আপন ঘর
হাসান মাহমুদ
এইখানে বাবা ঘুমায়ে আছেন—বাঁশ আর মেহগনির তলে,
শত বছরের বাবা আমাদের মিশে গেছে কাদা জলে।
ছোটবেলা থেকে শান্ত মানুষ, হাসি মুখে ধীর চলা, বাপের একমাত্র দুলাল তিনি, তবু কোথায় নেই বলা।
মাদ্রাসা, মসজিদ, দরজার পথ এই ছিলো তাঁর ঘর,
জামাতে আগে, পরে থাকেন, নামাজে নয় কোনো পর।
আজান দিতেন এমন সুরে ভোরের পাখি থেমে থাকত,
আমাদের ঘুম ভাঙত যখন, তার কণ্ঠে সকাল হইত।
"আয় বেটা," বলে ডাকতেন আমায়, হাসি দিতেন বেশ,
আদর মাখা ছুটে চলা সেই ক্ষণ ক্লান্ত কিছু লেশ। তাহার মুখের হাসিটুকু প্রাণ কারানো ঘুম , কতদিন যে চুপটি বসে শুনি নাই,শুধু তাঁরই কথার ধুম।
শিক্ষিত জন, সুবক্তা মানুষ, তবু ছিলেন মাটির মতো,
অহংকার ছুঁয়েও দেখেনি, সব কাজ করতেন বিনা কথো।
শান্ত এমন মানুষ হয়তো আর পাবো না ধরায়
সবই তার পরে আছে নেই আদরের দুলাল কামরায়।
সেদিন আমি বাড়ি ফিরি, আমায় বলেন, “কে রে তুই?”
চোখে তখন ছায়া নামে, আমি ভাবতাম, মুখ যে শুকায়।
সে বুঝতে পারেননি আমায়, বয়স আর রোগে ভুলে,
তবুও চোখের কোণে জল স্মৃতি জেগে উঠেছে বলে।
তাঁর চলে যাওয়া মানে যেন একটা দোয়া চুপসে যাওয়া,
একটা গামছা, মসজিদের ধূলা সব হারিয়ে পথের ছাওয়া।
জানাজা শেষে যখন সবাই—মাটি দিলো শান্ত হয়ে,
আমি দূর থেকে দেখিলাম শুনিলাম, বলিলাম হায় রে!
রেখে গেলেন তার বিত্ত সম্পদ, আহাল পরিজন
রেখে গেলেন তার জৌলুশ প্রতিপত্তি সম্মান।
সাথে নিলেন ভালোবাসা,নেক আমল আর গুণ
পার পেতে পারে এরই উছিলায় স্বর্গের মান।
এমন মানুষ ধরে আমরা গেরে দিলাম আপন ঘরের মাঝায়
হে রহিম রহমান ক্ষমা করো আমাদের তারও উছিলায়।
মাঠে গেলে আজান বাজে না, বাড়ির পাশে মোল্লা হাঁটেন না।
রোদের ভেতর নীরবতা বাজে, মোল্লা ছাড়া গাঁয়ে যে পিয়ানো বাজে না!
আয় দোয়া মাঙ সবে, দোয়া মাঙ মোল্লা সাহেব সপি
আমাদের মোল্লারে যেন জান্নাত দেন আয় রবের কাছে যপি।
এইখানে বাবা ঘুমায় আজ বাঁশ আর মেহগনি ছায়ায়,
জান্নাতের ফুল ফুটে উঠুক—এই গোরস্থানের মায়ায়।
হাত জোড় করে দোয়া চাই—খোদা, দয়া করো তাঁরে,
আমার বাবার এই কবরখানি—রাখো তোমার রহমতের দ্বারে।
উৎসর্গ মৃত আব্দুস সত্তার মোল্লা সাহেব কে