৬. ঘুমের ধ্বনি

যখন পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ে
তখন আমি শুনি ঘুমের ধ্বনি
একপ্রকার প্রতিধ্বনি
যা কেবল অন্তঃশরীরের পথ দিয়ে বয়ে যায়।

প্রথমে আসে—এক নুড়িপাথর নীরবতা
তারপর গড়ায় শব্দহীন নদীর মতো
ঘুম তখন কানে ফিসফিস করে বলে
তোমার ক্লান্তি আমি কিনে নিচ্ছি।

দেয়ালে ঝোলানো ঘড়ি থেমে থাকে
তার কাঁটারা ছিঁড়ে ফেলে সময়ের শৃঙ্খল।
আমি হারিয়ে যাই এমন এক সুরে
যা পাখির ডানায় নয়
বরং মৃত কোনো সঙ্গীতজ্ঞের ঘুমঘেরা কল্পনায় জন্ম নিয়েছে।

৭. অবচেতন ছায়া

ঘুমের গভীরে
আরও গভীরে যখন ডুবে যাই
তখন দেখা মেলে এক ছায়া-রাজ্যের
যেখানে চাঁদ হাঁটে নিঃশব্দে
আর ঘুম নিজেই আত্মজীবনী লেখে অন্ধকারে।

আমার শরীর থাকে বিছানায়
কিন্তু আত্মা ভাসে বাতাসে
ছায়ার মতো, অথচ ছায়াহীন।
তখন আমি দেখি
আমার ছায়া নিজের ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করছে
দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে সময় দেখে
আর ঘুম আমাকে প্রশ্ন করে
“তুমি কি সত্যিই জেগে আছো?”

আমার ঘুম তখন নিজস্ব নায়কের মতো
যার অস্ত্র একমাত্র—ভুলে যাওয়া।

৮. বালিশের মহাকাশ

আমার বালিশ এক মহাকাশ
নক্ষত্রখচিত, স্বপ্নপিণ্ড-ঘেরা।
প্রতি রাতে আমি সেখানে উৎক্ষেপণ হই
একটি নীরব যানের মতো।

আমার ঘুম নয় কেবল বিশ্রাম
বরং এক ধরণের মহাজাগতিক বিস্মরণ
যেখানে প্রত্যেকটি স্বপ্ন একেকটি গ্রহ
যার কক্ষপথে ঘোরে
ভুলে যাওয়া দিন, অচেনা মুখ, অতীতের গন্ধ।

বালিশে মাথা রাখলেই
নির্জনতার সুর বাজে
তুমি শুনতে পাবে না সেই সঙ্গীত
যদি না তুমি নিজেই রূপান্তরিত হও
একটি চলমান ঘুমপাখিতে।

৯. শেষ নিঃশ্বাসে ঘুম

শেষ নিঃশ্বাসে ঘুম নামে
একটা অজানা অথচ চেনা উষ্ণতা নিয়ে।
তখন নিঃশ্বাস শুধু বায়ু নয়
তা হয়ে ওঠে একটি শব্দহীন প্রার্থনা,
যা চোখের পাতা ছুঁয়ে বলে
আরও একটু থাকো, আমি এসেছি তোমায় নিতে।

ঘুমের উপস্থিতি তখন মায়াবী নয়
ভীতিকরও নয়
বরং অবচেতনের শেষ আলো
যেখানে সমস্ত শব্দ নিঃশেষ হয় এক সুরে
যে সুরের ভাষা তুমি কখনো বলোনি কারো কাছে।

আমি সে ঘুমকে চিনি
সে বারবার ফিরে আসে শেষ হওয়ার আগে
একটি অদৃশ্য আলিঙ্গনের মতো
যেখানে আমি নিজেই হারিয়ে যাই।

১০. ঘুমহীন প্রহর

ঘুমহীন এই প্রহর
যেন এক প্রাচীন অঙ্গার
যার তাপে গলে যায় রাতের স্তব্ধতা।
বিছানায় আমি,
কিন্তু আমি নই
শুধু এক ঘোর-ছায়া, ঘুমের প্রতীক্ষায় ধুঁকতে থাকা।

পাশে বালিশ, জানালা, অন্ধকার
সব আছে, শুধু নেই ঘুম।
সে হয়তো ভুল পথে চলে গেছে
বা হয়তো দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাইরে,
দ্বিধা নিয়ে:
সে কি আসবে আমার কাছে, নাকি যাবে অন্য কারো স্বপ্নে?

ঘড়ির কাঁটা হেসে ওঠে
প্রতিটি টিক যেন এক বিষণ্ন হাসি
আর আমি শুধু গুনি
এই নিঃশব্দতাকে ছুঁয়ে যেতে কত শব্দ মরেছে
কত ঘুম বিনিদ্র হয়ে উঠেছে।