পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশ।  যিনি রবীন্দ্রযুগে জন্ম নিয়েও রবীন্দ্রধারা থেকে প্রভাবমুক্ত হয়ে নিজস্ব স্টাইলে কবিতা রচনা করেছেন।  কবিতায় তার গভীর জীবনবোধ এবং দার্শনিকতা তাকে স্বতন্ত্র করেছে।  প্রকৃত কবিরা সময়কে নিরূপণ করতে পারেন- তাদের দূরদর্শিতা কবিতাকে সমকালীন করে রাখে, পুরনো হয় না কখনো। জীবনানন্দের অনেকগুলো কবিতার তেমনি একটি কবিতা ‘অদ্ভুত আঁধার এক’।  এ কবিতায় কবি মূলত দুটি বিষয়কে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফোকাস করেছেন।


১. প্রথম চারটি চরণে তিনি শাসকশ্রেণি, নির্যাতনকারী জুলুমবাজদের বহুমাত্রিক চরিত্র নির্ণয় করেছেন; যারা দুর্বিনীত। অযোগ্যের শাসন এবং পরামর্শ এমনভাবে সমগ্রতাকে কবজা করেছে- যাকে কবি ‘অদ্ভুত আঁধার ’ নামে অভিহিত করেছেন। যাদের হৃদয়ে প্রেম নেই- দয়া নেই- তারাই অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী হয়ে উঠেছে।


‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই- প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া’


২. শেষ চারটি চরণে কবির দৃষ্টিভঙ্গি এমন : যাদের চোখে পৃথিবীটা আজো সুন্দর-স্বাভাবিক, যারা বিশ্বাস করে মানুষকে, অমর সত্যকে- তারাই মিথ্যা, দুর্বিনীত এবং দুঃশাসনের শিকার। সাধনা ছাড়া আর যাই হোক শিল্প হয় না কখনো। তবুও শিল্পের আখড়ায় অযোগ্যের বাড়াবাড়ি বাড়ছে।


‘যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।’