বয়স হয়ে গেছে ভারি
সাদা হয়েছে কালো দাড়ি
চোখে দেখিনা ভাল মত,
ছেলে মেয়েদের চিন্তা করে
মাথার চুল গেছে পরে
তবু ও ভাবনা কত।


ধানের জমিটা নদীর পেটে
যা করেছিলাম গতর খেটে
ভাগ্য করেছে নিরাশ,
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে
লাঠির ভরে হাটি একে বেঁকে
হলো না আমার অবকাশ।


নিয়তির সাথে আমার খেলা
দুঃখের নদীতে কষ্টের ভেলা
ছাড়েনী সে আমার পিছু,
ভেসে এসে গেল স্মৃতির পাতা
হৃদপিণ্ডে যা আছে গাথা
বুছিবার নয় কোন কিছু।


যৌবনে রোগ বেঁধেছিল বাসা
গুড়িয়ে গেল সুখের আশা
ছেড়ে দিয়েছিলাম কর্ম,
পেটের যন্ত্রণায় গড়াগড়ি খেয়ে
সংসার চলেছে লাঙ্গল বেয়ে
গড়িয়েছে দেহের ঘর্ম।


সংসারের বোঝায় নিয়ে মাথায়
দৌড়েছি ফুটন্ত বালি কাঁদায়
এতটুকু হয়নি হতাস,
ছনের চালে কাশের বেড়া
জিগা গাছের খুটিতে রয়েছে খাড়া
পায়নি আলো বাতাস।


রোগে শুকিয়েছে সোনার দেহ
পাশে দাড়াবার নেইতো কেহ
শ্রোষ্ঠা শুধু সাথে,
বুরি - কাঊন - চিনির চাউল
জবের রুটি সোলার ডাউল
জোটেছে খাবার পাতে।


ছেলে মেয়েদের বই খাতা দিয়ে
পাঠশালাতে পৌঁছে দিয়ে
একাই ছুটি ভরা মাঠে,
ফসল তুলে মাথায় করে
হেটে চলে মেঠো পথ ধরে
প্রহর গুনি খেয়া ঘাটে।


রোদ বৃষ্টি ঝড় তুফানে
ভরা নদীর কলতানে
ভয়ে কাপে সারা বুক ,
তবু এই ক্লান্তি দেহে
দাড় পালের নৌকা নিয়ে
খুজি সংসারের সুখ।


ফসল বেচি সন্ধা হাটে
সূর্যের আলো যাচ্ছে পাটে
চাল ডাল কিনি আটা,
ফিরতে হবে খেয়া পাড়ে
বাড়িতে সবাই অনাহারে
বাড়ছে খুদার কাটা।


বরগা জমিতে লাঙ্গল চষে
অভাব যায়না বারো মাসে
জোটেনা ভাল খাবার,
ছেলে মেয়েদের পড়ার খরচ
ঐদিকে আবার বেশি গরজ
আর কিছু নেই পাবার।


গত গ্রীষ্মে সব পুরেছে
চারা ধান পাট মাঠে মরেছে
ফসল আসেনি ঘরে,
কাঁসার থালা ঘটি বাটি
অবশিষ্ট গহনা ঘাটি
সিত কেটে নিলো চোরে।


আষাঢ় মাসের আমাবতি
ঝরছে বাদল দিবা রাতি
ঘরে নেই কিছু খাবার,
দুদিন চলছে সিদ্ধ ছোলায়
কাঁদছে ঘরে মা ও পোলায়
বুক ফেটে যায় বাবার।


খুদার জ্বালা আর নাহি সয়
দুটো ছেলেকে ডাকিয়া মায়
বলছে মৃদু স্বরে,
কত ছেলেমেয়ে ভোর বেলাতে
ভাগায় যাচ্চে বাদাম ছিড়তে
হাজার বিঘার চরে।


যাবি নাকি তোরা ওদের সাথে
ফিরবে ওরা সন্ধা রাতে
দিতে হবে নদী পাড়ি,
লজ্জা শরম দুর করিয়ে
দুপুরের খাবার বাটি ভরিয়ে
চোখ মুছে দিল ছাড়ি।


অভাবে চলছে কত দিন মাস
নদীর জলে ধরেছি মাছ
টেনেছি জালের রশি,
ছেলেদেরকে সঙ্গে করে
চোখে জল দিয়ে উঠেছি ভোরে
ছুটেছি খেয়ে বাসি।


অবশিষ্ট যেটুকু ছিল
নদীর ভাঙ্গনে তলিয়ে গেল
আমি হলেম যাযাবর,
হিংস্র পদ্মার স্রোতধারা
আমার করেছে বাস্তহারা
খড়কুটোর সংসার।


জীবন যুদ্ধে পাইনি কিছু
চোখে দেখি আজ সবই মিছু
অন্ধকারে সব ঢাকা,
হিসাবের খাতা উল্টে দেখি
অবাক কান্ড হলো একি
সব পাতাগুলো ফাকা।