আলহামদুলিল্লাহ।
বিবাহ বার্ষিকী ২৩ বছর পূর্তি ২৪ শে পদার্পণ।


তোমায় পেয়ে ধন্য আমি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন
তারিখঃ ০৬-০৮-২০২২ ইং, শনিবার
  
🌹____১৯৯৯___🌹
নিরানব্বই হয় একাকার
ছয়- ই আগস্ট রোজ শুক্রবার
তোমার আমার বিয়ে ,
মাতা পিতা আত্মীয়রা
বেঁধে দিলো সবাই ত্বরা
দুই জনারই হিয়ে।


বিয়ের পরে পাওনি কো সুখ
সদাই ছিলো মলিনে মুখ
দুঃখ ছিলো মনে,
ব্যর্থ ছিলাম প্রেম যে দিতে
চাইনি তোমায় সঙ্গে নিতে
অশ্রু চোখের কোণে।


পাষাণ হয়ে দিলাম ব্যথা
রাগ করোনি কইছো কথা
আমায় ভালো-বেসে,
আমায় রেখে যাওনি দূরে
ডাক দিয়েছো সুরে সুরে
চোখের জলে ভেসে।


পাহাড় সমান দুঃখ নিয়ে
ভালোবাসার বাঁধন দিয়ে
করলে গো মোর যতন,
নূরের আলোয় ভরিয়ে দিলে
আমার তরেই সৃষ্টি ছিলে
তুমিই ঘরের রতন।


সেদিন কভু যায় না ভোলা
রেখেছিলে হৃদয় খোলা
এই আমারই জন্য,
চোখের জলে গাঙ বয়েছে
কষ্ট কত মন সয়েছে
মহতী এক রন্য।


সকল বাধা পেরিয়ে আজি
সফল তুমি আল্লাহ রাজি
আমি হলাম ধন্য,
সবার থেকে তুমিই সেরা
ভালোবাসায় চিত্ত ঘেরা
নও সাধারণ অন্য।


বিয়ের লগন আসলো ফিরে
মগ্ন তোমার প্রেমের নীড়ে
তেইশ বছর পূর্তি,
হাত ধরে মোর সাথ চলোনা
তোমার কভু নাই তুলনা
মন করে তাই ফূর্তি।


(০৬-০৮-১৯৯৯💝০৬-০৮-২০২২=২৩)


একটি বাস্তব জীবনী, সংক্ষিপ্ত কাহিনি।
💝আজ ২৩ তম বিবাহবার্ষিকী পূর্তি💝
(০৬-০৮-১৯৯৯ থেকে ০৬-০৮-২০২২)
💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝💝
🥰আলহামদুলিল্লাহ🌹আলহামদুলিল্লাহ🥰


বাবার সম্পত্তির অংশ না পেয়ে ছোট বেলাতেই বাবা মারা যাওয়ার পর জীবনে নেমে আসে এক বিপর্যয়। আমিই মায়ের একমাত্র ছেলে ছিলাম। মা সুশিক্ষায় শিক্ষিত না থাকলেও কোরআন হাদিস সম্পর্কে ভালো অবগত ছিলেন। বাংলা রিডিং পড়তে পারতেন। মায়ের বড় স্বপ্ন ছিলো আমাকে মানুষ করার। মা আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। আমি ছাত্রও ভালো ছিলাম তবে প্রাইমারি স্কুলে হাজার চেষ্টা করেও রোল নাম্বার "এক" করতে না পারলেও মাধ্যমিকে আল্লাহর রহমতে আমাকে কেউ রুখতে পারেনি। হাই স্কুলে রোল নাম্বার যখন "এক" করতে সক্ষম হলাম। আমার আনন্দের সীমা ছিলো না।  বাড়িতে এসে মা ছাড়াও আরও অনেকের সামনে যখন বলি মা! আমার রোল নাম্বার "এক" হয়েছে।


