গল্প কবিতাঃ- আঙুল
✍️ মনোজ ভৌমিক


কেবলই রাজনৈতিক দলের নেতারা ছাড়া,এখন আর কেউই কারুর উপর সেভাবে আঙুল তোলে না!সত্যি কথা বলতে দলীয় নেতাদের আঙুলে এখন আর চামড়া থাকে না।আর ওই আমজনতার মধ্যে যাদের ভীষণ আঙুল তোলা অভ্যাস,তাদের আঙুল আজকাল গুপ্ত রোগের শিকার!ঐ যে চৌধুরী পাড়ার আত্রেয়ীর মা ত্রিনয়নী,যিনি প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাড়ার এর তার উপর আঙুল তুলেই সকাল-দুপুর-রাতের খাবার হজম করেন!শুনছি,ওনার একমাত্র সুন্দরী ব্যারিস্টার মেয়েটি বেজাতে বিয়ে করে গৃহত্যাগী হয়েছে!আঙুলটিকে আজকাল আরো সোজা করে বলেতে শুনি,জানিস কি তোরা,আমার মেয়ে এখন মোম্বাইয়ের কোটিপতির স্ত্রী।শুনছি নাকি ঐ ষাটোত্তর ভদ্রমহিলা,ঠোঁটে লিপস্টিক আর চোখে কাজল লাগিয়ে
ইয়াংদের মতন মেকআপ করে সোস্যাল মিডিয়ায় ছবিও রাখেন!এটা অবশ্য আঙুলের দোষ নয়।আবার বিপত্নীক মৃগাঙ্কবাবুর যৌবন কালেই স্ত্রী বিয়োগ ঘটেছে।তবুও দ্বিতীয় বিবাহ করেননি একমাত্র ছেলে শশাঙ্কের মুখ চেয়ে।পাড়ার সকলকে আঙুল দেখিয়ে বলতেন,দ্যাখো,ছেলে আমার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে স্টার।বিজনেস ম্যানেজমেন্টে যেদিন ভর্তি হলো,মৃগাঙ্কবাবু গর্ব করে আঙুল উঁচিয়ে সবাইকে বললো,আমি মিউনিসিপ্যালিটির ক্লাস ওয়ান অফিসার।আমার ছেলে হবে আমেরিকা ফেরত বিজনেস স্টার।শশাঙ্ক যখন কৃতিত্বের সাথে ম্যানেজমেন্টের প্রথম ধাপে পা দিল,মৃগাঙ্ক তখন রিটেয়ার হলেন।এদিকে কলেজে পড়ার সময় শহরের বিখ্যাত ধনকুবের ওম আগরওয়ালের একমাত্র সুন্দরী কন্যা প্রীতির প্রেম শশাঙ্ক এতই লীন হয়েছিল যে,মৃগাঙ্কবাবু না জানলেও আগরওয়াল পরিবারের সবাই ওকে ঘর জামাই বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল।কালক্রমে এ খবর পাড়ার ছেলেদের কানে পৌঁছে গেল।এরপরই তুমুলকাণ্ড!মৃগাঙ্কবাবুর মুখের সামনে আঙুল উঠলো,কি কাকু,খুব তো আঙুল দেখাতেন?ছেলে যে ঘরজামাই হতে চলেছে..তাও অন্য জাতে?কোথায় গেলো আমেরিকা??আজকাল জাত যদিও কোনো ফ্যাক্টর নয়,তবুও.. মৃগাঙ্ক যেন আকাশ থেকে পড়লো।কাউকে কোনো প্রশ্ন না করে নির্বোধের মত বাড়ি ফিরে গেলে।সন্ধ্যায় ওর বাড়ির ভেতর থেকে ভীষণ সোরগোল শোনা গেল।পরদিন থেকে শশাঙ্ককে আর  পাড়ায় দেখা যায় না!মৃগাঙ্কবাবুও ডুমুরের ফুল!! শোনা যায় সোস্যাল মিডিয়ায় নাকি আজকাল মৃগাঙ্ক সান্যাল নামে একটি প্রোফাইল থেকে ঘন ঘন ইয়াং ছবি পোস্ট হয়!আসলে সমাজে নয়নতারা ও মৃগাঙ্করা বোঝেনা হাতের পাঁচটা আঙুলের একটাই শুধু সামনের দিকে তোলা যায়, বাকীগুলি থাকে.....