পূর্বসূত্রঃ  


[ প্রিন্সেসঃ মানুষের মানুষ হয়ে উঠার এই পথটি কিন্তু মোটেই মসৃণ
         বা কুসুমাস্তীর্ণ নয় । তার মনের ভেতরেই আছে অশুভ রিপু।
         তাকে প্রতিনিয়ত রিপুর বল্গাহারা প্রলোভন জয় করে মানুষ
         হয়ে উঠতে হয় । এ লড়াই কখনো শেষ হয়ে যায় না ।  


--------------------------------------------------------


--------------------------------------------------------


প্রিন্সেসঃ সেজন্যই তো বলা হয় “জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক
         ভালো” ।  অথবা “নামে নয় কাজে পরিচয়” । ]


ত্রয়োদশ পর্বঃ মন বিশ্লেষণ  


আমিঃ মানুষ একটি বৈচিত্র্যময় সৃষ্টি, একই মানুষের ভেতর
       আছে ভালো ও মন্দ দুইই। তার আত্মউন্নয়ন বা অবনতি
       নির্ভর করবে তার শিক্ষা ও কাজের উপর। সে কি মনুষ্যত্বের
       সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করে মানব হয়ে উঠবে না রিপুর
        দাশ হয়ে মানুষের শরীরে দানব হবে, সে পথ তাকে বেছে
       নিতে হবে । অন্যরা বড়জোর পথের সন্ধান দিতে পারে,
       সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে তার সব দায় দায়িত্ব সহ ।  
      
প্রিন্সেসঃ এক্ষেত্রে কিন্তু শিক্ষার বড় একটি ভুমিকা রয়ে গেছে ।


আমিঃ শিক্ষা যে প্রাতিষ্ঠানিক হতেই হবে তাও কিন্তু নয়, মানুষ
       প্রকৃতি থেকে, জীবন থেকে, অন্য মানুষ থেকেও শিখতে
       পারে । শিক্ষার চেয়ে যা বড় তা হল আত্মজ্ঞান ।


প্রিন্সেসঃ “আত্মজ্ঞান” মানে নিজেকে জানা, অনেক বিস্তৃত এর
         পরিসর। সারা জীবন জ্ঞানের সাধনায় লিপ্ত থেকেও তৃপ্ত
         হতে পারেননি তাইতো জগত বিখ্যাত জ্ঞান তাপশের মুখে
         শোণা যায় সেই ভুবন বিখ্যাত উক্তি “জ্ঞান সমুদ্রের তীরে
        আমি কেবল কিছু নুড়ি কুড়িয়েছি মাত্র” ।  


আমিঃ মানুষের মন বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গত শতকের সবচেয়ে
        বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী “সিগমুন্ড ফ্রয়েড” বলেছিলেন, “প্রায়
        সব মানুষের তিনটি চরিত্র থাকে ১. তার সত্যিকার চরিত্র
        এবং অনেক ক্ষেত্রেই এটি সে নিজেও জানে না ২. যা সে
        নিজেকে মনে করে এবং ৩. যা সে অন্যকে দেখিয়ে বেড়ায়”।
        এই উক্তিটি বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বিষয় সামনে চলে
        আসে - বেশীরভাগ মানুষ আসলে নিজের সত্যিকার চরিত্র
        সম্পর্কে সম্যক ভাবে জ্ঞাত নয় অর্থাৎ তার আত্মজ্ঞান অর্জন
        হয়নি তাই সে স্বভাবতই নিজের সম্পর্কে অহেতুক উচ্চ ও
       ভুল ধারনা পোষণ করে থাকে। এখানেই এর শেষ নয় সে
       নিজেকে আরও বড় করে অন্যদের কাছে উপস্থাপন করে ।


প্রিন্সেসঃ এটি তো সাধারন মানুষের ক্ষেত্রে সত্যি কিন্তু যখন তার
          অন্তর্দৃষ্টি খুলে যাবে বা আত্মজ্ঞান অর্জিত হবে তখন সে
          এই ভুল থেকে বেড়িয়ে আসবে ।


