বাতি ঘর আমাদের কাছে এক পরিচিত নাম। এ ঘর যে পথ হারায় তাকেও পথ দেখায় যে পথের খবর জানে তাকেও পথের কথা মনে করিয়ে দেয়। আলোর ঘর তেমন পরিচিত কোন নাম নয়। যদিও এ দুইয়ের অর্থগত তেমন পার্থক্য নেই তবু ভাব গত একটা পার্থক্য ভাবনায় ধরা দিতেই পারে। বাতি ঘর তো পথ দেখায় আলোর ঘর কি আলোকিত করে? চলুন না দেখি মিরপুরের আলোর ঘর কি করে।


১) পাঠাগার সেবাঃ ৬০০০ এর ও অধিক সংখ্যক বইয়ের এটা এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। যে কোন বয়সের নারী পুরুষ সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত এখানে আসতে পারেন পড়াশুনা করতে পারেন। এখানে এক সাথে ৬০ জনের বসে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কোন টাকা পয়সা ছাড়াই যে কেউ সারা বছর এখানে আসতে পারে যদি বাত্সরিক মাত্র ২০ টাকা খরচ করে সদস্য হয়ে যান। এক সপ্তাহের জন্যে বই ধারও নেয়া যায়। বাচ্চাদের উপযোগী ৭০০ এর অধিক বই রয়েছে এখানে।
২) খবরের কাগজ ও ম্যাগাজিনঃ শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব দৈনিক এর এক ঈর্ষনীয় ভাণ্ডার রয়েছে এখানে। আছে পুরনো দৈনিকের আর্কাইভ। আছে নামি দামি ম্যাগাজিন।
৩) ইন্টারনেট ভিত্তিক তথ্য সেবাঃ এখন তথ্য খুঁজতে ইন্টারনেট এর কথাই প্রথমে মনে আসে। শুধু তথ্য কেন হবে জীবনের অংশ এখন ইন্টারনেট। আলোর ঘর তার সদস্যদের জন্য তাই ইন্টারনেট এর ব্যবস্থা ও রেখেছে। যে কোন সদস্যই দিনের যে কোন ভাগে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই সেবা গ্রহণ করতে পারে।
৪) টিভি ও ভিডিওঃ একসাথে বসে কখনো কখনো টিভি দেখার মজাটাই আলাদা, যেমন বাংলাদেশের ম্যাচ। আলোর ঘর সদস্যদের জন্য সে ব্যবস্থাও রেখেছে। রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষামুলক ও গণসচেতনতার উদ্দেশ্যে নির্মিত ভিডিও যা সদস্যদের মাঝে প্রদর্শিত হয়।
৫) আলোর আসরঃ সাহিত্য চর্চার কাজেও পিছিয়ে নেই আলোর ঘর। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবারে এখানে আলোর আসরে একটি প্রবন্ধ পাঠ করা হয় এবং তা নিয়ে চলে আলোচনা। এই আসরে পঠিত প্রবন্ধ সমূহ নিয়ে চলছে প্রকাশনার আয়োজন।
৬) বৃত্তি প্রদানঃ আলোর ঘর মেধাবী অসমর্থ ও বিভিন্ন ভাবে চ্যালেঞ্জড ছাত্র ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করে থাকে।


আলোর ঘরের এই কার্যক্রমের পেছনে রয়েছে দিশা (DISA- Development Initiative for Social Advancement) নামক একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান যাদের মুল লক্ষ্য হল আলোকিত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এরকম প্রতিষ্ঠান তারা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চায়। কি মনে হয়, এমন একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের এলাকায়ও একটি করে থাকলে কত ভালো হত, তাই না।


