সেবার আমি পাঁচ কি ছয়
এতোটুকুন মনে আছে
চাঁদ মামার গল্প শোনা
রোজ রাত্তিরে মায়ের কাছে।
আয় রে আয় ডাক শুনে
উঠতো চাঁদ উঠোন ঘেঁষে
তারার মতো মিটমিটিয়ে
জ্বলতো জোনাক মৃদু হেসে।
খেঁকশিয়ালের হুক্কা হুঁয়া
সিংহ হলো বনের রাজা
খোকন সোনার কপাল জুড়ে
আয় রে চাঁদ টিপ দিয়ে যা।


সে যে কতো রূপকাহিনী
মা আমাকে ঘুম পারাতো
চাঁদের বাড়ি কল গেড়েছে
বুড়ি মায়ের চরকা সুতো।
সেখান থেকে সুতো কেটে
পাঠায় সুতো পৃথিবীতে
সেই সুতোতে কাপড় বুনে
মাধবকাকু পাড়ার তাঁতে।
একের পরে আরেক শুরু
গল্প বুঝি শেষ হতে চায়?
যেই দেশে মানুষরা নেই
বেঙ্গমারা থাকে সেথায়।


এক যে ছিলো রূপকুমারী
পাতালপুরীর মণিমালা
বন্দি আছে কাঠির ছুঁয়ায়
ভাঙবে কে ঐ ঘরের তালা?
রাজকুমারী কাঁদছে বসে
সাগর নদী জলের অপার
তাকে নিতে আসবে কখন
পঙ্খীরাজে ডালিমকুমার।
ছুটছে ঘোড়া অচিন দেশে
তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে
গহীন বন, পাহাড়চূড়া
চোখ ইশারে যায় মাড়িয়ে।


পালাক্রমে ভীড় জমাতো
দৈত্য ও দানব, পরীকূল
ছোটরাণীর চোখের মণি
সাতটি চাঁপা এক পারুল।
রাজায় রাজায় যুদ্ধ লড়াই
গর্জে উঠে ঢাল তলোয়ার
তীর ধনুকের আতশবাজি
ভয়ে কাঁপে শরীর আমার।
ঝর্ণাধারের বামুনঠাকুর
তুষারকন্যা ডাইনীবুড়ি
একে একে শুনেই যেতাম
মীনকুমারী, পুতুলপরী।


সেই প্রথম মায়ের মুখে
জানা হলো পরীর খবর
চাঁদের মতো রূপের গড়ন
ডানা থাকে পিঠের ওপর।
দেখতে যদিও মানুষ বটে
উড়তে পারে মেঘের দেশে
হাতের ছড়ি নাড়িয়ে দিলে
ইচ্ছেপূরণ এক নিমেষে।
সেই থেকেই মায়ের কাছে
বায়না ধরি, দাওনা এনে-
দাওনা এনে পুতুলপরী
পুতুলপরী দাওনা এনে।


মা বললে- আচ্ছা রে বাপ
এনে দেবো পূজোর মেলায়
আমি তখন বেজায় খুশি
পরীর ছবি আঁকছি খাতায়।
হাত আঁকছি, পা আঁকছি
ডানা আঁকছি, আঁকছি চোখ;
যা এঁকেছি সব মিলিয়ে
মা'র অবিকল অন্যমুখ।
ঘুমে জাগি, জেগে ঘুমাই
রাতকে ভাবি ভরদুপুর
সকাল এলে মাকে শুধাই
পূজোর মেলা কতোদূর?


অমন করে যেতে যেতে
তারপর সে সুদিন এলো
ঠাকুর ঘরের উলুধ্বনি
খাসার ঘণ্টি বাজানো হলো।
আজ তাহলে পূজো হবে
পুরুতমশাই মন্ত্রেরত
তুলসীবেদী প্রণামজোরে
রামনামে তাই মুখরিত।
রাতের বেলা দীপ জ্বালিয়ে
নেমে এলো পুতুলপরী
তুলতুলে গাল টুকটুকে লাল
চোখ দুটি তার রঙ বাহারি।


মা আমাকে বললে ডেকে
হ্যাঁ রে খোকা এইতো সে!
ডানা কোথায়? মানুষ ছুঁলে-
রুপোর ডানা যায় খসে।
মায়ের সাথে তুমুল আড়ি
অভিমানে আকাশ ছুঁয়
অমন কেন? কেন ছুঁলে?
ডানা ছাড়াও কি পরী হয়!
দেখো কেমন পাগল ছেলে
এই নিয়ে কেউ রাগ করে?
ডানা দুটো লাগিয়ে দিই
পুতুলপরী যাক উড়ে?


আমি ফের রাগ করিনি
মায়ের কথাই নিই মেনে
সত্যি যদি সে উড়ে যায়
হতেও পারে কে জানে!
নাহ, তেমন হয়নি সেদিন
যায়নি উড়ে ফুড়ুৎ করে
ঘুমকাতুরে ঘুম তাড়িয়ে
ধীরে ধীরে উঠলো বেড়ে।
টো টো করে মাথায় তুললো
উঠোন বাগান সারা বাড়ি
ফোকলা দাঁতের জ্যোতির্ময়ী
পুতুলপরী, পুতুলপরী।
তারপর আরো দিন ফুরালো
মাস ফুরালো বছর গেলো
সাত জনমের প্রতিশ্রুতি
সবে' মাত্র উনিশ ছুঁলো।


০৮০৩২০১৮
প্রফেসর'স লজ।


উৎসর্গ : আদুরে বোন মুন