কেউ জানে না।
নীরব দুপুর নিমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলো। স্থান মেদেনীপুরের অচিন গাঁ ।  
নিমন্ত্রণের ঝুলিতে ছিলো ডায়মন্ডহারবার। হাওড়া। দার্জিলিং। পার্কস্ট্রীট।
আমিও নিমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেছিলাম। কেবল সময় ও সুযোগের অপেক্ষা।
অবশ্য মনে মনে ঘুরে এসেছি। অকৃত্তিম ভালোবাসা। কখনও ফুরিয়ে যায় না।


আমিও নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। ঢাকার রমরমা বইমেলা। যেন এক স্বর্গীয় উদ্যান।
টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর। যেখানে ভাষা শহীদদের আত্মা ঘুরাফেরা করে।
সারা বাংলার খোঁজ-খবর নেয়।
সেখান থেকে হাজারো শাপলা ফোটা কাজল গাঁ।  রনিয়ার বিল। উজাড় বাড়ি।
যেখানে মা এবং প্রকৃতি যেন এক। কোনো প্রভেদ নেই।


জসীম উদদীন নিমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলেন। আমিও মহাউল্লাসে গিয়েছিলাম।
আসমানিদের গাঁ। রূপাই। জালি লাউয়ের ডগার মতোন বাহু দু”খান সরু।  
খুব বেশি দিন পরে নয়। মাত্র এক প্রজন্ম। কিংবা এর কিছুটা কম সময়।  
এসে বেশ হতাশ হয়েছি। কবিতার সাথে কোনো মিল নেই। কেমন জানি।
গ্রাম না শহর বুঝা গেলো না।  
জসীম উদদীন বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে কষ্ট পেতেন। আমিও কম কষ্ট পাইনি।
এখনও বুকের ভেতর চিনচিন করছে।


হালখাতার নিমন্ত্রণপত্র পেয়েছিলাম। সে অনেক বছর আগে। এখন আর পাই না।
যেদিন গেছে সেদিন নাকি আর ফিরে আসে না। স্বপ্নে দেখতে হয়।
বিকেল হলেই ডাকসই ডাকতো। বউচি ডাকতো। দাড়িয়াবান্ধা ডাকতো।
এখন এরা কেউ আর ডাকে না।
চাঁদনী পসর রাইতে জোসনা ডাকতো। সেও এখন আর ডাকে না। ডিজিটাল অইছে।


সেদিন স্বপ্নে দেখি, সারা দেশের সব মানুষের হাতে হাতে নিমন্ত্রণপত্র।
তারা এক টেবিলে বসে খেতে চায়। তারা বিভেদ চায় না। হানাহানি চায় না।
মা ও মাটির ভালোবাসায় একাত্মা হতে চায়।
কেউ তাদের কথা শুনে না। নিমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করে না।  
তাহলে নিমন্ত্রণপত্র গুলোর কী হবে?
কেউ বলতে পারলো না। না নীরব দুপুর। না আমি। না অন্য আর কেউ।।


(কবিবন্ধু সৈকত পাল আমাকে একটি নিমন্ত্রণপত্র লিখতে উৎসাহিত করেছেন; তাই কবিতাটি তাঁকে উৎসর্গ করা হলো)