স্বাধীনতা তুমি শুনো,
আমি মন্দির চাইনা, আমি গির্জা চাইনা, আমি মসজিদ ও চাইনা,
আমি চাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, আমি চাই শিক্ষা, আমি চাই ভাত, আমি চাই বাঁচার স্বাধীনতা।
আমি চাই শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, আমি চাই বাক স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা তুমি কার জন্য অপেক্ষায় আছো?
এই গভীর সমুদ্রের মাঝে!
ওই চাষা গুলির জন্য যারা খাবার চায়, কাজ চায়,
যারা শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ সমাজ কে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তাদের জন্য?
স্বাধীনতা তোমার মধ্যে ক্ষত দেখা গেছে, তোমার অজান্তে, তাই তুমি অপেক্ষায় আছো।
স্বাধীনতা তুমি যাদের প্রত্যাশায় আছো,
যারা চিৎকার করে বলছে আমি হসপিটাল, শিক্ষা, কর্ম সংস্থান চায়, কিন্তু ওদের মুখোশ খুলে দেখো, তারা সেটা চায় না।
তারা মন্দির, মসজিদ, গির্জায় সন্তুষ্ট।


দেশের অর্থনীতির কথা বলো, ওরা মন্দির, মসজিদ ধরিয়ে দিবে,
অর্থসংস্থান এর কথা বলো, ওরা ধর্ম ধরিয়ে দিবে,
ওরা মন্দির, মসজিদ ভাঙা গড়ার কথা বলে,
ধর্মের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দাঙ্গার সৃষ্টি করে দিবে।
স্বাধীনতা তোমার নিশ্চয় প্রশ্ন জাগছে, ওরা কারা?
ওরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বড় বড় মঞ্চে ভাষনে ভরিয়ে দেয়, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি।
ওরা আমাদের ভোট নিয়ে নির্বাচিত সরকারের প্রতিনিধি, ওরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত, কিন্তু
আদর্শ গত ভাবে তারা একই।।
সিংহাসনে বসে জনগণ শোষণ করা, ওদের প্রধান লক্ষ।


আমরাই ওদের নির্বাচিত করেছি, আমরাই ভোট দিয়েছি।
স্বাধীনতা, আমরা কলঙ্কিত অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি,
এখানে কেউ যদি শিক্ষার কথা, কর্ম সংস্থানের কথা, কৃষক দের কথা, স্বাস্থ্য সেবার কথা তুলে ধরে,
ভোটের ময়দানে নামে, তার হার নিশ্চিত।
এখানে মন্দির, মসজিদ গড়ার কথা বলে, ধর্মের উস্কানি দিয়ে ভোট পাওয়া যায়।
হা আমরাই শিক্ষিত সমাজে বাস করি, আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যের কথা বলি, আমরাই ধর্মের কাছে পরাজিত।
ওদের বিভাজনের অঙ্কে ওরা সার্থক,
ওরা পেরেছে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে,
ওরা জিজ্ঞাসা করে হিন্দু, না মুসলিম, দলিত,
না অন্য ছোট সম্প্রদায়ের মানুষ।


জান স্বাধীনতা, এখানে ধর্ষণের প্রতিবাদ হয় ধর্মের মানুষ দেখে, রাজনৈতিক নেতা দেখে।
প্রয়োজনে ধর্ষককে বাঁচানোর লড়ায়ে তোমারই পতাকা হাতে ওরা পথে নামে।
এখানে মব লিঞ্চিং এর প্রতিবাদ হয় না,
যদিও হয় ধর্ম কে সম্মুখে রেখে।
প্রায় সোস্যাল মিডিয়া, খবরের কাগজে দলিত,
অত্যাচারের ছবি ভেসে আসে।
এখানে ভাতের লড়াই হয় না, এখানে জাতের লড়াই হয়।
জান স্বাধীনতা! জাত পাতের বিভাজনে ওরা সার্থক।


স্বাধীনতা তুমি কাঁদছ? একি তোমার চোখে জল?
তুমি ভাবছ ওইসব সৈনিক দের কথা, যাদের রক্ত দিয়ে তোমার সৃষ্টি,
বুঝতে পারছি তোমার মনের মধ্যে উঁকি মারছে, তোমার বিপ্লবী শহীদ সন্তানদের বলিদান,
যারা তোমাকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল,
তোমার শহীদ সন্তান গান্ধীজী কে এখনো প্রকাশ্যে,
গুলি করে তার কুশ পুতুল পুড়ানো হয়।
স্বাধীনতা তোমার আরেক সন্তান, যে তোমাকে নিরপেক্ষ সংবিধান দিয়েছিল,
হা বি আর আমবেডকর তাকে অসম্মানিত করা হয়।
স্বাধীনতা তুমি শুনো, ভেঙে পড় না,ধৈর্য ধরো আরও বলার আছে।


এখানে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করার প্রয়াস চলছে,
ওনাদের ঐক্যের বানী নিভৃতে কাঁদে।
সুকান্ত ভট্টাচার্য কে কালি মালিপ্ত করা হয়, বিদ্যাসগরের মূর্তি ভাঙা হয়, রাজনৈতিক স্বার্থে।
তোমার বীর সন্তান, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসকে,
এখনো জগ্য সম্মান দেওয়া হয় না।
রাজা রামমোহন রায় কে গালিগালাজ করা হয়।
তোমার বীর সন্তানদের শ্লীলতাহানি ঘটিয়ে স্বাধীনতার ইতিহাস বদলে দিবার প্রচেষ্টা চলছে।


যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছিলাম, সেটা সুখের ছিল, গর্বের ছিল, বেদনার মধ্যে আনন্দ ছিল।
সেখানে আঘাত হানা হয়েছে, গা বেয়ে রক্ত ঝরছে,
স্বাধীনতা তুমি কান্নায় ভেঙে পড়বে না,
তুমি ভুলে যেওনা যুগে যুগে তোমার জন্য বিপ্লবী ছেলের জন্ম হয়েছে তোমার ভূপৃষ্ঠে ।
ওরা রুখে দাঁড়াবে, ওরা সংগ্রাম করবে শোষনের বিরুদ্ধে,
তোমার মধ্যে থাকা সব ক্ষত মুছে দিবে।
স্বাধীনতা তখন তুমি দেখবে , রাম রহিম মিলে মেশে এক হয়ে গেছে,
তোমার ১৩০ কোটি সন্তান আবার গাইবে ঐক্যের গান, কেউ জিজ্ঞাসা করবে না ও হিন্দু না মুসলিম।