সেদিনও ছিলো সোনালি ফসলে ভরা মাঠ
নদী বাঁকা স্রোতে বাঁকা পথে সেদিনও বয়েছে
বিহঙ্গ বিহঙ্গির কানে কাথা সেদিনও কয়েছে
সেদিনও অস্ত আকাশে উঠেছিল বাঁকা চাঁদ
তারা আর জোনাকির সাথে কয়েছিলো কথা সেদিনও এই রাত


কিন্তু হায় আমি কোথায় ছিলাম সেদিন?
বুঝি নীল আকাশ কুঞ্জে মেঘর পুঞ্জে ছিলাম বিলীন।
হঠাৎ করে পাহাড় কোলে বৃষ্টি হয়ে পড়েছি গলে
সেই বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু জল
কাদা বালি কাকরের পথ বেয়ে
পাহাড় মাতার গর্ভে নিয়েছিলাম আশ্রয়
সেখানে ছিলাম আমি সমুদ্র গভীর অন্ধকার ঘুমে
পৃথিবীর সুখ দুঃখ তখনো ছোয়নি আমার স্বপ্নময় শূন্য মন
তখনো খোলেনি আমার শরীরের পাঁচটি জানালা
তখন ছিলাম আমি অজানা জগতের স্বপ্ন সাধনায়
মৌন ধেয়ানে ঋষির মতন
হঠাৎ স্বপ্ন ঘুম আমার ভেঙে গেল সাগরের ঢেউয়ের উচ্ছ্বাসে
পাথর ভেঙে ঝর্নাহয়ে ঝরে গেলাম অটল বিশ্বাসে
আমি জলভরা নবীন নদী
পাথর খয়ে খয়ে নিম্ন ভূমি হয়ে
ছুটে গেলাম সাগরপানে আমি নিরবধি
কোথায় সীমানা কিছুই না যেনে
শুধু আপন পথের সন্ধান করে চলি মাটির বুক ভেদি
যেতে যেতে পথে আমার দুপাসে ফুটায়ে যাই কত ফুল
কখনো ভাঙি আর কখনো গড়ি সুখ দুঃখের দুই কুল
মাঝি আমারে ভালোবেসে হৃদয়ের কাছে এসে
রঙিন পাল তোলা নৌকা ভাসায়
আমার সাথে মিতালি তার ভাটিয়ালি গানের ভাষায়
জেলেরা আমার শরীর ছেকে ধরে কত মাছ
কৃষকের ফসলের মাঠে রেখে যায় পলির আবরন
ভরে তুলি সবুজ ফসলে
লাখো নক্ষত্র মুখ দেখে আমার বুকের আয়নায়


হয়ত একদিন আমার এ দেহখানি শীর্ণহয়ে যাবে
আমার বুকেতে নৌকা ভাসায়ে মাঝি
ভাটির গান আর না গাবে
আমার বুকের আয়না ভেঙেদেবে নিঠুর বালুচর
নক্ষত্র রাখবেনা আমার খবর
আমার চলার পথ মুছে যাবে পৃথিবীর পর
সেদিন কি মাঝি আমারে রাখবে স্মরণে?
নক্ষত্র কি দেখবেনা আমারে স্বপনে?
গোপনে বসে কেউ ভাববে না আমার কথা?
সাগর কি রাখবে মনে আমার সামান্য দান?
নাকি তার লোনা জলে লীন হয়ে যাবো আমি চিরতরে?


সেদিনও ভরবে সোনালি ফসলে মাঠ
নদী বাঁকা স্রোতে বাঁকা পথে সেদিনও বইবে
বিহঙ্গ বিহঙ্গির কানে কথা সেদিনও কইবে
সেদিনও অস্ত আকাশে উঠবে বাঁকা চাঁদ
তারা আর জোনাকির সাথে কইবে কথা সেদিনও এই রাত
কিন্তু হায় আমি কোথায় থাকবো সেদিন?
সন্ধার রাঙা মেঘ রাত্রির আগমনে যেমন দিগন্তে বিলিন!