মায়াং,
তোমাদের তীব্র দুঃখের কথা পড়ছি পত্র-পত্রিকায়
দেখেছি কারও পা নেই, কারও হাত নেই,
হাত-পা বিহীন প্রাণগুলো দেখতে বড্ড মুমূর্ষু দেখায়, বড্ড বীভৎস দেখায় !
কারও কারও আবার গোটা দেহটা আছে কেবল প্রাণটাই নেই।  
আমি আজকাল প্রাণহীন পত্র-পত্রিকা কেনা বন্ধ করে দিয়েছি,
টেলিভিশনের এন্টেনাটা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেছি।
পত্রিকার ছেলেটা আমাকে রোজ মনে মনে গালি দেয় দশবার
একটা পত্রিকা বেশি বিক্রি হলে ওদের দু’পয়সা কামাই হয়ত হয়
কিন্তু আর যে দেখতে পারি না তোমাদের বর্ণনাতীত দুর্দশা !


রাত দুটায় দুটা টি-ব্যাগ দিয়ে আমি যখন কড়া একটা চা বানাই
বুলেটিন শুনতে পাই; তীব্র গোলাগুলিতে ছয় রোহিঙ্গা নিহত।
আমার তখন খুব জানতে ইচ্ছে হয় মায়াং,  
তুমি শেষ কবে একটু চা খেতে পেয়েছ ?
আর কতদিন তোমরা খবরের বুলেটিনে রোহিঙ্গা হয়েই থাকবে ?
তোমরাও যে মানুষ, এতদিনে সেটা সংবাদকর্মীদের মনে থাকার কথাও না।


কম্যুনিজমের এই যুগেও তুমি জানো নিশ্চয়ই মায়াং,  
বাঁচতে হলে, খেতে হলে, প্রেম করতে গেলে কিয়াট প্রয়োজন  
বিনে পয়সায় কিছুটা মাখোমাখো প্রেম হয়, কিন্তু জমে ঠিক ওঠে না।
তোমার বার্মিজ প্রেমিক এসেছিল গত দু’এক মাসে ?
তোমার শরীরে হাত ছুঁইয়েছিল ?
শারীরিক উত্তেজনায় না হোক,
তীক্ষ্ণ বেয়োনেটের ক্ষত শুকাতে হলেও যে মাথার উপরে একটা হাতের স্পর্শ লাগে,
সেই হাতটা কি তুমি পেয়েছ মায়াং ?


তোমাদের জাতীয় সংগীতে তোমরা বলেছে কাবা মা কিয়্যেই-পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত বার্মা
পৃথিবীর প্রান্ত তো দূরের কথা,
দ্যাখো রাজধানী নেপিদ পর্যন্তই পৌঁছাতে পারছ না,
পৌঁছাতে পারছ না বলবে বড্ড ভুল হয়ে যায়, পৌঁছাতে দেয়া হচ্ছে না তোমাদের।  
রবি ঠাকুরের সোনার বাংলা আর সায়া তিনের কাবা মা কিয়্যেই;
দুইটার মধ্যে কোন পার্থক্য আমি দেখি না, পার্থক্য খুঁজি না।
আকাশ জল স্থল সব সীমানা অতিক্রম করে তুমি চলে এসো মায়াং,
সীমান্তের মাইনগুলোতে ভয় পেয়ে বেঁচে থাকা মানে নিজেকে অবিশ্বাস করা,
প্রত্যয়ী হও মায়াং, দৃঢ় হও; বেঁচে থাকা এখনো অনেক বাকী তোমাদের।  


মানুষকে কাঁটাতারে যারা বাঁধে, তারা কি করে শান্তিতে ঘুমায় আমি জানি না।
এদেশে যখন বন্যা হল, বোরো ধানের পাকা বীজ ডুবে গেল
তোমার দেশেও তখন রাখাইন উচ্ছেদ তুঙ্গে !
সেই মুমূর্ষু সময়ে তোমাদের দেয়া আড়াই লাখ টন চালের ঋন শোধ করতে পারছি কই?  
মানবতা বলতে একটা শব্দ এখন কেবল অভিধানেই আছে
বার্মিজ জান্তা তোমরা হজম করেছ, এটা তো তোমাদের কাছে দুধ-ভাত!
নিজেদের নিজেরাই এগিয়ে নিয়ে যাও মায়াং,
নিজেদের দল নিয়ে নিজেরা হেঁটে যাও বিশ্বের শেষ প্রান্তে,
আচ্ছা মায়াং? হাঁটতে পারবে তো? তোমার হাঁটুর ক্ষত কতটা শুকিয়েছে ?