ছোট্ট একটি সুখের সংসার পিতা, আনন্দ, বধূ
মোটামুটি দিন কেটে যায়, আহ্! গরীব হলেও মধু।


পিতৃ প্রদত্ত বর আনন্দ কর্ম পেশা-জাতে শীল,
সহজ সরল সদালাপী সকলের সাথে হাসি মিল।


ধর্ম-কর্মে সকলের আগে,আহ্! স্বর্গ যেন সাক্ষাত নারায়ণ,
প্রত্যহ সকালে সুর করে পড়া চাই কমেতে একপাতা রামায়ণ।


সম্পদ সমস্ত সকল মিলে আছে শতক দু'ই,
রোজগারে তার ব্যবহার হাতের কব্জি-কনুই।


তবুও আনন্দ আনন্দে সাথে মিলেমিশে বেশ,
ছোট জাত বলে টিকলিধারী অনেকের অনেক রেশ।


ওরে সামনে পড়িস না পোড়ামুখো অপয়া অজাত,
তোকে দর্শনে এ যাত্রায় ঠাকুরের যাবে জাত।


সহজ সরল শান্ত সাধু মনে নাপিত ভাবে,
আমাকে দেখলে ঠাকুর তোমার জাত যদি যাবে।


তবে দেবতা তুমি কেন এলে এই পোড়ামুখো অপয়ার ভবে,
আমি মরলেও আমার মত ছোট জাত চিরকাল কত রবে।


ভাবনা সে তো ভাবনাই মুখে বলার কি সাহস সাধ্য,
এ কথা প্রকাশ হলে নাপিতের মরার আগে হবে শ্রাদ্ধ।


কত রকম মানুষ রে ভাই উপোষ পন্ডিত জ্ঞানী,
একটু পেলে শুনাবে কত শাস্ত্র দেবী দেবতা বাণী।


এমন তেমন করে নাপিত পরিবারের দিন কেটে যায়,
বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে আনন্দ অন্তরে যত ভয়।


হায়! হায়!! এই মধ্য ফাগুনে ঘটলো কি অঘটন?
আনন্দের পিতাকে ধর্মরাজের বাণ করলো ছেদন।


আনন্দের বুঝি এমন বিপদকাল সংসারে আর
নাই,
বাবা একমাত্র আস্রয়স্থল এ ধরাধামে আর নাই।


যাই হোক পিতার তরে চাই উত্তম অন্তষ্ঠী ক্রিয়া,
প্রয়োজনে সর্বস্ব উজার করে দেব উড়াইয়া।


নিরানন্দের সাথে যেই ভাবনা আনন্দের সেই কাজ,
যথা স্বাদ্য দিয়া ডেকে লয় যত পন্ডিত জ্ঞানী ভ্রহ্মন রাজ।


এ করো সে করো, এ আনো সে আনো আরো কত কর্ম,
জাতে উঠতে এগুলো লাগে মেনে চলো সাধুদের
দেয়া ধর্ম।


সমস্ত সম্পদ সব কিছু উজাড় করে হয় পিতার
কর্ম শেষ,
এখন আর কোন লোকজন নাই,থাকছে দারিদ্রতার লেশ।


ধর্ম মতে ব্রাহ্মণ পূর্ণ অধিকার পাবে শবের সব,
অন্যথায় স্বর্গ পাবে না, পাবে না তোমার রব।


ব্রহ্মণ আনন্দের পিতার নিলো সবই বাকি শুধু একখানা ছাতা,
এ নিয়ে ব্রহ্মাণী খমখমানী রোজ চালায় যাতা।


সাধু বলে একটু ধৈর্য ধরো ছাতাও তোমার হবে,
নাপিতের বেটাকে আবার যদি পাই তবে।


এই যে শোন অজাত মেচ্ছো শীলের বেটা শীল,
সবই তো দিলি তবুও বাকি আছে তোর বাবার
একখানা বিল।


সাধুর ভাব খানা উডু উড়ু যেন ছোঁ দেয়া চিল,
কি জানি কোন ক্রোধে ঈশ্বর তাকে করছে নীল।


কি বলি মন দিয়ে শোন সম্প্রতি স্বর্গে বাড়ছে অনেক রোদ,
নিত্য রাতে তোর বাবা জ্বালায় তুই দে তার শোধ।


তুমি তো সবই জানো আর কি আছে বাবা ঠাকুর,
সর্বস্ব দিছি যা ছিল আমার বিষয় সম্পদ পুকুর।


উপার্যনের তরে কর্ম করি না হলো অনেক দিন,
এও জানো সমাজ হতে আজ কত কাল ভিন।


কি বলো ঠাকুর! কি দিয়ে তোমাকে দিব ছাতা,
পরিবার সহ বহু দিনের অনাহারে ঘোরে মাথা।


দিবি কিনা বল? অতশত বুঝিনা বাপু,
আর সহ্য হয় না বন্ধ কর তোর বাপের ভেপু।


মুশকিলের উপর একি মুশকিল হলো হায়,
শ্রন্তি ক্লন্তিতে আনন্দের পরাণ বুঝি যায়।


কিরে আনন্দ কত দিন হলো তোর নাই কোন
খোজ,
একটু অধটু আগেতো দেখতাম রোজ।


ডাক্তার বাবু শুনেছেন নিশ্চই আমার পিতৃ
বিয়োগ,
যা ছিল পিতার স্বর্গের তরে করেছি সব বিনিয়োগ।


তবুও দেয়ার বাকি ছিল একখানা ছাতা,
বেহায়া সাধুকে কিভাবে বোঝাবো মম মনের
ব্যথা।


যখন তখন যেখানে সেখানে বেহায়া দেয় লতা,
শুনায় কতো ধর্ম বানী আরো কত কথা।


ডাক্তার বলে কি হয়েছে বুঝিয়ে বলো,
আগে আনন্দ আমার সাথে চেম্বারে চলো।


ডাক্তার মুচকি হাসে সব কথা শুনে,
বাহ্মণকে শিক্ষা দেবে এ বুদ্ধি বোনে।


শোন আনন্দ চিন্তা করো না তুমি যাও বাড়ি,
অনেক হয়েছে!শালাকে বোঝাবো মনে আছে আরো আড়ি।


হঠাৎ একদিন হাটের মধ্যে ব্রহ্মণের দেখা,
ডাক্তার বলে আজ তো খারাপ তোর কপালের
লেখা।


বুঝিয়ে বলুন কি হয়েছে ডাক্তার বাবু,
তোর স্বর্গীয় পিতার পাছায় বিষ ফোঁড়া, তাকে করেছে কাবু।


অতি ধর্মপরায়ণ ভালো মানুষ ছিল তোর পিতা,
আমার তো সখা মানুষ আমারই আবার মিতা।


তাই তো তোর বাপ কয়েক দিন ধরে আসে নিত্য রাতে,
আমি তার বিষ ফোঁড়ার অপারেশন করি যাতে।


একি বলেন ডাক্তার বাবু একি করে সম্ভব,
দেবলোকে রোদ্রের তরে ছাতা তো নয় অসম্ভব।


ডাক্তার বাবু ছাতা আর ফোঁড়া এক হলো নাকি,
ডাক্তার বলে বন্ধ করো তোমার সব চালাকি।


কে কোথায় আছিস ধর শালাকে অপারেশন করি ওর পাছা,
জোড়াজুড়ি করলে বাঁশ দিয়ে দিবি কয়েক লাছা।


একি করেন ডাক্তার বাবু আমাকে করেন ক্ষমা,
দোষ আমার না ছাতা চেয়েছিল আমার প্রিয়
তমা।