পূর্বসূত্রঃ
[আমিঃ “আমার কখনো কখনো ইচ্ছে পায় হতে নিয়ন বাতি
সমেত মাঝরাতের রাতজাগা নিঃসঙ্গ ল্যাম্পপোস্ট ।
দিনের কর্মব্যস্ত ও রাতের শুনশান জনপদের চির
বৈপরীত্বের নীরব সাক্ষী নির্ঘুম রাতজাগা ল্যাম্পপোস্ট ।
রাতের আকাশের সামিয়ানায় শুয়ে থাকা কুকুর আর
মানুষের সহ অবস্থানের সাক্ষী রাতজাগা ল্যাম্পপোস্ট” ।
………………………………………………………………...
………………………………………………………………...
প্রিন্সেসঃ হুম ... এটা কি শুধু কবির কল্পনা নাকি বাস্তবেও এই তুই
নামে কেউ বর্তমান ? মানব প্রজাতির কেউ হলে এই “তুই”র
নিজস্ব একটি নামও তো থাকার কথা । নয় কি ? ]
অষ্টম পর্বঃ যেতে চাই গভীরে ।
আমিঃ হা হা হা । কবিগুরু বলেছেন “কবিরে খুঁজো না জীবন চরিতে” ।
কবিতায় কিছু বাস্তব অনুভূতি কল্পনার রঙে বর্ণিল হয়ে উঠে ।
কবিতা তাই সরাসরি কবির জীবন চরিত নয় ।
প্রিন্সেসঃ হি হি হি। কবিগুরুর ঘাড়ে দোষ ছাপিয়ে পিঠ বাঁচানোর
চেষ্টা করা হচ্ছে। সামনে এগোনো হোক জনাব কাঁক কবি ।
আমিঃ “আমার অবিরত গন্তব্যহীন পথ চলা নিস্তরঙ্গ বর্ণহীন
জীবনে তোকে ঘিরে তৈরি হল নোঙরের স্বপ্ন । আজ
আমার কেন জানি মনে হয় স্বপ্নহীন, গন্তব্যহীন ঐ
বোহেমিয়ান জীবনটাই হয়তো ছিল ভালো । কিছু ছিল
না বলে কিছু হারানোর ভয়ও ছিল না, স্বপ্ন ছিল না বলে
স্বপ্ন ভঙ্গের ভয় ছিল না বেদনাও ছিল না । আমি ছিলাম
এক মুক্ত বিহঙ্গ, পায়ে স্বপ্নের সোনালী বেড়ী পরিয়ে তুই
আমাকে দিলি এক আমৃত্যু শৃঙ্খলিত জীবন । তুই আমাকে
দিলি এক স্বপ্নবাহী কৃতদাশের শৃঙ্খলিত জীবন” ।
প্রিন্সেসঃ “নোঙরের স্বপ্ন” বেশ লাগলো তো কথাটা, কিন্তু আমাকে
নিশ্চয়ই এটা বিশ্বাস করতে বলবে না যে এই লেখা শুধু
তোমার ভাবনার ফসল । নিজের জীবনে এই অভিজ্ঞতা
না থাকলে লেখায় এতো গভীরতা আসা সম্ভব নয় । না,
কিছুতেই নয় । সত্যিটা কি কাঁক কবি ? কে আছে এই
কবিতার পেছনে? আপনি ধরা পরে গেছেন কাঁককবি ।
আমিঃ কবিগুরু আরও বলেছেন “কবে কোন গান কাহারে করিয়াছিনু
দান, শুধাইও না” কবিরাও মানুষ, তাদেরও ব্যক্তিগত জীবন
থাকে, তাই কবিদের জীবনে কিছু আড়াল, কিছু রহস্য থাকাই
ভালো নাহলে সাহিত্য হয়ে যাবে কবির ব্যক্তিগত জীবনচরিত ।
এটা হলে তার ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা যেমন বিঘ্নিত হবে
তেমনি সাহিত্য ও তার শিল্পমান হারাবে । তাই থাকুক নাহয়
কিছু আড়াল । থাকুক কিছু রহস্য ।
প্রিন্সেসঃ সে তো আপামর পাঠকের জন্য । কবির কাছের লোক,
নিজ পরিবারের লোক এরা তো কবির লেখা ও জীবন চরিত
দুটোই পাশাপাশি পায় ।
