পূর্বসূত্রঃ  

[ আমিঃ মার্ক টোয়েন, তাহলে তো আমার বইগুলো ধন্য হতো,
        আমি নিজেই তো উনার ছোট খাট এক শিস্য ছিলাম ।
        নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোপন সুত্র থেকে জানতে
       পেরেছিলাম সবাই যার যার পছন্দ মত বই নিয়ে যাবার
       পর বাদ বাকি বইগুলো নাকি আমাদের বাবুর্চি কেজিদরে
       বেচে দিয়েছিল ।
        
   ---------------------------------------------------------------------


  -----------------------------------------------------------------------


আমিঃ কোন কোন অর্থে মানুষ দেবতার চেয়ে বড় মানুষের মত
       প্রতিনিয়ত প্রতিনিয়ত ভাল-মন্দ, পাপ-পুণ্য, শুচি-অসুচির
       পরীক্ষা তাকে দিতে হয় না । তাই মানুষের কোন কিছুই
       সর্বাঙ্গীণ নিখুত নয় । তার নিখুত হয়ে ওঠার যে আজীবন
        চেষ্টা সেটাই আসলে মানবতা । সে ভুল করবে, ভুল থেকে
        শিখবে, নিজের ভুল বুঝে সঠিক পথে ফিরে আসবে। এর
        ভেতর দিয়েই সে মনুষ্যত্বের সাধনায় এগিয়ে যাবে । ]


দ্বাদশ পর্বঃ মনুষ্যত্বের সাধনা

প্রিন্সেসঃ মানুষের মানুষ হয়ে উঠার এই পথটি কিন্তু মোটেই মসৃণ
         বা কুসুমাস্তীর্ণ নয় । তার মনের ভেতরেই আছে অশুভ রিপু ।
         তাকে প্রতিনিয়ত রিপুর বল্গাহারা প্রলোভন জয় করে মানুষ
         হয়ে উঠতে হয় । এ লড়াই কখনো শেষ হয়ে যায় না ।  

আমিঃ এ জায়গাটিতেই আসলে মানুষের সাথে অন্য সব সৃষ্টির মুল
         পার্থক্য । শুধু মানুষ হিসেবে জন্মালেই কিন্তু সবকিছু শেষ
         হয়ে যায় না মানুষকে কঠোর সাধনা করে মানুষ হতে হয়
         যা অন্য কোন সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় । ফিরে যাই সেই
         শাশ্বত প্রাচীন প্রবচনের কাছে “পশু পক্ষী তরুলতা সহজেই
         পশুপক্ষী তরুলতা কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় তবেই মানুষ”।
        এই লাইন কয়টিতেই মূলত বলে দেয়া হয়েছে মানুষের মানুষ
         হবার সাধনা এবং অন্য সব সৃষ্টির সাথে মানুষের মুল পার্থক্য ।  

প্রিন্সেসঃ মানুষের কাজ দিয়েই তার নিজস্বতা ও অবস্থান নির্ধারিত
          হয় । ভালো না হয়ে আপাত প্রলোভনে পরে সে তাই খারাপও
          হয়ে যেতে পারে পারে ।  

আমিঃ দেবতা বা বন্য পশুদের চরিত্র পূর্ব নির্ধারিত, দেবতাদের
        সবটাই ভালো অন্যদিকে বন্য পশু বোধহীন জৈবিক সৃষ্টি।
        কিন্তু মানুষের শরীর নিয়ে জন্ম নিলেই মানুষ হওয়া যায়
        না তাকে ভেতর ও বাইরের প্রলোভন ও মোহের সাথে
        অবিরত লড়াই করে মানবতার ঝান্ডা সমুন্নত রাখতে হয় ।

প্রিন্সেসঃ সেজন্যই মানুষের শরীর নিয়ে জন্ম নিলেও সবাই ঠিক
         মানুষ হয়ে উঠতে পারে না ।  

আমিঃ মানুষ হয়ে ওঠা একটি অবিরত সাধনার বিষয়, অনেক
       কঠিন ইচ্ছে শক্তি, নিরলস সাধনা, অসীম ত্যাগ ও শ্রমের
       প্রয়োজন হয় এই সাধনায় সিদ্ধি লাভ করতে হলে ।  

প্রিন্সেসঃ এ সাধনার পেছনে তার পারিবারিক ও সামাজিক আবহ,
          শিক্ষা ও মূল্যবোধের বড় একটি ভুমিকা আছে ।

আমিঃ ভালো মন্দ যে চেনায় সে বিবেক, বিবেককে সুগঠিত করে
           শিক্ষা, আর মানুষকে পরিপূর্ণ করে আত্মজ্ঞান ।

