তাত্ত্বিকভাবে স্বপ্নকে অলীক বলে মনে করা হলেও স্বপ্ন আসলে মানুষের জীবনের এক অবিছেদ্য অংশ । মানুষের বাস্তব জীবনের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, পছন্দ, অপছন্দ ইত্যাদির সুস্পষ্ট প্রভাব ও প্রতিফলন দেখা যায় স্বপ্নের উপর আবার স্বপ্ন লব্ধ অভিজ্ঞতা দ্বারাও মানুষের জ্ঞান ও মানসিকতা প্রভাবিত ও পরিণত হয় ।
লাইভসায়েন্স এর প্রতিবেদন অনুযায়ী স্বপ্নের জগতের সব উৎকণ্ঠা, ভয় আর আকাঙ্খার পেছনে রয়েছে জীবনের প্রতিদিনের ভালো-মন্দ অভিজ্ঞতা। গবেষকদের মতে, দৈনন্দিন জীবনের ভাবনাগুলোর সঙ্গে ঘুমের জগতের ভাবনাগুলোর রয়েছে অনেক মিল।
নিউ ইয়র্ক একাডেমি অফ সায়েন্স আয়োজিত ‘দি স্ট্রেঞ্জ সায়েন্স অফ স্লিপ অ্যান্ড ড্রিম’ শীর্ষক আলোচনায় স্বপ্ন আর বাস্তব জগতের ভাবনাগুলোর এই মিল সম্পর্কে বলেছেন এমআইটির নিউরোসায়েন্টিস্ট ম্যাথিউ উইলসন।
একজন মানুষের স্মৃতি, শেখার ক্ষমতা আর স্বপ্নের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করছেন উইলসন। উইলসনের মতে, স্বপ্ন একজন মানুষের মস্তিষ্ককে তার বাস্তব জগতের অভিজ্ঞতাগুলো বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে। জেগে থাকা অবস্থায় মস্তিষ্ক যে নিউরোলজিকাল মেশিনারি ব্যবহার করে, একজন মানুষের অতীত অভিজ্ঞতাগুলো বিশ্লেষণ করে ঠিক একই নিউরোলজিকাল মেশিনারি ব্যবহার করে স্বপ্নের মধ্যেও। উইলসন আরও বলেন, ‘একজন মানুষের স্মৃতি হচ্ছে তার অন্তরের প্রতিচ্ছবি।
উইলসন এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের স্লিপ সায়েন্টিস্ট এরিক ওয়েমসলির গবেষণার মূল বিষয় হচ্ছে স্মৃতি ও স্বপ্নের সম্পর্ক। ওয়েমসলির গবেষণা অনুযায়ী ঘুমের মধ্যেও স্বপ্নের মাধ্যমে শেখে মানুষের মস্তিষ্ক। এজন্য কয়েকজন গেইমারের ওপর পরীক্ষা চালান ওয়েমসলি। তাদের একটি গোলকধাঁধার ভিডিও গেইম খেলতে দেন তিনি। এরপর ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে গেইমটি যারা দেখেন, ঘুম থেকে ওঠার পর অন্য গেইমারদের তুলনায় অনেক ভালো পারফরর্ম করেন তারা। স্কিয়িং বিষয়ক আরেকটি গেইম দিয়ে প্রায় একই রকম ফলাফল পান ওয়েমসলি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বপ্নের মাধ্যমে গেইমগুলোর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছিলো গেইমারদের মস্তিষ্ক। অনেকটা যেন ঘুমের ঘোরেই ধাঁধার উত্তর খুঁজছিলো মস্তিষ্ক। নিজের গবেষণাতেও একই রকমের ফলাফল পেয়েছেন উইলসন। উইলসনের মতে, আমাদের স্মৃতিতে থাকা বিষয়গুলোর অনেকগুলোই আমাদের মনে গেঁথে যায় স্বপ্নের কারণেই।


তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট ।