এই যে দাদু উঠুন -
বসবার জায়গায় শুয়ে কেন ?
- স্বর কিছুটা হলেও রুক্ষ ছিল নিশ্চয়
দার্জিলিং থেকে ঠান্ডা খেয়ে ফেরার পথে
বামনহাট প্যাসেঞ্জার ;
ভিড় খুব না থাকলেও পছন্দসই আসন চাই জানালায়
পাতলা ছিপছিপে চেহারার বৃদ্ধ কাতরে বললে -
শরীরটা খারাপ বলে একটু শুয়ে থাকি বাবা -
অনিচ্ছা সত্বেও কোনমতে একখানে বসে পড়া গেল ;
আজকের কাগজটা পড়া হয় নি
হকারকে ডেকে একখানা কাগজ নিলুম ঠিকই
কিন্তু খুচরোর অভাবে যখন ফেরতের উপক্রম
বৃদ্ধ দাদু আমায় অকাতরে খুচরোয় দাম সাধলো
নির্লজ্জের মতো দাদুকে দশ টাকা দিলুম বদলে দিতে
নোংরা ছেঁড়া ধুতির খুট থেকে দাদু যখন
অনেক খুচরো আর অনেক ছোটবড় নোট বার করলো  
ততক্ষণে কপালে আমার চোখ
খুব মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করলুম তার কথা বাড়ির কথা
দাদুও ডালি উজার করে দিল পরমানন্দে
তার জন্ম নাকি হয়েছিল খুলনায় সেই উত্তাল দিনে
যে বছর ব্রিটিশ চালিয়েছিল জালিয়ানবাগে অমানুষিক গুলি ;
অঙ্ক কষে বাকরুদ্ধ আমার
সে কি !
তুমি এই বয়সে দাদু কোথায় গিয়েছিলে !
ঘাস কাটতে , দাদুর জবাব নির্দ্বিধার ,
সত্যি তো -
ঘাস তো আমরা প্রায় সকলেই কমবেশি কাটি
তা তুমি কোন ঘাস কাটতে গেছো !
দাদু প্রতিদিন আমবাড়ি থেকে শালবাড়ি যায়
আদ্ধেক রেলে আদ্ধেক পায়ে ত্রিশ ক্রোশের বেশি পথ
বাড়িতে কয়েকটি গোরু তার আশায় চেয়ে থাকে ,
জানতে চাইলুম , দাদু তোমার ছেলেমেয়ে দেখে না ?
দাদু খুব ফোকলা হাসলো , তারপর বলল -
হ্যাঁ দেখে , ধবলির তিন মাসের ছেলেটা
রোজ নিয়ম করে গা চেটে দেয়
ধবলি বালতি ভরে দেয় দুধ
সে দুধে জমাট স্নেহ
তা থেকে নিজে খাওয়া বাকি বেচে চালডাল ,
-সে তো তোমার মা ,
তোমার সন্তানেরা , তারা ?
দাদুর গলা শক্ত হল যেন -
দুপেয়ের জন্যে অনেক তো হল আর কেন
বরং এবার গোরুর জন্যে করা
ওরা খুব দরদী অহং নেই তাই
ওদেরই সেবাদাস এখন যাতে বৈতরণী পার একবারেই
আর তার আগে এভাবেই -
নিজে চলে ফিরে একা আনন্দে জীবন যাপন -