মা, তোমায় কতদিন বল তো দেখিনি
তুমি কি এখনও রয়েছ ঠিক তেমনই ?


না বোধহয় !


কি করে বোঝাব আমি কত যে কাতর
দেখতে তোমার নত মুখ আমার মুখ পর
নামিয়ে ঝুপসি চুল - খোলাচুল, সুগন্ধি |
তুমিই জাগিয়েছিলে আমার দুরভিসন্ধি
চুল ধরে টানি আমি, চাই তোমার চুমো
তুমি বল, “ওরে দস্যু, এবার তুই ঘুমো |”


ঘুমিয়েছি আমি শেষে তোমারই কোলে
শেষনিদ্রায় অনাগত কৈশোরের প্রাক্কালে
ছাড়িয়ে মুঠোর চুল তুমি উঠে চলে গিয়ে
দিলে খাটের কাঠে আমার শয্যা সাজিয়ে
বিছানা, কোল-বালিশ, প্রিয় খেলার ঘোড়া
আর দু’চোখ বুজে ফুল বেল-পাতা জোড়া
ঠোঁটে বাতাসা রেখে, দেখে সারি পিপীলিকা
সে মুখে ছোঁয়ালে প্রজ্বলিত কুশ পুত্তলিকা


সেই থেকে খোলাচুল আর মুঠোয় ধরিনি
তুমিও আর কখনও সেই মুঠো ছাড়াওনি
আমার হাত দেখ তাই মুঠোই হয়ে আছে
শুধু আমি নই আর তোমার বুকের কাছে
না শিখেই হাঁটা, পথ কত বাঁকা, কত দূর
পার হয়েছি আলোকবর্ষে আকাশ-সিন্ধুর
বিশাল শূন্যতা | ওই চাঁদের বিপরীত পিঠে
যেখানে তারারা দেখ জ্বলে আর মিটে
স্বচ্ছ স্ফটিকে গড়া এই নির্জন স্বর্গ পুরী
তোমার অভাবে হিমেল-শীতল বিভাবরী


তুমি আছ আজও কি তেলে, জলে, সিঁদুরে
সেজে, চির একাকিনী শূন্য ঘরের দুয়ারে
জড়িয়ে জল-কাচা কোরা আটপৌরে শাড়ি
চেয়ে সে পথ যাতে আমি দিয়েছি দূর পাড়ি


বাবা গেল চলে, তুমি মোছনি সিঁথি-সিঁদুর
কাঁপেনি তোমার গলায় কোন কান্নার সুর
শুধু খুলেছ বিবাহের কেয়ূর, কঙ্কণ, বালা
রেখেছ হাতের নোয়া, শাঁখা, আর পলা
আমায় বুকে নিয়ে বলেছ, “শোন, সবাই
পুত্র কোলে সধবা আমি, অভাব কিছু নাই |”


প্রশ্ন ছিল একটাই, দিও উত্তর কাছে এসে
মুখ দেখে বলেছিলে কেমন ভালোবেসে,
“ওই দেখ এসেছে মুখপোড়া হনুমান”
করবে আমার মুখাগ্নি না করে অনুমান ?


আজ এই নির্জন স্বর্গ পুরীর হিমেল-শীতে
বড় ইচ্ছে তোমার ওই কোলে ফিরে যেতে
তাই মুখাগ্নির উষ্ণতা রোমে রোমে নিয়ে
আমি আছি, তুমি এস, খোলা চুলে, নেয়ে
খুলে দিও আমার সঞ্চিত আঁট করা দুই মুঠি
ধরব ভিজে চুল – ছাড়াতে, দিও আর্দ্র চুমোটি
এই ভাবে যদি হয় এই শরীরে প্রাণ-সঞ্চার
আসবো তোমার জঠরে ফিরে পুনঃ পুনর্বার ||


------------------------------------------
ইন্দ্রনীর / ০৯ জুলাই ২০১৪