১
ডং, অদ্রি, পাহাড়
হরেক নামের বাহার
আকাশ ছুঁয়ে থাকি
স্বর্গ ছুঁয়ে ডাকি
২
অনেক শীতে.থেকেছিলাম দখিন পুবের বংগ
পাহাড়টাকে ছুঁতেই দেখি দু:খী সারা অংগ;
কোথায় পেলে অমন বিষাদ, কে দেয় তোমায় দুখ?
'মানুষ ছাড়া কে আর বলো? পাহাড় কেটেই সুখ!'
৩
ও ভাই, আদা চাই? না কলা? এই নাও
আমার চাই সর্ষে নুন––একটু যদি দাও!
সেই কৈপলং থেকে হেঁটে আসি হাটের বাজার রোয়াং
গয়না গায়ে, নাচনে পায়ে––ভাই আমরা খিয়াং
৪
হিম বুক ভেজা মেঘে
চিম্বুক থাকে জেগে
মেঘকে ডেকে বলো
চিম্বুক যাবো, চলো!
৫
কর্ণফুলী, কর্ণফুলী, যাচ্ছ কোথায় ধেয়ে?
আমায় নেবে? আমি বিলাইছড়ির মেয়ে!
চিনাল খাবে? আমজরি? বাঁশে পাতা দই?
আমার পাড়া ঘুরতে যাবে? বাইতে হবে মই!
৬
বলি, নাম হয়েছে বেশ
‘সবুজ মরু’র দেশ!
অবুঝ মানুষ, হায়
বৃক্ষ কেটেই যায়!
৭
দোলন কাঠের ঝুলন সেতু, উচান পাহাড় পাড়ি
দা আঁকড়ি, টুকরি পিঠে, চলছি সারি সারি
চাকমা মোরা, মারমা মোরা, নীল পাহাড়ের মেয়ে
কাঠ কাটুনি, ফল কুড়ানি––খাটিয়ে সবচেয়ে!
৮
চূড়ো খোপায় মুরং নারী
লাঠি ঠুকেই পাহাড় পাড়ি
কান ভরা দুল, গলায় হার
বেশটি রঙিন––চমৎকার!
৯
বান্দরবনের মেহমান না ভাই
আমি পাহাড়বাসী বাঙালি
সাংগুর পাড়ে বাদাম ফলাই
আমার নাম আলি
১০
তাঁতের থান পরে
পাহাড়ি গান ধরে
লুসাই ছেলে হাঁটে
যাবে রুমার ঘাটে
১১
এক পাড়াতে খিয়াং থাকি, এক সঙ্গেই ব্যোম
দুই গোত্রই মাতৃপ্রধান, মেয়েরা যাই জুম
ছেলেরা যাই মাছ শিকারে, কাটতে বাঁশ আর ছন
একসঙ্গে স্কুল-গির্জা, ঐক্য মোদের ধন
১২
জুমের পর জুম
আনারসের ধুম
পানির মূল্যে বেচে
আনারস তাই পচে!
১৩
মেঘমেদুরী গাঁয়ের ছায়ে মেঘবালিকার দল
হ্রস্বদেহী, লাস্যময়ী, হাস্য অনর্গল
কাজল চোখে স্বপ্ন ঝরে, দীঘল সজল কেশ
উজল বরণ সূতোয় বোনা হৃদয় হরণ বেশ
১৪
নূপুর পায়ে ছুঁয়ে দিলে দুপুর রোদের গিরি
লাল মাটিতে মুখ রাঙা তার, বুক চিরে তার ঝিরি
সূর্যিমামা ডাকেন যদি তিয়াস-জাগান ছলে
ঝিরির অমন শুদ্ধ জলেই পিয়াস মেটান চলে
১৫
শীতের আঁচে ভিত-কাঁপানো সবুজ পাহাড় পর
বাঁশ বুনানো ছন ছাওয়ানো দ্বিতল জুমের ঘর
পাহাড় দেশের কাহার যেন ভীষণ যত্নে গড়া
পাহাড়ি কই? জুম-ই বা কই? অযত্নে আজ পড়া!
লিখার সময়কাল: ২০১০-১৩
প্রথম প্রকাশ: বাংলা-কবিতা ডট কম, এপ্রিল ২০২৫