অনেক কথা বলার ছিলো
তুমি কি ঘুমিয়ে গেলে?


মনে করে দেখো


আমাদের ছেলেবেলা
বাঁশঝাড়ে লুকোচুরি চোর পুলিশ খেলা
কতই মধুর ছিলো সেই দিনগুলো!
সতী নদীর ঐ ডোগাউল্টা পাড়ের জামগাছ, মনে আছে?
মনে আছে রেললাইন, আলামিন নিশি জেসমিন তুমি আমি এবং আমাদের নিস্পাপ প্রেম?
তুমি দাঁড়িয়ে থাকতে তোমার বাসার সামনের নীলরঙা গেইটে  
আমি সামনে দিয়ে হেঁটে যেতাম
তুমি কি দেখেছিলে আড়চোখে তাকাতাম?
আমি জানি, আমি কিছুদূর এগুতেই তুমিও আমায় তাকাতে ভীরু লাজে
আমি ফিরে তাকাতেই তুমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে...


বিকেল বেলা,
আমাদের বাসার সামনের রেললাইন ধরে তুমি, নিশি, জেসমিন একসাথে হাঁটতে,
আমি তখন ব্যাটবল হাতে নিয়ে
দেখিয়ে দেখিয়ে পাশের মাঠে ছুটতাম,
তুমি রেললাইন ধরে হাঁটতে,
খেলা দেখার ছলে দাঁড়িয়ে যেতে,
আমি তোমায় দেখতাম, তুমিও আমায়...


প্রবীর মুহুরীর বাড়ির সামনের পেয়ারা গাছের কথা ভুলে যাওনি নিশ্চয়ই! আর গোডাউনের সামনের ঘরগুলোর বারান্দায় অথবা মাঠে তুমি যখন বসতে সদলবলে
আমি প্রায়শই নিশিকে ডাকতে আসতাম,
তোমায় দেখার ছলে মিছে কথা বলেছি কতবার
"এই নিশি, মা তোকে ডাকছে!"


আজ হাজারো স্মৃতিরা ভীড় করে,
আমার আগেই -
তুমি বাইসাইকেল চালনা শিখেছিলে,
তখন? আমারও যে শিখতে হয়!
লোকে বলবে কী!
একটা ছেলে মানুষ, বাইসাইকেল চালাতে পারে না?
শিখতে গিয়ে পড়ে যাই, পড়ে গিয়ে প্যান্টের সাথেসাথে পেছনের ছালটাও উঠেছিলো!


সাইকেল চালাতেই এক্সিডেন্ট?
একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষের জন্য এটা বড়ই লজ্জার কথা, তাই কাউকেই বলিনি!
পাছে তুমি শুনে ফেলো!!
ছিলে যাওয়া পেছনে রাতে চুপিচুপি নেভানল পাউডার লাগাতাম, এটা কেউই জানতো না, আজ তোমাকে বললাম


তোমার বাইসাইকেল চালানোটা খুব উপভোগ করতাম;
চোখ বন্ধ করলেই সেই ছবি ভাসে
তুমি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছো, আমি খুব কাছেই কোথাও থেকে লুকিয়ে তোমাকে দেখছি, তুমি আমায় দেখতে পেতে না! পেতে কি?


সেই পরীর গল্প, মনে আছে?
নিশিকে বানিয়ে বানিয়ে বলতাম, সে গিয়ে তোমাকে শোনাতো
তুমি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতে একটা ষোড়শী পরীর গল্প
একটা পরী আসে, ডানাওয়ালা ;
মধ্যরাতে সে আমায় জাগিয়ে তোলে, তারপর? তারপর আমি তার ডানায় ভর করে উড়ে যাই অজানা অচীন দেশে...
তুমি গভীর মনোযোগে শুনতে, নিশি আমায় বলেছে


