بسم الله الرحمن الرحیم


জোড়-বিজোড়ের চক্কর
—আশরাফুল ইসলাম
বড় ফেছি, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট৷
১১/০৭/২০২১ ইং


অক্ষরবৃত্তে পয়ার ও সনেটের শব্দ চয়নে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো চরণের শব্দগুলো হতে হবে জোড়, জোড়৷ অর্থাৎ—


মনে মনে ভাবি শুধু প্রেয়সীর কথা,
ছুঁয়ে দেই নানা ফুল, হয় শূন্যলতা!


এই দুই চরণে মাত্রাসংখ্যা ৮+৬ করে, প্রতিটি শব্দ জোড়৷ হয় ২ অক্ষরে, নয়তো ৪ অক্ষরে৷


* অথবা বিজোড়, বিজোড়, জোড়, বিজোড় বিজোড়৷ অর্থাৎ—


আঁধারে যখন ঢাকে মনের বন্দর,
রঙিন  ধরার  গতি    তখন  মন্থর৷


(৩+৩+২=৮/৩+৩=৬) অক্ষরবৃত্তে প্রতি চরণে ৮+৬ মাত্রা করে৷


* অথবা বিজোড়, বিজোড়, জোড়, জোড়, জোড়, জোড়৷ অর্থাৎ—


মানুষ আজব   প্রাণী, করে  নানা কল,
ফুরালে স্বার্থের খেলা, বেছে নেয় ছল৷


* অথবা জোড়, জোড়, বিজোড়, বিজোড়৷ অর্থাৎ—


পৃথিবীটা আমাদের     সুখের আবাস,
অতি বিলাসিতা খুঁজে করেছি বিনাশ৷


*  অথবা জোড়কে বিজোড় করলে পরের শব্দ বিজোড় নিয়ে৷ অর্থাৎ—


না এলে আমার ঘরে, না হলে আপন,
তোমার বিরহে কাঁদি,   চলে না  চরণ৷


এখানে এলে —এর পূর্বে "না"  নেয়াতে "আমার" শব্দ বিজোড়৷ হলে —এর পূর্বে "না" নেয়াতে "আপন" বিজোড়৷ "চলে" জোড় শব্দের শেষে "না" নেয়াতে "চরণ" বিজোড় শব্দ৷ এইভাবে বিজোড়কে জোড় করলেও পরের শব্দ জোড় নিতে হবে৷


জোড়-বিজোড়ের চক্কর সামলে ও বুঝে লিখতে হবে৷


অনেকেই অক্ষরবৃত্তে পয়ার কিংবা সনেট লিখছেন অক্ষরের জোড়-বিজোড়ের রীতিকে মানছেন না৷ কেউ কেউ হয়তো জানেন-ই না৷


উল্লেখ্য যে, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত জোড়-বিজোড়ের রীতি লঙ্ঘন করে লিখেছেন এবং বিজোড় মাত্রায় যতিও দিয়েছেন আর সেটা অমিত্রাক্ষরে বেশি হয়েছে৷


আলোচনাটা আরও দীর্ঘ হওয়া প্রয়োজন ছিলো কিন্তু আমার লেখার জড়তা ও অধৈর্যের কারণে এখানেই শেষ করছি৷ এ বিষয়ে জানতে অমূল্যধন মুখোপাধ্যায়, আব্দুল কাদির, নীলরতন সেন, প্রবোধচন্দ্র, মোহিতলালের লিখিত ছন্দের বইসমূহ দেখতে পারেন৷