নদী ব’য়ে যায়, সবুজ শস্যের বুকে, বাঙলার মাটিতে আমার স্বপ্নের গভীরে।
জলের চ্ছল চ্ছল শব্দে পলিমাটি ভেদ ক’রে নীরবে ব’য়ে যায় স্মৃতির আঙিনায়,  
ঢেউয়ের বুকে আমি ভেসে যাই, হারিয়ে যায় তার গতিপ্রগতিতে গাঢ় অন্ধকারে;
জল ঢেউ আর আমার প্রবাহিত নৌকা ছুটে যায় গলিত স্বপ্নের নিজস্ব ঠিকানায়,
আষাঢ়ের বৃষ্টির ফোঁটায় ভ’রে যায় আমার নৌকার মসৃণ গলুই, শান্ত অপরূপ
আলোয় কেঁপে উঠে শরীর, মায়াবী নদীর সোনালী জলে স্তব্ধতার সুর বাজে
শ্রাবণধারায়, প্রাণের সব সুর খেলা ক’রে, গভীর রুপালী জ্যোতির্ময় আলোয়,
মধুমতীর নিবিড় বাতাস আমাকে নিঃসঙ্গ ক’রে তোলে, শিশিরের জলে লুপ্ত
হ’য়ে যায় আমার সমস্ত স্বপ্ন, আঁখিতারায় গ’লে গ’লে ঝ’রে যায় সবুজ পল্লব,
নিসর্গের শাদা হিমে। শূন্যতার বুকে উদ্ভাসিত আলোয় বিহ্বল ক’রে ঝলমলে
নিথর স্তব্ধতার সুর। তোমার খরস্রোতা বুক দিয়ে ভেসে যায় বজরা, পানসি,
টাবুরিয়া, ডিঙ্গি সহ আরো কতো না নৌকা। বাঁকে-বাঁকে খেলা ক’রে জলের
প্রবাহিতধারা। গভীর রুপালী নদী, বেঁচে থাকে আঁখিকোণে শিশিরের ছোঁয়ায়,
সকাল-সন্ধ্যায় ফিরে যাই রাশি রাশি স্বপ্ন নিয়ে উজ্জ্বল আভায়, ঢেউয়ের পর
ঢেউ এসে আমাকে নিয়ে যায় গভীর শূন্যতায়, শিহরণ জাগায় আমার নিথর
দেহে। তোমার শোভা-সৌন্দর্যময় রূপ ব’য়ে যায় কিংবদন্তী পুরুষের রক্তে,
হৃদপিণ্ডে আর শব্দহীন স্মৃতিতে। নক্ষত্রের হারানো শিশিরের ফোঁটায় তোমার
আকাশে তারা বাঁধে অম্লান সুর। নিঃশব্দে হৃদয়ের গভীরে আলো-আঁধারে
মিশে যায় মায়াবী নদী। হারানো স্নিগ্ধময় আলোয় সব নদী মিশে যায় চন্দ্র-
মল্লিকার বনে। তোমার জল আর বাতাস মিশে থাকে রক্তিম নিস্তব্ধাতায়,
বহমান ধারার শব্দের সুর আমার হৃদয়ের উজ্জ্বল আভা; প্রজ্জলিত মৌনে
ঢেউয়ের বুকে নিঃশব্দে ছুটে চলে আমার আঁখিতারায় নিঃসঙ্গ মায়াবী নদী।