একবার সরকারি ডাকপিয়ন তোমার বাসায় একটা চিঠি দিয়ে যায়, চিঠির খামটা খুলতেই কী দেখেছিলে?
সাদা কাগজের মাঝখানে লেখা ছিলো "কেতু"
এছাড়া কাগজে কিছুই লেখা ছিলো না!
খামটা বাড়িতেই খুলেছিলে, অথচ
কিভাবে যেনো খবরটা আশেপাশে ছড়িয়ে যায়,
সেসময় আমাদের পাড়ায় অনেকে ফিসফিস করছিলো,
ডাক্তার বাড়ির আন্টি কলোনির বিটিভি মাসীকে বলেছিলেন,
" ওমা, শুনেচো, ও মেয়ের বাড়িতে উড়োচিঠি আসে, নিজের মেয়েকে ও মুখো হতেই দিয়ো না"
ডাক্তার আন্টি তার কথা শোনেনি অথচ, বিটিভি আন্টি বিনা ব্যর্থতায় খবরটা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন....


তুমি কি জানতে,
পোস্টাপিসে কে পোস্ট করেছিলো সেই চিঠি?
আমিই করেছিলাম!
ঐ চিঠিটা যেহেতু আমারই পাঠানো,
সুতরাং, বলাবাহুল্য
তবুও বলছি, তোমার আমার নামের আদ্যক্ষর মিলিয়ে "কেতু" শব্দটি আমারই আবিষ্কার;
গাছের ডালে ছাল বাকলে বইয়ের পাতায় অংক ইংরেজি বাংলা খাতায় যখন যেখানে খুশি ইংরেজি হরফে লিখে রাখতাম K+T
এটুকু তো বুঝতেই পাচ্ছো
K তে আমি
T তে তুমি!


মজার ব্যাপার হলো
তুমিও জানতে আমি তোমায় ভালোবাসি
আমিও!
অথচ, কেউ কাউকে কোনোদিন বলতে পারিনি
কী করেই বা বলবো?
অতটা সাহস, না ছিলো তোমার না আমার!!
তবুও, কিভাবে যেনো আশপাশের সবাই জেনে গেছিলো আমাদের মধ্যকার লুকোচুরি প্রেম চলছে!
আমার বড় মা একদিন খুব গালাগালি করলেন
শুনেছি তোমার বাড়িতে তোমাকেও শাসিয়েছে বেশ.....
তবুও, লুকিয়ে লুকিয়ে তোমায় দেখতাম,
স্কুলে যাবার পথে - ফেরার পথে- বিকেলে হাঁটার সময়
তুমি জানতে, আমি আছি তোমার আশেপাশেই,
এভাবেই কেটে গেছে কত দিন, মাস, বছর


হঠাৎই একদিন,
নিশি এসে বললো, "সন্ধ্যায় ডেকেছে"
ওর পাহাড়ায় আমাদের দেখা হয়েছিলো, দুটো কথাও হয়েছিলো, তোমার হাত ধরে বলেছিলাম:
"আমি তোমাকে ভালবাসি, তুমিও কি আমায় ভালবাসো?"
সেই সময় কেউ যেন এসে পড়ছিল! তুমি বলছিলে: "হ্যাঁ গো হ্যাঁ, আমিও তোমাকে ভালবাসি, অনেক ভালবাসি, এখন যাও,  হাত ছাড়ো প্লিজ, কেউ আমাদের দেখে ফেলবে!"


সময় গড়িয়ে গেল
আমরা বড় হতে থাকলাম
সময়ের খেলায় -
আমাদের গল্পগুলো এলোমেলো হতে থাকলো,
আজ সেসব কথা মনে হলে কষ্ট বাড়ে।


কিছু ভুল অভিমানে


তুমি অনেক দূরে, আমিও!
তুমি অন্যের, অন্যকারো আমিও....
বিশ্বাস কর,
সেইদিন যদি তোমার হাতটা না ছাড়তাম
তবে হয়তো আজকের গল্পটা অন্যরকম হতো।