১
নৈঃশব্দ্যের খোঁজে এসেছি পাহাড়ের মাঝে
চুড়াই উঠে শহর দেখে মনে আমার চোখ হারানোর ভয়
পাহাড়ের সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় হাওয়ারাও পিছু পিছু আসে
অনুভবে বুঝি হৃদস্পন্দনের গতি ভীষণ দ্রুত গতিতে চলে
সঙ্গে চলে সার্থক তীর্থে লোভে কত কত প্রান
একটা উনিশ বছরের ফটোগ্রাফার যান্ত্রিক চোখে স্থির কিঞ্চিৎ ধাবমান
অন্যদিকে একটা বৃদ্ধ প্রতিটি সিঁড়ির শুরুতে একটু দাঁড়াই দীর্ঘ শ্বাসের জন্য
বৃদ্ধের হাত পা বুড়িয়ে যাচ্ছে
সে জানে
ত্রিশ বছর বয়সের পরেই সকলে পাপ করা শুরু করে
নীচু হয়ে যায়
অথচ নীচু হতে পারা মাঝে মাঝে জীবনের থেকে বড়
২
হাওয়ার তালে পাতার ফাঁকে সূর্যের কিরন যখন ঘুরি ঘুরি দুটি প্রজাপতির উপরে পরে
তখন ফেরার পথে নেমে আসছে এক পাহাড়ি মেয়ে, মহুয়া কন্যা
উঁচু পাহাড়ের টিলায় হবে তাঁর বাস, শরীরে জড়ানো রঙিন শাড়ি,শেফালী মালা পরেছে গলায়
চোখ যেন তাঁর প্রখর সূর্যের বীরভূমে তালপাতার ছায়ার মতো
আর মুখটি তাঁর মেঘের কাহিনী, নীল আকাশে সাদা-কালো মেঘের লেখা
মাথায় হয়তো সদ্য ফুটে ওঠা শেফালী ফুলেল চিন্তা
ফুলের সাদায় বসে থাকা প্রজাপতি উরে যাওয়া
একে অন্যের ছায়া থেকে সরে যাওয়া
তাঁর চলে যাওয়া আমার চোখের সামনে
কিংবা
পদস্খলন
সিঁড়ির বাঁকে
তাঁর ঘুরে তাকানো
৩
মধ্যবিত্ত মনোকামনা হারিয়ে হেঁটেছি আমি এ
পাহাড়ের বুকে সুদীর্ঘ পথ
নিজেকে ভুলেছি
জটিলতা শিকারে দৌড়ে চলেছি
তাল মিলাতে ক্লান্তির ছাপ
দেখি বৈদ্যুতিক তারে দোল খাওয়া বিহঙ্গ দম্পতির মতো সুখ-দুলছে একটা দোলনা হয়ে
একটি গাছের ছায়ায়
একটু স্বস্তি লোভে বসি সে দোলনায়
হাওয়া ভেসে ভেসে শীতল করে গাঁ
আমার ভিতরে গাছের মতো পাতা নড়ে ওঠে
তবে এভাবে কোথাও ভরসা করে বসলে যে পৃথিবী ভেবে বসে অসহায়
আর অকালে মৃত্যু হয় কত কত দৃঢ় পিঠের
৪
পথ এগোতেই খাড়া পাহাড়ের নিস্তব্ধতায় শুনি মেঘের গর্জন দেখি গগনে কালো মেঘ
মেঘেরা ঘনো হয়ে ঘনত্বে ঝড়ালো এ বৃষ্টিতে ছড়ানো আবেগ
দেখি চারপাশে কত বাঁকা সবুজ কচু পাতা যেন এক একটি ছাতা
তবু হাতে না নিয়ে সে পাতা ভিজি আমি একা
ছুটি গিরিপথে ঘরে ফেরার অভিযানে
পাহাড় গড়িয়ে গড়িয়ে নামে জল, চলাচলে ছলাৎ ছল
পাহাড় থেকে নেমে মনে জমে পিছুটান
চোখের সামনে তখন আমার মতো একা একটি নদী বহমান
বিনা শব্দে খুবলে খায় মুগ্ধমতি ঘিলু এ নদীতে বান নেই এ নদীও ঢালু
এমনি গরানে চলে বোধের মতন
এমনি নৈঃশব্দ্য যেন অতলান্তে ডুব দেওয়া বালির মতন
উৎসর্গ- সীতাকুণ্ড শহর 🌺