জন্মদিন বলে কিছু নেই, জন্মদিন বলে কিছু থাকতে নেই!
যাপিত জীবনের প্রতিটি দিনেই আমার জন্ম হয়
ভোরের বাতাসে ভেসে আসা আযানের ধ্বনিতে
নীড়হারা পাখিদের কোলাহলে স্নিগ্ধ সকালে
ভরদুপুরে ক্লান্ত পথিকের ফেলে আসা পথের ধূলিতে
বিকেলের জলপাই রোদ, গোধূলীর রক্তিম আভায়
সন্ধ্যার আকাশে নেমে আসা তারাদের আলোতে
আত্মার প্রতিবিম্ব ভেসে উঠা রাত জাগা আঁধারে।


জন্মদিন বলে কিছু নেই, জন্মদিন বলে কিছু থাকতে নেই!
ইতিহাসের প্রতিটি দিনেই নিজেকে জন্মাতে দেখেছি
অভিশপ্ত সমাজের শাসক-শোসিতের গভীর ব্যবধানে
জীবন মিছিলে তেড়ে আসা একেকটা বিষাক্ত বুলেটে
অহংকারের লাথিতে ঘৃনার আঘাতে কম্পমান আর্তনাদে
মুখোশের আড়ালে লুকায়িত বন্ধুর শাণিত করাতে
অবিশ্বাসের খেরোখাতায় জমে থাকা ধূলির আস্তরনে
মিথ্যে অবহেলায়, লাঞ্চনা-বঞ্চনা-গঞ্জনার ভীড়ে।


জন্মদিন বলে কিছু নেই, জন্মদিন বলে কিছু থাকতে নেই!
স্রোতের ধারায় প্রতিটি দিনই জন্মের দাগ লেগে থাকে
চাষার হাড়ভাঙ্গা শোকের গোলা ভরা ধান আর রাখালিয়া গানে
প্যাডেল ঘুরানোর অন্তরালে ভাগ্যের চাকা ঘুরানো ক্ষয়ীষ্ণু পেশীতে
বেকার যুবকের শূন্যে ছোঁড়া দীর্ঘশ্বাস জমানো ধোঁয়াতে
জীবন আর জগত ট্রেনের সংঘর্ষে ছড়ানো স্ফুলিঙ্গে
চায়ের কাপে জমানো আড্ডায় মুঠোবন্দী বন্ধুত্বে-প্রেমে
বিষাক্ত জগতের বিলুপ্তপ্রায় আস্থা-মানবতা-বিশ্বাসে।


জন্মদিন বলে কিছু নেই, জন্মদিন বলে কিছু থাকতে নেই!
হাওয়া বদলের মঞ্চে প্রতিটি দিনই নিজেকে জন্মাতে দেখি
প্রথম জন্মের মতো কদমগুচ্ছে ভরপুর আষাড়ের বৃষ্টিতে
যুবতীর প্রগাঢ় চুম্বনের আলোড়ন শেষে নিস্তব্ধ ধ্বংসযঙ্গে
জীবনের জয়গান গেয়ে গেয়ে উদ্দেশ্যহীন পথে মায়াজালে বন্দী হয়ে রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনানন্দে
পথে-প্রান্তরে আঁধারে হারানো কবি ও কবিতাতে।


জন্মদিন বলে কিছু নেই, জন্মদিন বলে কিছু থাকতে নেই!
মাতৃজরায়ুর আঁধার ভেদ করে পৃথিবীতে আগমনের ক্ষণকে
জন্মদিন বলে না, জন্মদিন দিন বলতে নেই;
সে দিন'তো কেবল নিশ্চিত যাত্রার পথে অনিশ্চিত বিরতির সূচনা লগ্ন
এ'দিন আমায় নিশ্চয়তার পথে অনিশ্চয়তার ভয় কুঁকড়ে ফেলে।
আদতে মানুষের একেকটি নি:শ্বাস শেষে নতুন শ্বাসে জন্ম হয়
প্রথম জন্মের মতো চোখ খুলে ভিন্ন আঙ্গিকে নতুন স্বপ্নে
আমি প্রতিক্ষনেই জন্ম নিই, প্রতিদিন'ই আমার জন্মদিন।