোমার হাতে বেজে ওঠা
কাঁসরের স্মৃতিধ্বনি আমার কর্ণরন্ধ্রে আজো
প্রতিধ্বনিত হয় ;প্রতিবেশীদের কাছে
এই কাঁসরধ্বনি ছিল সময় নিরূপক নির্ঘন্ট স্মারক
আর অনবদ্য এক চর্চিত বিষয় ;
ঠাকুর ঘরের এই আনন্দধ্বনির রবাহুতে ছুটে আসতো
বাড়িসুদ্ধ আমার বন্ধুদল ;পরিতৃপ্তি লাভ করতো
তোমার স্বহস্তে বিতরিত প্রসাদের সুষ্ঠু পরিবেশনায় ।
তোমার বজ্রকঠোর শাসনের কথাও ভুলিনি আজও ,
শৈশবের সারল্যে বন্ধুর প্ররোচনায় সামান্য অপরাধে
তোমার গুরু দণ্ডের শিক্ষা আজো অবিস্মরণীয় ।
গৌরবের আতিশয্যে পুলকিত হয়ে উঠি এই ভেবে যে--
তোমার মতো আদর্শবান পিতার পুত্র হতে পেরেছি ;
অকালে তুমি চলে গেলে বাবা !
তোমার স্মৃতিময় দিনগুলি আমার জীবনের
চলার পথের উজ্জ্বলতম নির্ভরশীল পাথেয় ।
====সমাপ্ত====