ঘরে ফেরার তাড়া,ফিরতি ট্রেনে বসে আছি
চোখ রেখে জানালায়।
হঠাৎ পাশের প্লাটফর্মে এসে দাঁড়ায় দূর পাল্লার ট্রেন,
আমি হতচকিত দমকা হাওয়ায়,
চোখ পড়ে ওপাশে।
প্রথমে ঝাপসা চোখ, একটু স্থিতু হতেই,
দেখি আমার অদূরে পাশের ট্রেনে যে বসে,
মনে হয় চেনা চেনা।
স্মৃতির ঝাঁপি উজাড় করে ভাবি,
ক্ষনিকের তরে আমি আনমনা, কিছুতেই মনে আসেনা।
সেও অবাক হয়ে চেয়ে থাকে কি জানি কেন,
আমি হারিয়ে পাওয়ার মতো, তবু খটকা যেন।
আমি বলি বলি করেও থেমে যাই
ভাবি, বলা ঠিক হবে না।


ট্রেন ছাড়ার বাঁশী বেজে ওঠে,
ধীরে ধীরে চলা শুরু করে।
তখনি শুনি,পাশের জানালা থেকে হাত নাড়িয়ে ডেকে বলছে,
অনু, তুই আমায় ভুলে গেছিস কিরে!
আমি অঞ্জনা-না –না-
রেলের ঝম ঝম আওয়াজ, তত ক্ষনে ওরও ট্রেন ছেড়ে যায়।
ঐ ডাক বার বার অনুরনিত হয়ে
হঠাৎ স্মৃতির দূয়ার খুলে দেয় আমার।


এক সাথে পড়তাম, ওর কর্ম শিক্ষার খাতায় ছবি এঁকে দিয়েছি কত,
ও বলতো,তোর হাতের লেখাটা খূব সুন্দর।
আমি ওর চুল টেনে বলতাম, তোর চোখ দুটোও।


এক দিন ওর  পড়ার ঘরে আসি,
দেখি বাড়ী নেই। আমি তার  
ফুল-পাতা সংগ্রহের খাতায় একটা গোলাপ রেখে
লিখে দিলাম, অঞ্জনা আমি তোকে ভালোবাসি।
জানতাম না ঐ বাসি গোলাপের ফুলই হবে সর্বনাশি।
শুনেছি,ওর বাবার চোখে পড়ে যায় ,
সপ্তাহ খানেক দেখা পেলাম না,যেন হারিয়ে গেল কোথায় ।
স্কুলেও যায় নি। একদিন ভোর বেলা,
ওদের বাড়ীতে গেলাম চুপি চুপি একেলা।
বাড়ীওয়ালা হেঁড়ে গলায় বলে কাকে চাই ?
মনে আতঙ্ক , বললাম এখানে যারা  ছিলো ওরা!
-ওরা তো নেই,বাড়ী ছেড়ে দিয়েছে।
আজো মনে আছে সে দিনের ঘরে ফেরা।


তার পর থেকে মনে মনে অনেক খুঁজেছি গঞ্জে শহরে ,
ট্রেন ধীর গতিতে গন্তব্যে থামে,
নামতে নামতে মনে হয়, চলে এলাম বহুদূরে ।


ওভার ব্রীজ থেকে তাকিয়ে দেখি নীচে,
ট্রেন প্লাটফর্ম ছেড়ে চলে গেছে।