- ও আচ্ছা, সত্যিই তো তাহলে বিরাট অসুবিধা, তা কি বলেছ
তোমার মাকে এই ব্যাপারে ...... ?

- সেই একই পুরান মিথ্যা কথা, নতুন কারখানার মালিক অনেক
কড়া, ফোনে কথা কইলে কাজের ক্ষতি হবে তাই ঐ মালিক ফোন
রাখতে দেয় না । সত্যি সত্যি এরকম কিছু কারখানা আছে বইল্যা
শুনছি, আমাগো গ্রামের কেউ কেউও কাজ করে ঐ রকম কয়েকটি
কারখানায় তাই গ্রামের অন্য মানুষের মুখ থাইক্যা মায়ও এই রকম
কারখানার কথা আগেও শুনেছে, তাই এ নিয়ে মায় আর কোন কথা
বা কোন রকম সন্দেহ করে নাই ...।

- সেত, দিনের বেলা, রাতের কথা কি বলেছ ? রাতে তো আর কোন
কারখানা খোলা থাকে না ?

- কইছি অনেক কাজ, কাজ করতে করতে রোজই রাইত ১২ টা
বাইজা যায়, ঘরে যাইয়া ডাইল চাইল ফুটাইয়া খাইতে হয়, তাই
মোবাইলে কথা কওনের সময় পাই না । আমিই সময় বাইর কইরা
তোমারে ফোন দিমু, মায় গ্রামের অশিক্ষিত বুইড়া মানুষ, অতশত
কি আর বোঝে আপনার লাহান, মাসে কয়েক বার আমার সুবিধামত
সময়ে ফোন মাস গেলে টাকা যায় ঠিক সময়মত তাই মায়ও আর
অতকিছু জানতে চায় না ... ।    

- ভবিষ্যৎ নিয়ে কি চিন্তা ভাবনা তোমার, সারা জীবন তো আর
এই লাইনের চলবে না । কি করবে সামনে ?  
  
- আমার আবার ভবিষ্যৎ, আপনি এতো কথা বলতাছেন ক্যান
একটু কন তো দেহি কি উদ্দেশ্য আপনার , আপনি কি আমারে
বিয়ে করবেন নাকি... হি হি হি ...

- এতো অস্বাভাবিক চাওয়া নয়, তোমারও তো একটি সংসার,
স্বামী, সন্তান পাবার অধিকার ছিল । কি বল, ছিল না ?

- কথা এড়াইয়া যাইতেছেন ক্যান, আমি একটু মজা করলাম,
অত লোভ দেখাইয়েন না তো, যা দিতে পারবেন না তা নিয়া
শুধু শুধু কথা বাড়াইয়েন না তো ।  

- এই লাইনে আসার আগে তোমার জীবনে কখনো কি প্রেম
আসেনি, কখনো আসেনি কোন স্বপ্নের পুরুষ ?  

- আমার নাম শুক্কুরী হইলে কি হইব, এককালে আমি কিন্তুক
অনেক পুরুষ মানুষের মাথা খারাপ কইরা দেওনের মতন সুন্দর
আছিলাম এককালে, পুরুষ মানুষেরা আমার পেছনে ছুটতো পোকা
মাকড় যেমন আগুনের দিকে ছুটে তেমন কইরা, দুই একজনরে
যে মনে ধরে নাই তাও না, কিন্তু বাপ মারা যাওনের পর অভাবের
জ্বালায়, মানুষের ধোঁকায় পইড়া সবকিছু জ্বইলা শেষ হইয়া গেল ...।

- এখনো তো তুমি বেশ সুন্দর, তোমাদের এই লাইনের মেয়েদের
নাকি একজন করে বাঁধা বাবু থাকে, মানে নিয়মিত খদ্দের যে শুধু
বা বেশীর ভাগ সময় তার বাঁধা মেয়েমানুষের কাছেই যায়, তোমার
আছে নাকি তেমন কেউ ............................................. ?

- হ্যা, কাউর কাউর আছে ঐরকম, বেশীর ভাগ বুইড়া তয় মালদার
পার্টি, সুন্দর কচি মাইয়্যা দেইখ্যা বাঁধা রাখে, কিন্তু আমার কাছে সব
পুরুষ একই, ঐ ভণ্ডামি করতে ইচ্ছা করে নাই, দুই একজন কইছিল
কিন্তু আমার ঐসবে পোষাবে না তাই কথা বাড়াই নাই, বাড়ীতে
বউ বাচ্চা রাইখ্যা এইখানে আইসা যতসব ন্যাকামি, আমি অহনো
অনেক সুন্দর, সত্যি কইতাছেন আপনি ?  


- একসময় আসলেই তুমি অনেক সুন্দরী ছিলে এখনো তো বোঝা
যায় দেখে । তোমার পেছনে ছুটলে তাই পুরুষদের কিন্তু তেমন
দোষ দেয়া যাবে না ...।  

বিদ্রঃ আজ প্রকাশিত হল বিশ পর্বের “নিশিকন্যা” সিরিজের ষষ্ঠদশ পর্ব । আমার ভাবনা যাকে এই লেখার কেন্দ্রীয় চরিত্র আমি হিসেবে দেখা যাবে এবং একজন কল্পিত অন্ধকারের মেয়ে যাকে নিশিকন্যা বলে জানে সমাজ, ভেতর তার পেশাগত কিছু বিষয়ের কথোপকথন বা dialogue ঘরানার এই লেখার মাধ্যমে কিছু সত্য উদঘাটনে ব্রতী হয়েছি । আমাকে বেশ কয়েকটা এন জি ও র সাথে বেশ কিছু যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্বাসন মুলক প্রকল্পে কাজ করতে হয়েছে, সেই সুবাদে এদের জীবনধারা খুব কাছ থেকে সরাসরি দেখার সুযোগ হয়েছে, সে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছে এই লেখা প্রথমে এই এই সিরিজটি আমার কাছে লেগেছে গল্প ও কবিতার মাঝা মাঝি, ভাষা ও গঠনে আছে গল্পের ছোঁয়া, পরিবেশনায় আছে কবিতার আমেজ, আমার মুল ইচ্ছের যে জায়গাটি ছিল তা হল সাধারণত কথোপকথন যেমন হয় ঠিক তেমন অবিকৃত ভাবেই এই তাকে তুলে আনা, অনেকে হয়তো এই লেখায় কাব্যিক ঢং প্রত্যাশা করতে পারে কিন্তু আমার মনে হয়েছে ওরকম কিছু আরোপ করলে লেখা কৃত্রিম হয়ে যাবে, কাব্যিকতা দিতে গিয়ে তার বক্তব্যের সাবলীলতা হারাবে, তাই ঐ পথে হাটি নাই । যারা আগের পর্ব গুলো পড়েননি তাদের ক্ষেত্রে বলব, ওগুলো পড়ে নিলে সিরিজটি বুঝতে সুবিধা হবে । এই সিরিজের পাশাপাশি থাকছে সিরিজ “লোকাল সার্ভিস” । পড়ার আমন্ত্রণ রইল ।