নিস্তরঙ্গ রাত
জাহিদ খান


গভীর নিস্তরঙ্গ রাতে,
তীব্র গরমে প্রকৃতি যখন বিরুপ
মনুষ্য সৃষ্ট বিদ্যুৎ যখন লুকোচুরি খেলে
নশ্বর দেহ আর নিথর থাকতে চায় না
শ্রান্ত দেহ মন ঘর্মাক্ত হয়ে যায়
অবচেতনে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসি।


খিটখিটে মেজাজে অশ্রাব্য গালি
মুখ দিয়ে বেরোতে গিয়েও আটকে যায়
বাইরে অবিরত ঝি ঝি পোকার ডাক
হয়ত একটু বাতাস ও বইছে,
দূরের রাজপথে হুইসেল এর শব্দ
পাথর বোঝাই ট্রাক, গড়তে হবে নগর।


বিছানা থেকে নেমে বাহিরে বেরিয়ে
উপলব্ধি করতে চাই রাতের সৌন্দর্য
বন্ধ হয়ে গেলো ঝি ঝি পোকার ডাক
হয়ত তারা বুঝতে পেরেছে অচেনা অস্তিত্ব
বাতাস এর ছিটে ফোটাও নেই
আকাশে দু'য়েকটা তারা জ্বলজ্বল করছে।


ঘামছি আমি বুঝি শ্রাবণ ধারা দেহে
অস্বস্তি লাগলেও মুছতে অনাগ্রহ
দক্ষিন আকাশে লালচে আভা
অবচেতনে তাকাই আম গাছটির দিকে
ঝোকায় ঝোকায় আম নিয়ে গর্বিত ভাব
গাছের ডালে খস খস শব্দ।


কতক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে তা আর মনে নেই
আবার ডাকছে ঝি ঝি পোকা,
আকাশে তারাও বেড়ে গেলো বুঝি
টুপ করে কয়েকটি আম খসে পড়লো
ডালের খস খস আওয়াজের কারন বুঝলাম
সৃষ্টি ই বাচিয়ে রাখে সৃষ্টি কে স্ব-মহিমায়।


দখিনের লাল আভা আস্তে আস্তে স্থানান্তরিত হচ্ছে
যেনো মিশে যেতে চায় পূব আকাশে,
গর্বিত অংশ হতে চায় সুবহে সাদেকের,
আমি তখনোও ঠায় দাঁড়িয়ে নির্ভাবনায়,
যেনো আমিও অংশ হতে চাই নতুন জন্মক্ষণের
অনেকটা ধরণীর মত বিনা বাক্য ব্যায়ে।


এমনি সময় অবচেতনে কান পাতি
সুনসান নিরবতা যেনো আতংকিত প্রহর,
ভীত ঝি ঝি পোকাদের নিস্তব্দতা
নেই আমের ডালের খস খস শব্দ,
উঠোনের চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠলো
ঘরে বৈদ্যুতিক পাখার শব্দ কানে এলো।


নতুন জন্মের কালের স্বাক্ষী হতে পারলাম না
ঘর্মাক্ত দেহে বন্দিত্বের স্বাদ নিতে অবচেতনে,
পা দুটো ফিরে যাচ্ছে কৃত্তিমতায় ঘেরা
চার দেয়ালের ভিতরে যান্ত্রিক জীবনে,
আবারো বাইরে প্রাণের চঞ্চলতা
একটানা বেজেই যাচ্ছে ঝি ঝি পোকার শব্দ।