মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে উঠে গেলেন কবি
তিনি একটি কবিতা লিখবেন বলে মনঃস্থির করেছেন,
তার কাছে পাতা আছে, পেন্সিল আছে, মগজ ভর্তি লক্ষ কোটি শব্দ আছে
কথার জন্য বাক্য আছে, বাঁকা-ত্যাড়া উপমা আছে ।
কবির ঘরে জগ আছে, জল আছে , নোনা সমুদ্রের পানি আছে
হাজার নটিক্যাল দূরের শব্দ আছে,
কবি শুনতে পেলেন জল কেটে এগিয়ে যাচ্ছে বয়সের সাঁজোয়া জাহাজ
চোখে দেখতে পেলেন মিলন ও বিরহের অশ্রু
অন্ধকারে দেখতে পেলেন আরও কয়েকশত চোখ এগিয়ে আসছে
ওসব চোখে ক্ষুধা আছে তৃষ্ণা আছে ।


তখন প্রায় সকাল, ধল প্রহর ।
কবি এবারে লিখতে বসলেন, তিনি একটি কবিতা লিখছেন,
অদ্ভুত অদ্ভুত সব শব্দের শব মিলিয়ে কবি লিখেছেন তার কবিতা


কবিতায় একটি রাজ্য আছে, কাঁটাতার আছে,
ঝনঝন শব্দ করা পয়সা আছে, নীরব নিথর লাশ আছে ।
প্রাণ আছে, প্রাণঘাতী ঘাতক আছে।
কবিতায় চরিত্র আছে, দুশ্চরিত্র আছে ।
স্বপ্ন আছে, বীজ আছে জমি আছে,
কৃষক আছে অযাচিত মহাজন আছে ।
এ কবিতায় প্রেম আছে কাম আছে টুটে যাওয়া হৃদয় আছে
নতুন নতুন সংবাদ আছে , সংবাদপত্র আছে ।
ঈমান আছে, বেঈমান আছে ইমানদারির বেশে ।
সে কবিতায় রাজা আছে রাণী আছে,
রাজার মনে রাণী হারাবার ভয় আছে ।
কবিতায় রাজকুমার আছে, রাজকুমারী আছে ,
হাতি আছে বাঘ আছে , ঘোড়া আছে, লাগাম আছে
রাজকুমারীর লাল ঘোড়ার খুরে খুব ব্যথা আছে ।


প্রজা আছে, সাধারণ আছে, অসাধারণ আছে
সে কবিতায় ক্ষত আছে , দুঃখ আছে, পাহাড় চাপা কষ্ট আছে
পানি আছে, জোঁক আছে, রাজ্যের বুকে হু হু করা বাতাস আছে,
বুক ভরে জল খাওয়ার তৃষ্ণা আছে
কোমরের সাথে কোমর জড়িয়ে থাকার সুখ আছে
হাতের উপর হাত রাখার কষ্ট আছে
খোলা পিঠে হাত রাখার পচে যাওয়া আঙ্গুল আছে
বয়সের জাহাজ চালিয়ে যাওয়ার যাতনা আছে


এ কবিতার শেষ আছে,
শব্দের পরে শব্দ আছে, এমএ বিএ পাশ আছে
মূর্খ থাকার ইচ্ছে আছে, কিছু কষ্টের রেশ আছে
এত শব্দ থাকার পরেও কবি ভাবলেন,
সত্যিই কি এত শব্দ রাজ্যে আছে ?
নাকি কেবল প্রেমই আছে ?