সবাই হাসে এবং মা মন খারাপ করে বলে সারাবছর লেখাপড়া করে মাত্র "এক"!
আমিসহ আরও অনেকে বললো," এক মানে কম নয়, এর মানে প্রথম স্থান অধিকার করা, প্রথম হওয়া,  আর বেশি হওয়া মানে সবার পেছনে পড়ে যাওয়া। তখন মায়ের মুখে মধুর হাসি ফুটলো।


উদ্যোম গতিতে চলে আমার লেখাপড়া। এর মাঝেই একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে গিয়ে ক্লাস নাইনে চরমভাবে প্রেমের ছ্যাঁক খাই এবং একটা বিরাট অঘটন ঘটে। আল্লাহর অশেষ রহমতে মায়ের দোয়ায় কোনভাবে বেঁচে যাই। নতুন জীবন ফিরে পাই। মা তখন সিদ্ধান্ত নিলেন আমার বিয়ের জন্য। আমাদের গ্রাম থেকে কিছু দূরে একটি বিয়েও ঠিক করে ফেলেন কিন্তু আমার অনিচ্ছা পোষণে বিয়েটি হয় না। সবাই আমাকে বুঝায়, আমি বিয়ে না করলে মাকে  বাঁচানো সম্ভব না। মা সবসময় কান্নাকাটি করতো। মায়ের চোখের পানি দেখে আমার মনে কষ্ট থাকার পরেও যেন মনে সম্মতি দেয়। তখন আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি আমাদের গ্রাম হরিশংকরপুর খেয়া ঘাটে শিক্ষার জন্য আমার ভাতিজার লঞ্চ চালাইতাম। কিন্তু কোনো পারিশ্রমিক পেতাম না।


একদিন আমাদের বাড়িতে আমার এক খালাতো বোন দুই খালার সঙ্গে বেড়াতে আসে। আমি তাকে কোনো দিন কখনো  দেখিনি। আমি কখনো কোথাও যেতাম না, শুধু মামাদের বাড়ি যেতাম নানির জন্য। নানি আমাকে খুব ভালোবাসতেন, আমিও নানিকে খুব ভালোবাসতাম।  তাই তাকে কখনো দেখিনি। সে ক্লাস সেভেনের ছাত্রী। মেয়েটি কালো কিন্তু তার দাঁতগুলো দেখতে ছিলো মুক্তার মত ঝকঝকে পরিষ্কার। আমি সেদিন লঞ্চ চালিয়ে বিকেল বেলা বাড়ির দরজাতে এসেই দেখি বোনটি আমার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে ভাবিও আছে।


আমি মাকে জিজ্ঞেস করি,
মা!  উনি কে?  মা বললেন তোর খালাতো বোন পাশে তোর দুই খালা। তাদের সালাম কর্। আমি তাদের সালাদ দিলাম। মেয়েটি দরজা ছেড়ে বাড়ির আঙিনায় দাঁড়ালো, তার মাথার চুলগুলোও ছিলো খুব সুন্দর। মুখে থাকতো যেন সবসময় মিষ্টি মধুর মায়াবি হাসি। এ সময় ভাবি আমাকে ডাক দেয়, এই শোন!  


বাড়ির পেছনে ডেকে বলে, এই সেই মেয়ে। আমরা আবার তোর বিয়ে ঠিক করছি। আমি বললাম, ভাবি তুমি এসব কি বলো?
ভাবি বললো সত্যি ভাই, তুই যদি বিয়ে না করিস, তবে তোর মাকে আর বাঁচানো যাবে না। ভাই আমার, তুই বিয়েতে রাজি হয়ে যা। আমি বললাম ভাবি!  
আমার আর কিছু বলার নাই। তোমাদের যা ইচ্ছা তাই করো। এই ছিলো আমার সম্মতি। দেরি না করে এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ের দিন ধার্য ঠিক করে ফেললো।