আমিঃ এরও পর্যায় আছে । মানুষের অন্তর্দৃষ্টি যত বেশী প্রসারিত
       হবে সে তত সহনশীল, উদার ও বিনয়ী হয়ে উঠবে । ঠিক
       ফলবান বৃক্ষের ফলের ভারে ঝুকে পরার মত জ্ঞানের ভারে
       সে নুইয়ে পরবে । অপর দিকে যার ভেতরতা ফাঁপা, ফাঁকা
       ঢোলের মত,শুন্য কলশীর মত সে অনেক শব্দ করে থাকে ।


প্রিন্সেসঃ এই আত্মজ্ঞান অর্জন তো আসলে অবিরত সাধনার বিষয় ।


আমিঃ এটি আসলে কিন্তু বিপুল বড় একটি বিষয় নয়, অনেক ছোট
       ছোট বিষয়ের সংমিশ্রণ, প্রতিনিয়ত মানবতার সাধনা, নিজেকে
       মূল্যায়ন, আত্ম শুদ্ধি ও আত্ম উন্নয়নের একটি চলমান প্রক্রিয়া ।
       বলা হয় “সেই সবচেয়ে বুদ্ধিমান যে নিজের সমালোচনা করতে
       পারে” কারন সমালোচনা করতে হলে আগে জানতে হবে নিজকে ।    


প্রিন্সেসঃ মূলত জন্ম থেকেই শুরু হয়ে যায় এই শিক্ষা ও আত্মউন্নয়নের
      ব্যাপারটি । জীবনের প্রতি পদে পদে আছে এই ভালো ও মন্দের
      দ্বন্দ্ব । বাইরে ও ভেতরে চলে সুচি ও অশুচির চিরন্তন লড়াই ।


আমিঃ এটাই আসলে মনুষ্যত্বের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা, প্রতিনিয়ত
       ভালো মন্দ, শুদ্ধি অশুদ্ধির অসম দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে তাকে পথ
       চলতে হয় জীবনের বন্ধুর পথ ।  


প্রিন্সেসঃ সেজন্যই তো সত্যিকার সাধক মানুষকে দেয়া হয়েছে সৃষ্টির
         সেরার তকমা ।  


বিদ্রঃ সাময়িক বিরতির পর আজ “ফেসবুক আমি এবং একজন প্রিন্সেস আদিয়াত” লেখাটির “ত্রয়োদশ পর্ব” পোস্ট দিলাম । আগে প্রথম থেকে দাদশ পর্ব পোস্ট দিয়েছিলাম । যারা ঐ কিস্তি কয়টি পড়েননি তাদের অনুরোধ করবো পড়ে নিতে নাহলে পুরোপুরি রস আস্বাদন করতে অসুবিধা হবে। লেখাটা অনেক বড় হবে । লেখার কাজ চলছে । ১০০ পৃষ্ঠা + লেখার ইচ্ছে আছে, মাল, মসলাও রেডি । আপনি ঠিকই শুনেছেন ১০০+ পৃষ্ঠার একটি কবিতা । ভবিষ্যতে হয়তো একটি কবিতা দিয়েই একটি বই হলেও হতে পারে। সেটা নির্ভর করছে আপনাদের ভালো লাগা ও সমর্থনের উপর। কয়েকটি ধাপে বাকি অংশ গুলো আসবে । এটি মূলত ফেসবুক নির্ভর নতুন ঘরানার একটি গদ্য কবিতা । প্রথাগত কবিদের অনেকের কাছেই এটাকে কবিতা ভাবতে কষ্ট হতে পারে । এটা লিখতে গিয়ে আমারও একটি নতুন ধারা বলে মনে হয়েছে । অনেকটা Dialogue বা Conversation ধরনের যার প্লাটফর্ম হচ্ছে ফেসবুক ।  প্রথম দুইটা পর্বে যে গদ্য কবিতার কথা বলেছিলাম এটা সেই পরীক্ষা মূলক গদ্য কবিতা । তাই তালমিল বা ছন্দের ভেতর নয়, কাব্যিকতা খুঁজতে বলবো ভাষার ব্যবহার, উত্তর প্রতি উত্তর ও স্বগতোক্তির ছন্দের ভেতর। কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না যেন । সাথে থাকুন। ধন্যবাদ ।


রচনাকালঃ  ১৬-১১-১৩ ইং                                                                  (চলমান)