অনেক গল্প বলবার আছে আমার,
তবে সবার আগে তোমার এক অবুঝ খোকার গল্প বলতে হবে আমাকে ৷
উঠনে পৌছাবার আগেই তোমাকে মা, মাগো, ওমা বলে
যে ছেলেটি মাত করতো সারা বাড়ি,
আধবুড়ো বয়সেও শিশু কিশোরের মত তোমার পাজড়ে শুয়ে মজার মজার গল্প শুনতে চাইত,
সে আর তোমাকে মা বলে ডাকে না,
রাজা রানি কিংবা রাক্ষসের গল্পো ও শুনতে চাই না।
১৯৪৮ রেসকোস এবং কাজন হলে অনুষ্ঠিত প্রথম সমাবতন অনুষ্ঠানে,
যখন হায়েনার মত ভয়াল গজনে  জিন্না বলে উঠেছিলো
State Language Of Pakistan is going to be Urdu & no other language.
Urdu & Urdu shall be the state language of Pakistan.
তখন তোমার খোকার চোখ জুড়ে নেমে এসেছিলো একটি উত্থানের প্রাক-মুহূর্তের স্তব্ধতা।
সেই  স্তব্ধতাই সেদিন অন্ধকারের মতো কালো হতে হতে,
ভয়াল গর্জনে ফেটে পড়েছিলো সমুদ্রের মতো।
দিন যায়, মাস যায়, তোমার খোকা বাড়ি আসে না,
তুমি চিঠি পাঠিয়েছিলে খোকা তুই কবে আসবি?
হয়ত খোকা তোমাকে বলেছিলো,
মা ওরা আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চাই,
ওরা তোমাকে মা বলে ডাকতে দেবে না,
তোমার কোলে বসে গল্প শুনতে দেবে না।
হয়ত সেদিন খোকা তোমাকে কথা দিয়েছিলো,
মা তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে তবেই ফিরব,
মুখের ভাষা ফিরিয়ে দিয়ে তোমার মুখে শিউলি ফুলের মত হাসি ফোঁটাব।
এজন্য খোকা মিছিল মিটিং এমন কি তোমার জন্য জীবন বাজি রাখাতে ও পিছু হাটলো না,
২১ শে ফেব্রুায়ারি ১৯৫২ জারি করেছিলো ১৪৪ ধারা,
নিশ্চিত মিত্যু যেনেও তোমার মুখের ভাষা ফিরিয়ে দেবার জন্য,
১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে খোকা সেদিন তোমার জন্য কথার ঝুড়ি আনতে গিয়েছিলো।
হ্যা, আমি শুনেছিলাম তোমার খোকা সমাবেত কণ্ঠে সেদিন চিৎকার করে বলেছিলো
রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, মাতৃভাষা বাংলা চাই,
মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়া চলবেনা চলবেনা, , ,
হঠাৎ দুম দুম দুম নির্বিচারে মদদপুষ্ট পুলিশ খোকার উপর গুলি বর্ষণ শুরু করলো,
তোমার  খোকার  বুক প্রসারিত হলো,
অভ্যুত্থানের গুলির ভেদ্যতা ও হাজার বুকের অপচয় বন্ধ করার জন্য,
মুহূর্তের মধ্যে সেদিন স্টেনগানের গুলি তোমার খোকার  বক্ষ বিদীর্ণ করে  সেলাই করে দিয়েছিলো,
হাজার হাজার কাকের ঝাঁক কা কা করতে করতে পাখা মেলে উড়ে গিয়েছিলো  উর্ধ্ব গগণে।
খোকা মুখ লুটিয়ে মাটিতে পড়তেই,
তাজা রক্তের ফোয়ারায় ঢাকার রাজপথে সেদিন নদী বেইতে শুরু করলো।
চারিদিকে বাজতে শুরু করলো  বুটের আওয়াজ শুধু বুটের আওয়াজ
মদদপুষ্ট পুলিশের বুটের খটখটে তলা সেদিন,
বড়ই নির্দয় ভাবে মাড়িয়ে গিয়েছিলো খোকার পবিত্র রক্ত।
সর্ণ খোচিত কারুকার্যময় কফিনে নয়,
উচ্চ শব্দের সাইরেন বাজিয়ে সর্তক পাহারা নয়,
সামরিক ছালাম নয়, নয় কোন বিদায়ী প্রটোকল।
সেদিন দাগি আসামিদের মত নিতান্ত অবহেলাই খোকাকে তোমার কোলে ফিরিয়ে না দিয়ে,
মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো আজিমপুর কবরস্থানে।
লালচে রঙের উৎকট গন্ধ যুক্ত ৫৭০ মাকা সাবান দিয়ে,
তোমার খোকার শরির থেকে থিকথিকে রক্তের সাথে ধুলো অশ্রু আর দীঘশ্বাস ধুয়েফেলে
খোকাকে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘোলা জলের মত থান কাফোনে, তারপর কবর।
সেদিন খোকা তোমার মুখের ভাষা ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলো ঠিকিই
কিন্তু মা মা বলে চিৎকার করে তোমাকে জড়িয়ে গল্প শোনা হয়ে ওঠেনি না খোকার,
জীবন দশাই জাকে কিছুই দিতে পারলো না এদেশ,
সেই কিনা জীবন দিয়ে তোমার মুখের ভাষা ফিরিয়ে দিয়ে
তোমাকে করে গেল গর্বিত জননী হে আমার বাংলাদেশ