সেই দিন ছিলো ১৯৯৯ সালের ৬-ই আগস্ট শুক্রবারের দিন। আমার চোখের পানি ঝরা বন্ধ হয় না। তবুও আল্লাহর অশেষ রহমতে আমাদের বিয়ে হলো। বিয়ের পর দেখি আমার বৌকে বিয়ের আগে যতটা কালো দেখেছিলাম, বাস্তবে তার বিপরীত। মানে কালো আর কালো না। খুব স্বাভাবিক সুন্দর একটি মেয়ে। আমি তো অবাক!  ভাবলাম নিশ্চয়ই মেয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে। কালো মেয়ে আজ ফর্সা হলো কীভাবে? সে আমাকে বললো, "আমি সেদিন প্রচন্ড রৌদ্র তাপে এসেছিলাম, তাই আপনার চোখে আমাকে দেখতে কালো লেগেছিলো। যতটা কালো ভাবছিলেন, আসলে আমি ততটা কালো ছিলাম না"।


আমি খুব চিন্তিত। আমি ছাত্র মানুষ।  আমার কাছে কোনো টাকা নাই। নতুন বৌকে যে একটা লজেন্স কিনে দেবো সেটাও ছিলো না। আমার পুরাতন বই বিক্রি করা প্রায় ৮৫ টাকা ছিলো আমার কাছে। আমি সেটাই তার হতে তুলে দিয়েছিলাম। তাতেই সে অনেক খুশি হয়েছিলো। সে আমাকে খুবই ভালোবাসতো। আমিও তাকে খুবই ভালোবাসতাম।  কিন্তু আমার মন ভিজতো না। কিছুই ভালো লাগত না। আমি তাকে বলতাম, আমার জীবন আর জীবন নাই।  এটা একটা অভিশপ্ত জীবন।  তুমি অন্যত্রে চলে যাও, তোমার জীবন সুখী হবে। আমার কাছে থাকলে তোমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। সে আমাকে বলতো, তাহলে তুমি বিয়ে করলে কেন? আমি বলতাম,  আমি বিয়েতে সম্মতি দিয়েছি আমার মায়ের ইচ্ছায়। তুমি আমার কাছে থেকে তোমার সুন্দর জীবনটাকে ধ্বংস করে দিওনা। আমার যা কিছু আছে, সব কিছু নিয়ে তুমি চলে যাও। আমার কোনো দুঃখ থাকবে না।


নিজের স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে অন্যের জন্য কান্নাকাটি করতাম। চোখে পানি আসতো। কিন্তু সে কখনো আমার প্রতি রাগান্বিত হয়নি। তার মন খারাপ হওয়ার কথা আমাকে কখনো বুঝতে দেয়নি। সে আমার চোখের পানি মুছিয়ে আমাকেই বুঝাতো।
দেখো, "যা হবার তা হয়ে গেছে। অতীতের সবকিছু ভুলে যাও। আমি কোথায় যাবো?  আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না"। আমারও খুব কান্না পেতো এই ভেবে যে, আমার জন্য একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হবে, কাঁদবে একটি পরিবার। আস্তে আস্তে, ধীরে ধীরে আল্লাহর অশেষ রহমতে এখন আমি স্বাভাবিক অবস্থায়- আলহামদুলিল্লাহ।


এত কষ্ট, অভাব অনটন, জ্বালা যন্ত্রণার বেড়াজাল অতিক্রম করে আজ ৬-ই আগস্ট রেজ শনিবার ২০২২ ইং সনে আমাদের দু'টি মনের বন্ধন ২৩ বছর পূর্তি হয়ে ২৪ বছরে পদার্পণ করলো - আলহামদুলিল্লাহ।


মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে এইদিনে একটাই প্রার্থনা, আমাদের এই বন্ধন থাকুক চির অটুট। আমাদের এই বন্ধন যেন জান্নাতুল ফেরদাউসেও থাকে চির অটুট ও চির অম্লান - আমিন ইয়া রাব্বুল আলামিন।
💝🌹 I love my that Cute wife 💝🥰
   🌹🌹🌹🌹💝💝💝💝🌹🌹🌹🌹