এক সকালে রাজা মশাই খেয়াল বশে
                             মন্ত্রী’রে কন ডেকে
রাজ্য জুড়ে দাওনা কেন
                            একটি নিদান হেঁকে—
এসে আমার প্রজারা সব বলুক একে একে
নিজের মতে “ক” জন চলে;
                   “ক” জন চলে বৌয়ের কথা রেখে!


ভয়ের তেমন নেইকো কিছুই ব্যাপার সরল সোজা
             উপহারও মিলবে কিছু, উপরি কিছু মজা  
যেমন ধর—
নিজের মতে চলে যারা ঘোড়া পাবে একটি তারা      
বউয়ের কথায় চললে পরে
                             আপেল পাবে বাঁধা ধরা—  


পিটিয়ে ঢেঁড়া মন্ত্রী মশাই খবর দিলেন বেঁটে
              রাজ্য জুড়ে চতুর্দিকে বার্তা গেল রটে  
সারাটা দিন মিছিল করে
                 প্রজারা সব গেলো ফিরে  
                                  আপেল নিয়ে ঘরে—    
রাজা মশাই; বিষণ্ণ মুখ
                           “রা” সরে না মুখে  
রাজ্যে এমন একজনও নেই  
                     নিজের মতে যে দাঁড়াবে রুখে!    


অতঃপরে এলেন শ্রীমান্‌ বিরূপাক্ষ রাই
         তাঁহার মত বীর বৃকোদর এ তল্লাটে নাই  
পাঞ্জা’টি তার বাঘের মত; মাঞ্জা দেওয়া ই-য়া- মোটা গোঁফ  
         চোখের ভাঁটায় উপচে পড়া একগুঁয়েমির রোখ  
বলল হেঁকে দারুণ রোষে-
                            বুঝলে কিছু মশাই    
পান থেকে চুন খসলে হল;    
                            গগন ভেদী চেঁচাই    
এতেই ভয়ে বউ’টি  আমার এক্কেবারে চুপ—  
এই না শুনে রাজা মশাই খুশিই হলেন খুব—।
  
জড়িয়ে ধরে উপহারে- দিলেন ফুলের তোড়া      
আরও দিলেন তাঁহার প্রিয়- তেজী কালো ঘোড়া    
যাক বাবা! নিশ্চিন্তি—
রাজ্যে তবে মিলল শেষে সত্যিকারের পুরুষ—  
         এই মর্মে উঠল ফুলে রাজ গরিমার ফানুস!


খানিক পরে সেই সে জোয়ান আবার এলো ফিরে
রাজা মশাই দোহাই তোমার, ভগবানের কীরে!    
              বউ বলেছে-  কালো ঘোড়া খুব অপয়া
সাদা হলেই পয়া…  
বদলে দেবেন? প্লীজ মহারাজ, একটু করুন দয়া।      
রাজা মশাই মুখ শুকালো, এটা কেমনতর ধাঁধা!    
বললে হেঁকে- ভাগ হিঁয়াসে- আপেল নিয়ে
                বউয়ের গোলাম! হদ্দ বোকা হাঁদা!  


সন্ধ্যে বেলায় বিষম দুখে  
                           রাজা বসে বিষাদ মুখে  
মন্ত্রী এলো চুপি চুপি; খাঁকরি দিয়ে গলা  
বললে- যদি অভয় দেন- একটা কথা বলা—
আপেল দিলেন সব প্রজাদের,
                                তারাও তাতে খুশী
তবে কিছু চাল পেলে;  জুটলে ভাতের দলা  
                          তাদের উপায় হত বেশি।


হুম! বুঝলাম! তবে—
         চালের কথা রাজ সভাতে কওনি কেন বাপু?
চাও কি তোমায় কোতল করি; আমড়া আঁটির ভেঁপু!  
চুলকে মাথা মন্ত্রী বলে-
  "ছাতার মাথা"! তখন কি আর মাথায় এতো ছিলো!  
এইতো মোটে শ্রীমতী সে বুদ্ধি খানি দিলো  
              বলল "এক্ষুণি যাও- সকল খুলে বলো—"।
রাজা মশাই বললে তখন—
                             ফিচেল খানিক হেসে
“মন্ত্রী— তুমি আপেল'ই খাও  
                                 বারান্দাতে বসে…"!

বুঝলে ভায়া যতই তুমি বুদ্ধি ধর; মন্ত্রী হওনা কেন
রাজার দিমাগ তুরগ তেজী-
                               এই কথাটা জেনো...    
চালের কথা আমার মাথায় প্রথম থেকেই ছিলো  
তবে কি জানো; একশ টাকা- গন্ধ চালের কিলো!
           রাখতে রাজার ঠাট- খরচা বালাই শাট!
‘আপেলই ঠিক ‘
                                   বলল বড় রানী    
মন্ত্রী বলে মুচকি হেসে—
                       রাজা মশাই—
                                তবে আপেল কেটে আনি!!