অনতিক্রম্য অনন্ত মহাকালের ইচ্ছেধীন খেলার পুতুল আমি ফেরত
টিকেটসহ মানুষের স্বল্পদৈর্ঘ্য জীবন কিনারাহীন অনন্ত বাসনার ক্ষুধিত
চাদরে মুড়িয়ে পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে এসেছি একবেলার অতিথি হয়ে,        
অনুতাপহীন সময় ক্রমাগত ধেয়ে চলে শেষ পরিণতি অভিমুখে,      
জীবন মৃত্যুর মাঝে শুধু সেতু হয়ে ঝুলে রয় সীমাহীন অনন্ত বাসনা,
জীবন ও জগতের সব গহীন সৌন্দর্য ও বিশালতা উপভোগের বাসনা,
ফুলের ঘ্রানসুধা, প্রকৃতির অপার সবুজ, পাখির মুখরিত কলতান,
পাহাড়ের নিঃশব্দ কান্না, সাগর ও আকাশের গহীন নীলের সম্মোহন,
নারীর অনন্ত যৌবন, শিশুর অনাবিল হাসিমুখ, সুখ বৈভবের প্রাচুর্য্য  
এইসব আপাত পূরণীয় সহজাত অনন্ত বাসনা দুর্মর কাদে বুকময় ।
  
পৃথিবী নামের ছোট্ট ঝুলন্ত বলটাকে হাতের মুঠোয় অনায়াস
ভরে নিয়ে একটু ছেলেবেলার পিং পং বল খেলার নির্দোষ বাসনা,
সূর্য নামের আগুনের গোলকটাকে একবেলা বুক পকেটে ভরে
নিয়ে আলো আধারের লুকোচুরি খেলার শিশুতোষ বাসনা,
কুমারী চাঁদটাকে একরাত আমার পৌরুষের কামুক বিছানায়
কাটিয়ে তাকে পূর্ণতার সুখ দেয়ার অপাপবিদ্ধ নির্দোষ বাসনা,
রাত্রিময় ঘরে মশারীর অপরিসর অন্ধকারে তারার জোনাক
জ্বেলে রেখে অনন্ত রাত ঘুমহীন জেগে কাটানোর নির্মোহ বাসনা,  
অসীম মহাকালের শুরু থেকে শেষের বিস্তারের পরিধি জানতে,
বিপুল মহাকাশের আদি থেকে অন্তের রৈখিক দুরত্ত মাপতে,
অনন্ত মহাজীবনের উদয় থেকে অস্ত পর্যন্ত পথরেখা আঁকতে
আমার কেবলই আপাত অপূরণীয় অনন্ত বাসনা পেয়ে যায় ।    
    
জন্ম মৃত্যুর মাঝপথে ক্ষয়িষ্ণু জীবনের বেলাভুমিতে দাড়িয়ে তবু কেন
সত্য মিথ্যা, ভুল শুদ্ধ, পাপ পুণ্য, ন্যায় অন্যায়, পাওয়া না পাওয়া,
লাভ ক্ষতির হিসেব মিলানোর আগেই ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ,
প্রসারিত হাতের আপাত বক্ররৈখিক তালুতে একবেলার উপোষী জীবন
অকুতোভয়ে জমা রেখে অনন্ত বাসনা বুকে নিয়ে তবু কেন আমাকে
অপরিচিতা রহস্যময় রাতের ভয়াল মায়াময় অন্ধকার শেকলের দুর্নিবার
আত্মার সাথে মেতে উঠতে হয় মৃত্যু গন্ধময় এক অসম খেলায় ।
জীবন মৃত্যুর অনিবার্য অনৈতিক খেলাশেষে সকরুণ আলোর
অনাবিল ভোরে হয়তো নতুন করে মানুষের নশ্বর শরীর নিয়ে
আর কোনদিন দেখা হবে না, আর কোন কথাও বলা হবে না
আলোর চিরযৌবনা স্বপ্নমেদুর অনন্ত রূপসী রাজকুমারীর সাথে ।

অসহায় আমি হয়তো নিঃশেষে হেরে যাবো, আঘাতে ক্ষয়ে যাবো,
সমূলে ধ্বসে যাবো, তবু আমি পরাজয় মেনে নেব না, অনাগত
প্রজন্মকে দিয়ে যাবো সব সত্য ও সুন্দরের অবারিত উত্তরাধিকার,  
দিয়ে যাবো মানবিক দূষণ ও দৈন্যমুক্ত অনাবিল সবুজ হৃদয় ।


একদিন সব আধার ফিরে যাবে নিঃসীমে, একদিন জয় আমার,
আমাদের হবেই । সেদিন সব সুন্দর হবে, সেদিন সব সম্ভব হবে,
সে অধরা চির আকাঙ্ক্ষিত জয়ের অনন্ত বাসনাকে প্রিয় ভাবনায়
জড়িয়ে একদিন হাঁসিমুখে ঢুকে যাবো মৃত্যুনীল অমোঘ হীম গুহায় ।


বিদ্রঃ আজ প্রকাশিত হল এই আসরে আমার ১৫০তম লেখা “অনন্ত বাসনা” । এই কবিতা হল মানুষ হিসেবে আমার অনন্ত বাসনা, এখানে বাসনাগুলোকে দুটি পর্যায়ে ফেলেছি আপাত পূরণীয় ও আপাত অপূরণীয়, আপাত অপূরণীয় বাসনাগুলো এসেছে কল্পবিলাস থেকে, যা মানুষ হিসেবে আমাদের বোধগম্য ধারনায় পূরণ হওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু মানবিক ক্ষুদ্রতা অগ্রাহ্য করলে এইসবও পূরণ সম্ভব, অন্যদিকে আপাত পূরণীয় বাসনাগুলো সেইসব সহজাত বাসনা যা সুখি ও সফল মানুষের  ক্ষেত্রে পূরণ সম্ভব বলে মনে করা হয় কিন্তু বাস্তবতা হল মানবীয় ক্ষুদ্রতার কারনে নশ্বর মানুষ এই আপাত পূরণীয় বাসনাগুলোও পূর্ণ অর্থে পূরণে অক্ষম, এই খানেই এই লেখার ভাবনার অপ্রকাশিত জায়গাটি সুপ্ত আছে । তাই এই কবিতার নাম "অনন্ত বাসনা" । পড়ার ও কেমন লাগলো জানানোর আমন্ত্রন রইল সবার কাছে।