নদীর ধারে শিকরের টানে বেঁচে থাকা অন্তিম ক্ষণের গাছে এক সুরেলা পাখি শিষ দেয়


কিছু নিরব মূখর বন্ধু সেখানে ছুটে গিয়ে দাঁড়াই


পুরনো নতুন কত সন্ধি সংলাপ জুড়ে যাই


যেন নব নব জীবনের জালে ঢাকা পড়া দূরস্মৃত কাহিনী সকল


দিনগুলো সেই গাছের পাতাটির মতো শুকিয়ে গেছে  


একটা পিঁপড়া সৈন্যছাউনি থেকে পালিয়ে প্রবল হাওয়ায় এসেছিল পাখির গান শুনতে


শুনতে পেলো বিধ্বস্ত হাওয়ায় পতনের শব্দ


গাছের পাতা খসার নিষ্ঠুর নৈঃশব্দ্য


পাতাটি গাছ থেকে প্রবল হাওয়ায় ঝড়ে পড়লো অনন্তে


নীচে ছায়া বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে


অথচ কোনকিছুই সম্পূর্ণ নয়


ভাবতে ভয় লাগে


এমনি কুহু ডাক শুনতে শুনতে আমিও একদিন ঝড়া পাতার মতো ঝড়ে যাবো


একই পথে তুমি ও তোমরা হেঁটে যাবে


তারপর তোমাদের বংশধর


কারণ দিন শেষে সামান্যতম বিশ্বাসের আঁচ পেলেও একটা নিঃশ্বাস অসমাপ্ত পথে পরিচালিত হয়  


দীর্ঘ নদীটি ডুবে যাচ্ছে সমুদ্রের বিলীন শাখায়


বসে পারে খুঁজি নিজের মাঝে, পরানের নিকটে কে থাকে?


বুঝি আমি ভীরের মাঝে একা নই নিজের মাঝে একা


নীরবে কবিতার কাছে বার বার সরে আসা


গোধুলির নান্দনিক আলো গায়ে মেখে নিজেকে বিশ্লেষণ করা


প্রকৃতির সাথে দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলা


প্রকৃতির মগ্নতাকে ভেদ করে অশান্ত হয়ে বাঁচা


যেন শরাহত পাখির মতো অসহায় জীবননামা


শুন্যতার বুকে দু’চোখের অশ্রু অনবরত ঝরা


তখন এক বিস্ময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা


মনে হয় এ পৃথিবী মরীচিকা, সবকিছু জলের উপরে লেখা


সবই সবাই দেখে আর অনুভব করে কিন্তু কেউ মুঠোয় ধরতে পারে না



ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে রাত, সরু হয়ে ছেলেবেলার মতো দুলে দুলে


স্পিকারের হালকা- গারো সবুজ আলো টিপটিপ করে জোনাকির মতো জ্বলে


গানের আকাঙ্খা, দাবিদার নিরবমুখর বন্ধুরা


দাবি করলো গানের সুর যেন ঢেউয়ের মতো হয়


কথা যেন বুকেতে মশাল জ্বালায়, প্রদীপ নয়


কারণ প্রদীপ জ্বলে ভক্তের ভক্তিতে


মশাল জ্বলে মিছিলের আহ্বানে, প্রতিবাদের আগুনে


সকলে ছুটে যেতে চাই আপন মুক্তির মহাসড়কে


ধ্যানকে অলস, গতিকে প্রভু ভেবে


আমি ভাবি এ আলো যদি জাহাজের পথনির্দেশক আলোকবর্তিকা ন্যায় হতো


তাহলে আমাদের মনের আলো জাহাজের আলো হয়ে


চাঁদ, তারা এবং উড্ডীয়মান বিমানের আলোর সাথে  সরলরৈখিক সন্ধিপথ তৈরি করতো


তখন জলপথ আকাশপথ মহাকাশ পথ একত্রে একটি আলোর পথ, নীল আকাশ ও নীল সমুদ্রের  মিলন দিগন্তে


তবে এ পথ কি আলোকিত আপন মুক্তির মহাসড়ক?



