“আমার স্বামী আজ রাতে বাড়ি ফিরেন নি।
মাসের প্রায় রাতেই তিনি এভাবে বাইরে কাটান
এই রাতগুলো তখন অন্যরকম, শুধু আমার।
স্বামীর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর নিলামের দরদামে
আমার বাজার দর উঠেছিলো বেশ,সাত লাখ!
বাবা অমত করেন নি। অমত করিনি আমিও।
আমার প্রেমিক কি কখনো আমাকে এই দামে
কিনে নিতে পারতো? না, কখনোই পারতো না।


স্বামী যে রাতে বাড়ি ফিরেন না, সে রাত আমি
ব্যালকোনিতে দাঁড়াই, আকাশ দেখি, জোছনা দেখি।
আজও দেখছি। পাশের বাড়িটা আলোয় আলোয়
সাজানো। বিয়ে হবে হয়তো। আমার বিয়েতে
তখন অমন আলো ছিলো না। হৈচৈ ছিলো না।
আমার প্রেমিক জেনে যেতে পারে সেজন্য ছিলো
খুব কড়া নিরাপত্তা, সবকিছু চুপচাপ, গোপনে।


সমস্ত বাড়িতে ছিলো কবর সমান নিস্তব্ধতা, যেন
কেউ মারা গেছে। সেটা সম্ভবত আমিই ছিলাম।
মৃত্যুর পর সবাইকে গোসল করিয়ে পরানো হয়
সাদা কাপড়, আমাকে পরানো হলো লাল শাড়ি।
সেবার আমি প্রথম মরেছিলাম, তারপর যতোবার
একটা আধা চামড়া কোঁচকানো হাত আমায়
ছুঁয়েছে আমি মরেছি ততবার। এতো এতোবার
মরেছি যে দাফন করার কিছুই যেন আর নেই। তাই
আমাকে দাফন করার প্রয়োজন পড়েনি কখনো।


বাবা আমাকে বছরে একবার দেখতে আসতেন
কেমন আছি- এটুকুই ছিলো তার প্রশ্নের আয়তন।
শেষবার এসে জানিয়ে গেলেন বোনটার বিয়ে,
যেতে হবে জোর করেন নি। বাবাও জানতেন
বিক্রিত পণ্য সচরাচর ফেরত নেওয়া হয় না।”


চিঠিটা লিখেছিলো কাজল,২৫ বছরের মেয়ে।
সাঁঝ সকালে ঘুমিয়ে যাবার আগে এটাই ছিলো
আকাশের ঠিকানায় কাজলের শেষ লিখা চিঠি।


১১০১২০১৮
প্রফেসর'স লজ।