আমিঃ কথাটা আংশিক সত্য । কবির চারপাশের লোকেরা তার
জীবনটা দেখে বাইরে থেকে । যারা কাছের মানুষ তারা এর
থেকে আরেকটু বেশী বুঝতে পারে । কিন্তু কল্পনার জগতে
কবি একাকী, সেখানে তার কোন সঙ্গী নেই । সে সেখানে
নিঃসঙ্গ কিন্তু অসীম তার সৃষ্টি ক্ষমতা, নিঃসঙ্গ মহারাজ ।
প্রিন্সেসঃ হুম... শুনেছি কবিগুরুর জীবনে, উনার লেখার পেছনে
অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নারীর প্রেম ও অনুপ্রেরণা ।
আমিঃ হুম ২ ... উনি শুধু কবিগুরু বা বিশ্বকবি ছিলেন না, প্রেমেরও
গুরু ছিলেন । উনার ব্যক্তি জীবনে দেশী ও বিদেশী মোট সাত
জন প্রধান নারীর কথা জানা যায় যারা উনার লেখার ও জীবনের
প্রেরণা ছিলেন । এর বাইরেও আরও কেউ কেউ ছিলেন বলে
শোনা যায় যাদের কথা বিস্তারিত কিছু আজ আর জানা যায় না ।
প্রিন্সেসঃ হুম ৩ ... সাতজনের কথা জানা যায়, অজানা আরও অনেকেই!
তাহলে তো দেখা যাচ্ছে উনি শুধু বিশ্ব কবি না বিশ্ব প্রেমিকও ছিলেন।
সব পুরুষরা দেখছি একই ধরনের ।
আমিঃ হুম ৪ ... যখন একটা চাবি দিয়ে অনেক তালা খোলা যায় তখন
তাকে বলে “মাস্টার কি" আর একটি তালা যখন অনেক চাবি দিয়ে
খোলা যায় তখন তাকে বলে “নষ্ট তালা” । এখানে ছেলেরা চাবি
আর মেয়েরা তালার সাথে তুল্য । বোঝা গেলো কিছু ?
প্রিন্সেসঃ হুম ৫ ... যত্তসব আজেবাজে কৌতুক,পুরনো,মানুষ কখনো
তালাচাবির সাথে তুল্য হতে পারে না । আচ্ছা কবিগুরু সম্পর্কে
তুমি এতো কিছু জানো কিভাবে ?
আমিঃ হুম ৬ ... কবিগুরু জীবন ও সাহিত্যের সামগ্রিকতাকে সুনিপুন
ভাবে তার লেখার শরীরে ধারণ করছেন । এমন কোন মানবীয়
অনুভূতি নেই যা তার লেখায় উঠে আসেনি । এই বিপুল
বহুমাত্রিকতার পাশাপাশি জীবনবোধের গভীরতা ও ভাষার
পরিপূর্ণতায় তার লেখা হয়ে উঠেছে কালজয়ী । রবীন্দ্রনাথ ও
তার সৃষ্টি নিয়ে যখনি কিছু পড়েছি, জানার চেষ্টা করেছি,
পড়া শেষ করার পর দেখেছি অনেক কিছুই বাদ পরে গেছে ।
আরও নতুন কিছু খুঁজেছি আবার পড়তে বসেছি । এভাবে
যতবার পড়েছি, নতুন কিছু জেনেছি তবুও ততবারই দেখেছি
কিছু না কিছু বাদ পরে গেছে । আবার পড়া শুরু করেছি,
এভাবে কিছুটা জানতে পেরেছি । এখনো অনেক জানার
বাকি । জানার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই দোষ আসলে আমার নয়,
কবিগুরুর । কবিগুরু এমনই একজন বহুমাত্রিক বিপুল ব্যক্তিত্ব
যাকে পুরোপুরি ধারণ করা দুঃসাধ্য ।
প্রিন্সেসঃ হুম ৭ ... বিশাল উনার ব্যপ্তি, এবার গুরুর জীবনের প্রেম ও
নারীদের সম্পর্কে শুনতে চাই। উনার স্ত্রীর নাম ছিল মৃণালিনী
দেবী । এই সাতজন কি মৃণালিনী দেবী সহ ?
