ছিপখান তিন দাঁড়. তিনজন মাল্লা,     চৌপর দিনভর, পাড়ি দূরপাল্লা।
সারাদিন দরিয়ার, জলরোল হল্লা,     কালো জলে দাঁড় বিঁধে, পাড়ি তিন মাল্লার !


ঝকঝক লহরীর, বকবক শোন গো,     কথার বিরাম কই, কথাজাল বোন গো ।
জল কত, কত জল ? তিন দাঁড় মাপছে,   পৈঠাতে জলছাপ, দাঁতে দাঁত চাপছে !


হুম হুম নেই ঘুম, কালঘাম ছুটছে,            বৈঠার ঘায়ে ফেনা, পায়ে মাথা কুটছে !
মধুপুর, বহুদূর, জানে তিন মাল্লা,            চৌপর, রাতভর, দিতে হবে পাল্লা।


মাল্লার হুমহুম গান কেউ শুনছে ?       ঝপাঝপ, জলে কোপ, মুহূর্ত গুনছে !
তোলে ঢেউ, মনে কেউ, কাঁপে দিল দরিয়া     মায়াময় বনতলে, কতো ফুল ঝরিয়া !


বন মনজঙ্গল, ঝুপ ঝুপ হয় পার,       নিঃঝুম চরাচর, শুনশান পারাবার।
শোনে সুর, সুমধুর, অতিদুর পাল্লা,        জলতারে, তান তোলে, তিনজন মাল্লা।


মিশকালো দরিয়ায়, কালো জল, কালো ছল !      স্বপ্নের দরিয়ার পাড় নেই, নেই তল !
সুগভীর জলতলে, কার ছবি, খোঁজে সে,    ধূপছায়া, কার কায়া, মায়া নিশি দিবসে।
সারারাত, বারি পাত, অবিরল, ঝরে জল,    চুপ চুপ নিশ্চুপ, নিষ্ফল আঁখি জল।
জ্বলে চোখ, জলে চোখ, জ্বলে জল, জল কার।    যদি হবে, তাই হোক, ডুবজল মাল্লার।


ফুলে ওঠে পাটা বুক, ধক ধক কলজে,    ঘামে ভেজা হাত তোলে, জলে হিল্লোল যে,
তিনজন মাল্লার, নোনা জল বোঝা দায়,    কলজের তাজা খুন, ঢেউয়ে নুন মিশে যায় !
যেতে হবে বহুদূর, ঘাট পার, মধুপুর,     জল ছিটে ব্যাথাতুর, দুই পাড় ভিজে যায়।
ঢেউয়ের বিরাম নেই, কেউ ঢেউ তুলে যায় !    নোনাজলে মাল্লারা, চৌপর ভেসে যায়।


নোনা জলে তরীপার, এসপার ওসপার,     দিন নেই রাত নেই তিনজন মাল্লার !
জল তুই কত নিস, নিবি কত বল আর !   চৌপর, দিনভর, তিনজন মাল্লার ?


কবিতাটিতে জবাবদিহি করার আছে ! কবিতাটি ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের "দূরের পাল্লা " কবিতার অনুসারী, কিন্তু নকল নয় ! তফাৎ অনেক, প্রথম কথাই হলো, এটি "দূরের পাল্লার" হাজার মাইলের মধ্যে আসেনা, সেটি যুগ যুগ  পেরিয়ে আজ অবধি একটি অমর সৃষ্টি ! আমারটি সদ্যজাত এবং গুণগতভাবে সেটির কড়ে আঙুলের নখের যুগ্যি নয় !
আমারটিতে মুখ্য কথাটি, জীবন নদীতে আমরা আমাদের মধ্যে তিন মাল্লা নিয়ে নৌকো বাওয়া ! দেহাত্মা, যার চাওয়ার শেষ নেই, পরিশ্রমেরও শেষ নেই, দ্বিতীয়টি মন (কেউ কেউ হয়তো জীবাত্মা বলবেন) সেও চায়, পরিশ্রম করে, সুখী হয়, দুঃখ পায়, কাঁদে, হাসে ! আর শেষে বসে আছেন পরমাত্মা বা শুদ্ধাত্মা -যিনি যা মঙ্গলময় তাই চান, নিজের মধ্যে ঈশ্বরের সন্ধান করেন ও এই বাকী দুজনের চাওয়া পাওয়া দেখে ব্যথিত হন - ! কবিতার বাকী সমস্ত বর্ণনার ইন্টারপ্রিটেশন আমি পাঠিকা ও পাঠকের ওপর ছেড়ে দিলাম !