মানুষ সম্পর্কে সম্যক ধারণা গ্রহণের পূর্বে আমি জেনেছি আমার মা'কে
তাকে জেনেছি যাবতীয় আকাশ, মহীরুহ, সমুদ্র এবং হিমালয়ের সমষ্টি,
তার চোখে ঝেঁকে দেখেছি মহাকালের গহ্বরে লুকিয়ে থাকা শূন্যতার প্রতিচ্ছবি
তার তর্জনী জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন অশ্বত্থ ডালে গান গায় বরষা
আর তার তালুতে গোটা পৃথিবী নিশ্চিন্তে ঘুম যায়।
মাঝরাতে চিন্তার বলিরেখা ফুটে উঠে তার কপালে, অথচ আলো ফুটতেই তার ঠোঁটে জড়িয়ে থাকে সোনালী আশার তেপান্তর,
কৃষকের শ্রমের বিপরীতে যেমন এক আশ্চর্য সকালে ঘুম থেকে উঠে ফসলের মাঠ।
সে, ঘুমায়
তাকে পরশ বুলায় দখিনের শীতল উত্তরীয়
সেই থেকে আমি মানুষ হিসাবে কেবল মা'কে বুঝি,
যার বুক জুড়ে লুকিয়ে আছে অতল নীল তিমি, যার তেল থেকে সে বানায় সুস্বাদু খাবার
মরুর বিষাক্ত সাপের বিষ থেকে তৈরি করে মরণঘাতীর ঔষধ, যা খেয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ট্যাঙ্ক ভর্তি হন্তারক
এবং তারা মৃত্যু বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে প্রত্যেকটি মায়ের গর্ভে।
চোখ খুলে আমি প্রথম মায়ের কান্নাভেজা চোখ দেখেছিলাম, তখন বুঝতে পারিনি মা কেনো কাঁদছে
তোমরা হয়তো ভেবেছিলে সন্তান লাভের আনন্দ তাকে ছাপিয়ে দিয়েছে সুখে,
কান্না যার একমাত্র প্রকাশক।
কিন্তু মহাকালের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হত্যা সংঘটিত হওয়া আবশ্যক ছিলো তখনই,
মা কখনো হত্যাকারী হতে পারে না।
কেউ কেউ ঔরসে বিষাদ নিয়ে ঘুরছে সুখের ছদ্মনামে, তারা জানে তাদের হাসিই একে পাল্টে দিতে পারে অনিন্দ্যের সর্বনামে।
তাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে নিশানা গেড়ে রাখে বিশ্বাসের ভাইরাস, যা তারা সংক্রমিত করতে চায় ঔরস থেকে ঔরসে, হৃদয় থেকে হৃদয়ে।
খিধার পৃথিবী জুড়ে চলমান সভ্যতার অপরিণত বুদ্ধি একত্রিত হয় মা নামক মহীরুহের কাছে-
চাহিদার সকল আরতি তুলে ধরে দরবারে, কেউ শূন্য সংখ্যার সাথে পরিচিত হতে চায় না কখনো
মৌন প্রার্থনায় তারা লিপ্ত হয় প্রতিযোগিতায়।
মা শিকড়ে সংযুক্ত সমুদ্র থেকে তুলে আনেন সুস্বাদু মাছ, গাছ থেকে ফলান সুদর্শন আপেল আর আকাশকে বলেন কিছু পাখি উপহার দিতে।
প্রার্থনা সভা শেষ হতেই তারা উদ্ধত হয় একেকজনের মুণ্ডপাতে
তারা, যারা একেকজন হত্যাকারীর সম্পূরক, ভুলে যায় তাদের আশ্রয়দাতার মহানুভবতা
সমস্ত ঘৃণা দিয়ে তুলে আনে শেকড়, প্রস্তুত করে আগ্নেয়াস্ত্র যা দিয়ে শিকার করে শেষ পাখিটাকে,
ইতিহাস পুনরাবৃত্তি করে রাজহাঁস ও সেই বালকের ঘটনাকে।
তবুও যা কিছু মায়ের সমার্থক, তারা শ্রম ও মেধার সমন্বয়ে ফুটিয়ে তোলে উৎপাদনশীল বীজ।


২রা আগস্ট ২০২০