রংধনু সাজে দীপ্ত বিকেল
হাওরের উদোম রাস্তা পেরিয়ে
কাদা বিলেপন ধানক্ষেতের আল, তারপর
মেঠো পথের কর্দম রাহা
সত্যি বলছি
হিজল করচের ছায়ায় বসে আছি শত বছর
প্রহর গোনার শেষ নেই
কোন তাড়া নেই
আমি নিশ্চিত তুমি আসবে
হয়তো আজ অথবা কাল
হোক না তা হাজার বছর পর।


ডাগর আঁখির শ্যামা মেয়েটিকে দেখেছি
বহু বছর পথ চলেছে হাওরের পথে
রাজ পথের লোকারণ্য সরু অলি গলিতে
বিবশ চরণে ভর করে ক্লান্ত দেহে
স্বচ্ছন্দে পাড়ি দিয়েছে
কত শত নদী, প্রান্তর, সাগর আর পাহাড়
কত দিন কত রাত হিসেব নেই
চোখের নিচের কালো দাগ বলে দেয়
নির্ঘুম রজনী তার অতি প্রিয়
অধরের মসৃণ ত্বক ধূসর হয়ে গেছে বহু আগে
অনায়াসে বলা যায় হয়তোবা
কয়েক যুগ
ডান হাতে তার বিশাল এক ট্রাভেল ব্যাগ
বাম হাতে একটা বড় পার্স
পেছনে ঝোলানো লম্বা সফরে র মস্ত বড় ঝুলি
সবচেয়ে বড় হিজল গাছের ছায়ায়
ব্যাগ পুটলি রেখে এক বিশ্রান্ত পথিক
কাছে ভিড়ার মওকা পেয়ে গেলাম
দরদ মেশানো সুরে বললাম, ব্যাগ যতনে রাখবে
মূল্যবান জিনিস হারালে আর ফেরত পাবে না।
ফিরে তাকা লো মেয়েটি
সুপ্ত নক্ষত্রের ঝড়ে পড়া আলোর মতন জ্বলে উঠলো
ছড়িয়ে থাকা লম্বা চুল সরিয়ে উত্তর দিলো
আমার ব্যাগ ভর্তি হরেক রকম কষ্ট
সেগুলো বেহাত হওয়ার মতো নয়
দুঃখ কি মানুষ শ্রম দিয়ে কিনে?


নানা জাতের কষ্টের আখ্যা নে ভড়কে গিয়েছিলাম
জানা সত্ত্বেও সহজ প্রশ্নের কোন উত্তর দেই নি


আজ আমি পূর্ণ
কষ্টকে রুখে দেয়ার সাহস আর
প্রণয়ের ভেলায় ভেসে বেড়ানো র
একটা হৃদয় গজিয়েছে
আবার যদি দেখা হয়
মনের ভেতরে পোষে রাখা সবগুলো প্রশ্নের জবাব দেব
শির-দাঁড়া উঁচু করে বলব
যদি তুমি হাত বাড়িয়ে দাও
তোমার সবগুলো কষ্ট বাতাসে ছড়িয়ে দেব
সমস্ত দুঃখ মাটিতে পুঁতে ফেলবো
পাতালের জল এগুলোকে চুষে নেবে
রাতের তিমির সবগুলো দুঃখকে অন্ধ করে দেবে
জোছনার নরম আলোতে ভেসে যাবে বহুদূর
বিশ্বাস করো আমি জেগে উঠেছি
তোমাকে আমার বড়ই প্রয়োজন
পরখ করে দেখার জন্য হলেও একবার ফিরে এসো
হাজার বছরের অপেক্ষা থেকে মুক্তি চাই।