// আত্মহত্যা কে না বলি //


জীবনকে আপন ছন্দে হাঁটতে দিও
বহুক যত দমকা ঝড় বা সংকেত অশনির।
জমুক যত বিষাদের কালোমেঘ বা কষ্টের নীল।
আশীর্বাদ ভেবে ছুঁড়ে দিও এক চিলতে হাসি।
দেখবে, তোমাকে হতাশ করতে না পারায় হতাশার চাদরে বাঁক নিয়ে পালাবে দমকা ঝড়, কালোমেঘ ও এক আকাশ কষ্টের নীল।


জীবনকে দিও বাঁচার খোরাক, যোগান জ্বালানির।
সুললিত গানের সুরে, স্পর্শের স্বর্গসুখে, আহার্যের অমৃত স্বাদে, মাতাল করা ঘ্রাণে এবং চোখ জুড়ানো লাবণ্যের পানে।
পাঁচ ইন্দ্রিয়ের সুষম বণ্টনে
স্বপ্ন বুনো স্বপ্নের পিঠে স্বপ্ন হাজার।
দেখবে, অপূর্ণ স্বপ্নের গায়ে চুমো দিয়ে মগজের বারান্দায় তোমাকে ডাকছে বিবিধ স্বপ্নের হাতছানি।


জীবনকে ব্যস্ত রেখো বহুমাত্রিক জ্ঞানহরণে, মননশীল সৃজনে, দেশ-প্রকৃতি ভ্রমণে,
শিল্পের কারুকাজে, বিশ্বখ্যাত বায়স্কোপে,
সংস্কৃতির অনন্যতায়, জীবনমুখী বইয়ের পাতায়, ইতিহাসের  শিক্ষায়, গল্প-উপন্যাস ও কাব্য গাঁথায়।
দেখবে, জীবনের সর্পিল বাঁকে এক পথ হারিয়ে শত পথ উন্মুখ তোমার সংবর্ধনায়।


জীবনকে বিনিয়োগ কর অসহায়ের সহায়ে, ধর্মীয় অনুশাসন প্রতিপালনে, ভালো বুদ্ধি পরামর্শে, স্বজন-বন্ধুর উপকারার্থে, এবং দিও মূল্যবান সময় রক্তের সম্পর্কে ;আত্নার-আত্নীয়দের।  
দেখবে, সুমধুর ফুলের সমারোহে জীবন এক স্বর্গীয় উদ্যান, খু্ঁজে পাবে জীবনের অনেক মানে।


জীবনকে ঠেলে দিও না কোন ব্যক্তির ইচ্ছের দাসে, তাকে পাওয়ার না পাওয়ার
'পরে, তার খামখেয়ালিপনায়, বা ঠুনকো ব্যর্থতার কাছে।
দেখবে, জীবনকে ভালবেসে বেঁচে থাকার মূল্য ঠিক একদিন কড়ায়গণ্ডায় বুঝে পাবে, জীবন তোমায় সব হিসেব কষে ফেরত দিবে ভারসাম্যে।


জীবনকে গড়ে তুলো দৃঢ় মানসিকতায় যেন সে বারবার তোমায় মনে করিয়ে দেয়---
পারিবারিক অপমানে
সামাজিক হঠকারিতায়,
আর্থিক দৈন্য দশায়,
রাষ্ট্রিক জরাজীর্ণ ব্যবস্থাপনায়...


তোমার আসে যায় না তাতে কোন!
তোমার মন দগ্ধ হয় না তাতে কোন!


কারণ
পৃথিবীর কোনকিছুই অবিনশ্বর নয়;
না আমি না তুমি না আমাদের দুঃখবোধ।
দেখবে, তোমার নিরবতা তোমাকে একদিন সরব করবে আমজনতায় সসম্মানে।


আশা রাখো জোয়ারের পর ভাটা পড়বে,
আশা রাখো মেঘের পর পশলা বৃষ্টি নামবে।
আশা রাখো যে নদী পাড় ভাঙ্গে সে নদীই পাড় গড়ে।
আশা রাখো দুঃখের আধিক্য মানে সুখের নৈকট্য।


ফুসফুস ভরে দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ মেলে দেখো-----


জীবন সুন্দর বাতাসের মৃদুমন্দ ছোঁয়ায়, আকাশের বর্ণিল ছটায়, উর্বর মৃত্তিকামায়,
পাখির কূজন বৃক্ষের শাখায়।
জীবন সুন্দর প্রাণ-প্রাচুর্যের এই বাংলায়,  জীব-বৈচিত্র্যের ছায়ায়, মৌমাছির মধুর চাকে, নদ-নদীর বাঁকে।
জীবন সুন্দর কৃষাণের ধানে, ভাটিয়ালি গানে, বাঁশরির রাখালিয়া স্বনে, বাউলের একতারা টানে।  
জীবন সুন্দর বিন্দু জল শীত কুয়াশায়, বাহারি পিঠার সৌরভে, খেজুর রসের অমিয় স্বাদ ও ফসলের গৌরবে।
জীবন সুন্দর ইলিশের মৌসুমে, পল্লীবধূর নকশীকাঁথার ভাঁজে, তালপাখার বাতাসে,
খরতাপে বটবৃক্ষের ছায়ায় আয়েশে।  
জীবন সুন্দর পাহাড়ের গা বেয়ে শিখরে, একমুঠো সুখ দক্ষিণের চরে, হাওড়ের নৌকাবিলাসে, বিল-ঝিল পাড় বালিহাঁসে।
জীবন সুন্দর সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে, পৃথিবীর দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভে, পতেঙ্গা সমুদ্র বন্দরে,
নিসর্গের অবারিত সবুজ-শ্যামল শরীর জুড়ে।।


জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০