আমিঃ হুম ৮ ... হ্যা মৃণালিনী দেবীসহ । মৃণালিনী দেবীর আসল
নাম ছিল ভবতারিণী দেবী । উনি খুলনা অঞ্চলের দক্ষিণডিঙ্গি
গ্রামের মেয়ে ছিলেন । ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর কবিগুরুর
সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ হয় ভবতারিণী দেবীর । তিনি
ততটা শিক্ষিত বা কবি গুরুর স্ত্রী হওয়ার যোগ্য ছিলেন না,
বিয়ের পর তাই তাকে একটা আধুনিক নাম দেওয়া হলো
মৃণালিনী দেবী। তা ছাড়া, লেখাপড়া শিখিয়ে তাকে তরুণ
রবীন্দ্রনাথের 'উপযুক্ত' করে গড়ে তোলার চেষ্টাও করা হয় ।
প্রিন্সেসঃ হুম ৯ ... মৃণালিনী দেবীই কি কবিগুরুর জীবনে প্রথম
নারী ?
আমিঃ হুম ১০ ... না , কবিগুরুর জীবন পথের প্রথম ও অন্যতম
প্রধান নারী তাঁর বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রী, কাদম্বরী
দেবী। কাদম্বরী দেবী ছিলেন তাঁর প্রথম খেলার সাথী, তার
সাহিত্য ভুবনের সঙ্গী, বন্ধু, প্রথম পাঠিকা ও সমালোচক ।
এমনকি এক পর্যায়ে কৈশোরিক প্রণয়ও তাঁদের মধ্যে দেখা
দিয়েছিলো কিন্তু পুরটাই আত্মিক, এর সাথে বিন্দু মাত্র কাম,
বা দেহজ কোন সম্পর্ক ছিল না।
প্রিন্সেসঃ এই অসম সম্পর্কের সূত্রপাত কেন বা কিভাবে হয়েছিল ?
বিদ্রঃ সাময়িক বিরতির পর আজ “ফেসবুক, আমি এবং একজন প্রিন্সেস আদিয়াত” লেখাটির “অষ্টম পর্ব” পোস্ট দিলাম । আগে প্রথম থেকে সপ্তম পর্ব পোস্ট দিয়েছিলাম । যারা ঐ কিস্তি সাতটি পড়েননি তাদের অনুরোধ করবো পড়ে নিতে নাহলে পুরোপুরি রস আস্বাদন করতে অসুবিধা হবে। লেখাটা অনেক বড় হবে । লেখার কাজ চলছে । ১০০ পৃষ্ঠা + লেখার ইচ্ছে আছে, মাল, মসলাও রেডি । আপনি ঠিকই শুনেছেন ১০০+ পৃষ্ঠার একটি কবিতা । ভবিষ্যতে হয়তো একটি কবিতা দিয়েই একটি বই হলেও হতে পারে। সেটা নির্ভর করছে আপনাদের ভালো লাগা ও সমর্থনের উপর। কয়েকটি ধাপে বাকি অংশ গুলো আসবে । এটি মূলত ফেসবুক নির্ভর নতুন ঘরানার একটি গদ্য কবিতা । প্রথাগত কবিদের অনেকের কাছেই এটাকে কবিতা ভাবতে কষ্ট হতে পারে । এটা লিখতে গিয়ে আমারও একটি নতুন ধারা বলে মনে হয়েছে । অনেকটা Dialogue বা Conversation ধরনের যার প্লাটফর্ম হচ্ছে ফেসবুক । প্রথম দুইটা পর্বে যে গদ্য কবিতার কথা বলেছিলাম এটা সেই পরীক্ষা মূলক গদ্য কবিতা । তাই তালমিল বা ছন্দের ভেতর নয়, কাব্যিকতা খুঁজতে বলবো ভাষার ব্যবহার, উত্তর প্রতি উত্তর ও স্বগতোক্তির ছন্দের ভেতর। কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না যেন । সাথে থাকুন। ধন্যবাদ ।
রচনাকালঃ ১২-০৯-১৩ ইং (চলমান)
দৃষ্টি আকর্ষণঃ সামনে আসছে আমার নিজের লেখা অন্যতম প্রিয় একটি কবিতা “প্রথম নারী” । পড়ার অগ্রিম আমন্ত্রণ রইল । কথা দিলাম ভালো লাগবে ।