বাংলা কবিতা আসরের বন্ধুরা আলোর ঘরে কেন গিয়েছিলেন, তার পেছনের কথা একটু বলি। স্টার কাবাবের আড্ডায় একটা বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছিল তা হল বাংলা কবিতার আসরের কবিগণ সম্মিলিত হয়ে কি পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারবে প্রচলিত ধারার কবিরা যা পারছে না। কিছুতো পার্থক্য সৃষ্টি করতে হবে। বাংলা কবিতার আসরের বন্ধুদের দুটো খুব শক্তিশালী যায়গা রয়েছে। প্রথমটি হল কবিতার প্রতি ভালোবাসা আর দ্বিতীয়টি হল আসরের অন্য কবিদের প্রতি আন্তরিক টান। এ বিষয় সবাই একমত ছিলাম যে কবিতা এখন আর পাঠকের নিকট জনপ্রিয় নয়। কিন্তু এটাও সত্যি উপন্যাস বা গল্প পড়ার মত অত সময় ও মানুষের আর নেই। তাই কবিতার ভবিষ্যৎ সাংঘাতিক উজ্জ্বল। ক্রিকেট এর ক্ষেত্রে আজ টি২০ খেলা যেমন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অল্প সময়ে পূর্ণ স্বাদ। শুধু প্রয়োজন মানুষের নিকট কবিতাকে সেই ভাবে নিয়ে যাওয়া। আসরের বন্ধুরা ছড়িয়ে আছে, বাংলাদেশ, পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা সহ পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে। তারাই পারবে কবিতা কে মানুষের আরও কাছে নিয়ে যেতে। আসরের কবিরা যে যেখানে আছে তারা যদি আলোর ঘরের মত কোথাও একটি কবিতার আসরের আয়োজন করতে পারে এবং কাছাকাছি এলাকায় অন্য যে বন্ধুরা থাকেন তারা যদি তাতে অংশ গ্রহণ করেন এবং নিয়মিত বিরতিতে যদি আয়োজন চলতে থাকে তবে কবিতা মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবেই। কেননা মানুষ কবিতা পড়তে পছন্দ করে না এই কথাটি সত্য নয়। প্রতিটি মানুষ তার ভাষা শিক্ষা শুরু করে কবিতা পড়ে। তাই কবিতা নিয়ে তাদের কাছে গেলে তারা তা গ্রহণ করবেই। আসরের বন্ধুরা নিজ নিজ এলাকায় কবিতার আসর আয়োজনের পাশাপাশি ফি বছর ঢাকায়/কোলকাতায়/আগরতলায় একটি বৃহৎ সম্মিলন ও করতে পারে। আসরের বন্ধুদের আন্তরিকতা অক্ষুণ্ণ থাকলে কবিতা পাঠের এই সম্মিলন একটি সামাজিক আন্দোলনের রূপ নিতে পারে যা জাতিকে নিজ সংস্কৃতিতে গর্বিত হতে সহযোগিতা করবে। মিরপুরের আলোর ঘরে যাওয়া সেই চিন্তার প্রথম পদক্ষেপ ভাবা যেতে পারে।


কবীর হুমায়ূন ভাই ৭ জুন বলতে গেলে একক প্রচেষ্টায় দারুণ একটি আসরের আয়োজন করেছেন। আমাদের পরিচয় হয়েছে আলোর ঘরের মত একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে। আমি বিশ্বাস করি আসরের উপস্থিত কবিদের এই অভিজ্ঞতা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। এখন প্রয়োজন আরও একটি আলোর ঘর খুঁজে বের করা। এবার আসরে নীতিগত ভাবে শাহাবাগ এলাকায় পরবর্তী আসর আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঈদের পর ঈদ পুনর্মিলন ও কবিতার আসর শিরোনামে ৮ আগস্ট শাহাবাগে এই আসর বসতে পারে। ভেণ্যু প্রাপ্তি সাপেক্ষে সকল কে জানিয়ে দেওয়া হবে। সারা দেশের সকল বাংলা কবিতা আসরের বন্ধুদের নিয়ে একটি বড় আকারে সম্মিলনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও এসেছে। এই আসর কোরবানি ঈদের পর ১৭ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এর বাইরে আসরের কোন বন্ধু যদি কোন এলাকায় আসর আয়োজন করতে চান তবে সে বিষয়ে মাননীয় এডমিনের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা রয়েছে।


৭ জুন এর আসর সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা সেয়ার করতে আরও একটি লেখা লিখতে চাই। পলক ভাই খুব সুন্দর ভাবে ইতোমধ্যে তার অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেছেন। আমিও আশা করছি শীঘ্রই লিখে ফেলতে পারব। আজকের লেখা নিয়ে আসরে উপস্থিত কারো যদি ভিন্ন মত থাকে তবে সে তা মন্তব্যে প্রকাশ করতে পারেন। আজ এই পর্যন্ত।