আমার হৃদয়ের শুন্যস্থানে প্রশ্নবাদক


ভাবনায় তলিয়ে যেতে থাকি কেবল


যেন আমি নদী পারে বসে নই


নিঃশব্দে দগ্ধ সময়ের শ্যাওলাপড়া অতীত অন্ধকার ঘরে


ঘুমন্ত নোটপ্যাডের পাশে অন্ধ আড়ষ্ট আঙুল
বুনছে স্বপ্নের তাঁত


খুঁজে চলছি আলোর সূত্রপাত


দরজা জানালা বন্ধ, আমি এবং আমার জগৎ চার দেয়ালে আবদ্ধ


শুধু একদল পিঁপড়া দেয়ালে হেটে হেটে বেরায় সরলরৈখিক সন্ধিপথে


হৃদয়ের চোখে দেখি যতদূর যায় দৃষ্টি


ঘরেতে দেয়াল, নদীর পারে আকাশ


যেন আকাশ একটা দেয়াল


আর আমি অ্যাকুরিয়ামের মাছ


বন্ধু'র চোখকে আয়না ভেবে জিজ্ঞেস করি


ঘর কিংবা বাহির দুটোতে হওয়ার কথা দুটো রীতি


তবে আমার হৃদয়ের শুন্যস্থানে কেন প্রশ্নবাদক

আমি কি এখানেও আবদ্ধ?


মাথার উপর দিয়ে একটা গাঙ্গচিল তখন মেঘের গতিতে দিগন্তের দিকে অভয়ারণ্যে উড়ে যায়



পরিযায়ীস্বভাব মানুষ চলে যায় কত কত অজুহাতে


যদিও চলে যাওয়া বিস্ময়কর নয়, বিস্ময়কর থেকে যাওয়া


নদী থেকে সরে আসা অরণ্যের দিকে


অন্ধকারের মতো এক শূন্যতা দিয়ে শুরু, ঢালু উপত্যকার পথ বেয়ে


মনের সুতোয় সকালকে সন্ধ্যার সঙ্গে গেঁথে


সবুজ ছায়া ঘেরা লাবণ্যে নিবিড় অরণ্যে


একটা হরিণ ছুটে কচি সবুজ পাতা মুখে নিয়ে
আলো-অন্ধকার আচ্ছাদিত বনে


শান্তি আসে, প্রকৃতি হাসে


আমি চুপ হয়ে থাকি-


কিছু সময় অরণ্যের কাছে চেয়ে নেই প্রতিশোধকে করুণায় বদলে ফেলার জন্যে


কথা বলে আমার প্রিয় পঙ্ক্তির কবিতা


তবে কোনো কবিতাতেই আমার ভালো থাকাটির দেখা হচ্ছে না আপাততঃ


অন্ধকার পথে হেটে চলি শহরের দিকে


ভাঙাচুরা মনের ক্ষতে প্রলেপ দিতে দিতে


কিছু দূরে গিয়ে ঘোলাটে চোখে পরে অনিচ্ছুক আলোর ফোয়ারা


শহুরে কোলাহল! শহুরে ব্যস্ততা! শহুরে সভ্যতা!


নৈঃশব্দ্য বুনতে বুনতে আসা যাত্রা শেষে নিঠুর শান্তির হয় শাস্তি


একান্ত ব্যক্তিগত প্রজ্বালনে দগ্ধ শপথ ভুলে পেয়ে যাই বহেমিয়ান নগ্ন ডানা


ডানায় লিখে দূরবর্তী ঠিকানা কোলাহল ছেড়ে ছুড়ে


যান্ত্রিক শহরের হৃৎপিণ্ডজুড়ে ব্যস্ততার নাগরিক কথন উড়িয়ে দিয়ে


ফিরে যায় সামুদ্রিক উচ্ছাসের রঙ মেখে


আরেকবার নদীর পারে নতজানু ছায়ার কাছে


ওই তো পড়ে আছে শিশুতোষ মুখ নদীর জলে


দু'হাতে তুলে নেই বিষন্ন ঢেউ


যেন এ ধরনী মায়ায় ছড়িয়ে রাখা প্রফুল্লকানন।


উৎসর্গ - সীতাকুণ্ড শহর 🌺