প্রিন্সেসঃ বিবেক, শিক্ষা ও আত্মজ্ঞান তিনটি পরস্পর সম্পর্কিত
         কিন্তু আলাদা বিষয় ।

আমিঃ বিবেক হচ্ছে মানুষের ভেতর বসে থাকা ঐশ্বরিক আত্মা,
       তার নিজস্ব একটি মূল্যায়ন পদ্ধতি আছে যার সাহায্যে সে
       ভালো বা খারাপ শনাক্ত করতে পারে। এই বিবেক মানুষকে
       ভালো কাজে উৎসাহিত বা মন্দ কাজে প্ররোচিত করতে পারে ।

প্রিন্সেসঃ আর শিক্ষা হচ্ছে বিবেককে শাণিত করে তোলার অস্ত্র ।

আমিঃ শিক্ষা কিন্তু অস্ত্রের মতোই ভালো বা খারাপ দুই ধরনের
        হতে পারে, মানুষ যেমন বিবেকের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে
        উঠতে পারে তেমনি রিপুর তাড়নায় ভ্রষ্ট হয়ে যেতে পারে।  
        
প্রিন্সেসঃ শিক্ষা ও জ্ঞানের সাধনা মানুষকে ভাল মন্দের ভেদ চিনতে
         শেখায় । সঠিক পথের সন্ধান দেয় ।

আমিঃআবার একই শিক্ষা বা জ্ঞানকেও কিন্তু অনেক সময় ভালো
        খারাপ দুই ধরনের কাজেই ব্যবহার করা যায় । এক্ষেত্রে মুল
        বিবেচ্য বিষয় হল কাজের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য

প্রিন্সেসঃ যে যেমন ভাবে ব্যবহার করবে সে সেরকম ফলই পাবে ।

আমিঃ অবশ্যই, মানুষ জন্মায় মানুষের শরীর নিয়ে, ভালো শিক্ষা
       তার আত্মা তথা বিবেককে আলোকিত করে তাকে সত্যিকার
       মানুষ করে তুলতে পারে, অন্যদিকে অপ বা খারাপ শিক্ষা
       তাকে সৃষ্টির নিকৃষ্ট পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে ।

প্রিন্সেসঃ সেজন্যই তো বলা হয় “জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক
         ভালো” ।  অথবা “নামে নয় কাজে পরিচয়” ।


বিদ্রঃ সাময়িক বিরতির পর আজ “ফেসবুক আমি এবং একজন প্রিন্সেস আদিয়াত” লেখাটির “দ্বাদশ পর্ব” পোস্ট দিলাম । আগে প্রথম থেকে একদশ পর্ব পোস্ট দিয়েছিলাম । যারা ঐ কিস্তি কয়টি পড়েননি তাদের অনুরোধ করবো পড়ে নিতে নাহলে পুরোপুরি রস আস্বাদন করতে অসুবিধা হবে। লেখাটা অনেক বড় হবে । লেখার কাজ চলছে । ১০০ পৃষ্ঠা + লেখার ইচ্ছে আছে, মাল, মসলাও রেডি । আপনি ঠিকই শুনেছেন ১০০+ পৃষ্ঠার একটি কবিতা । ভবিষ্যতে হয়তো একটি কবিতা দিয়েই একটি বই হলেও হতে পারে। সেটা নির্ভর করছে আপনাদের ভালো লাগা ও সমর্থনের উপর। কয়েকটি ধাপে বাকি অংশ গুলো আসবে । এটি মূলত ফেসবুক নির্ভর নতুন ঘরানার একটি গদ্য কবিতা । প্রথাগত কবিদের অনেকের কাছেই এটাকে কবিতা ভাবতে কষ্ট হতে পারে । এটা লিখতে গিয়ে আমারও একটি নতুন ধারা বলে মনে হয়েছে । অনেকটা Dialogue বা Conversation ধরনের যার প্লাটফর্ম হচ্ছে ফেসবুক ।  প্রথম দুইটা পর্বে যে গদ্য কবিতার কথা বলেছিলাম এটা সেই পরীক্ষা মূলক গদ্য কবিতা । তাই তালমিল বা ছন্দের ভেতর নয়, কাব্যিকতা খুঁজতে বলবো ভাষার ব্যবহার, উত্তর প্রতি উত্তর ও স্বগতোক্তির ছন্দের ভেতর। কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না যেন । সাথে থাকুন। ধন্যবাদ ।

রচনাকালঃ  ০৮-১১-১৩ ইং                                                                                                                   (চলমান)