ফুল চাই ---- চাই কেয়াফুল!----  
সহসা পথের ‘পরে  
আমার এ ভাঙ্গা ঘরে  
কন্ঠ কার ধ্বনিল আকুল।  
  
তখনো শ্রাবণ-সন্ধ্যা  
নিঃশেষে হয়নি বন্ধ্যা-----  
থেকে থেকে ঝরিতেছে জল;  
পবন উঠিছে জেগে,  
বিজলী ঝলিছে বেগে------  
মেঘে মেঘে বাজিছে মাদল।  
  
জনহীন ক্ষুব্ধ পথ  
জাগিছে দুঃস্বপ্নবৎ----  
বুকে চাপি’ আর্ত্ত অন্ধকার;  
কোনমতে কাজ সারি’  
যে যার ফিরিছে বাড়ী,  
ঘরে ঘরে বন্ধ যত দ্বার।  
  
শূন্য ঘরে  
হিয়া গুমরিয়া মরে  
স্মরি’ যত জীবনের ভুল;  
অকস্মাৎ তারি মাঝে  
ধ্বনি কার কানে বাজে-----  
চাই ফুল----চাই কেয়াফুল!  
  
পাগল!   আজি এ রাতে  
এ দুর্য্যোগ-অভিঘাতে----  
বৃষ্টিপাতে বিলুপ্ত মেদিনী;  
তার মাঝে কে আছে,  
কেতকী-সৌরভ যাচে!  
কোথায় বা হবে বিকিকিনি?  
পবন উঠিছে মাতি!  
কিছুক্ষণ কান পাতি’  
মনে হ’ল গিয়াছে বালাই;  
সহসা আমারি দ্বারে  
ডাক এল একেবারে----  
চাই ফুল --- কেয়াফুল চাই!  
  
ভাবিলাম মনে মনে-----  
হয়ত বা এ জীবনে  
কোনোদিন কিনেছিনু ফুল;  
সেই কথা মনে ক’রে  
আজো বা আশায় ঘোরে;  
কিম্বা কারে করিয়াছে ভুল!  
  
তাড়াতাড়ি আলো তুলি’  
বাহিরিনু দ্বার খুলি,  
সবিস্ময়ে দেখিলাম চেয়ে----  
মাথায় বৃহৎ ডালা,  
দাঁড়ায়ে পসারী-বালা-----  
শ্রাবণ ঝরিছে অঙ্গ বেয়ে;  
  
কহিলাম, এ কি কান্ড!  
তোমার পসরাভান্ড  
আজ রাতে কে কিনিবে আর ?  
এ প্রলয়ে কারো কাছে  
কিছু কি প্রত্যাশা আছে-----  
কেন মিছে বহিছ এ ভার!  
  
আর্দ্র দেহে আর্দ্র বাসে  
সে কহিল মৃদু হাসে,-----  
শিরে বায়ু সুগন্ধ ছড়ায়----  
যে ফুল বেসাতি করি,  
বাদল যে শিরে ধরি,-----  
কপালে লিখিল বিধি তাই!  
  
বহিয়া দুখের ঋণ  
যে কষ্টে কাটাই দিন-----  
এ দুর্দ্দিন কিবা তার কাছে?  
ওগো তুমি নেবে কিছু?  
নয়ন হইল নীচু----  
সেথাও বা মেঘ নামিয়াছে!  
  
খোলা দরজার পাশে  
বায়ু গরজিয়া আসে,  
ফুলবাসে ভরি দেহ-মন;  
ঝর-ঝর  ঝরে জল,  
আঁখি করে ছল-ছল  
ঘনাইয়া প্রাণের শ্রাবণ!  
  
বাদলের বিহ্বলতা----  
বুঝি হায়!   লাগিল তা’  
নয়নে বচনে সর্ব্ব দেহে;  
সহসা চাহিয়া আড়  
রমণী ফিরাল ঘাড়-----  
উর্দ্ধে যেন কি দেখিবে চেয়ে!  
  
না কহিয়া কোন বাণী  
পসরা লইনু টানি’-----  
মূল্য তার হাতে দিনু যবে,  
উজার করিতে ডালা  
কাঁদিয়া ফেলিল  বালা------  
ওমা এ কি ---- এত কেন হবে?  
  
কহিনু ---যা’ কিনিলাম,  
এ নহে তাহারি দাম-----  
প্রতিদিন দিতে হবে মোরে;  
এক পণ দুই পণ----  
যেদিন যেমন মন,  
তাহারি আগাম দিনু তোরে;  
  
কতক বুঝে’  না-বুঝে’  
হৃদয়ের ভাষা খুঁজে’  
বহুকষ্টে জানাইয়া তাই,  
পুষ্পগন্ধে মোরে ঘিরে’  
অন্ধকারে ধীরে-ধীরে  
পসারিনী লইল বিদায়।  
  
ফিরিনু একলা ঘরে-----  
বাদল তখনো ঝরে,  
পুষ্পগন্ধে পূর্ণ গৃহতল;  
শয্যা লইলাম পাতি’  
নিবায়ে দিলাম বাতি----  
আবার আসিল বেগে জল!  
  
রুদ্ধ জানালার ফাঁকে  
বাতাস কাহারে ডাকে,  
বিজলী চমকি’ কারে চায়!  
কোন্ অন্ধ অনুরাগে  
ত্রিযামা যামিনী জাগে  
শ্রাবণ ব্যাকুল-ব্যর্থতায়!  
  
সঙ্গীহীন শূন্য ঘরে  
হিয়া গুমরিয়া মরে----  
স্মরিয়া এ জীবনের ভুল;  
সেই সাথে থেকে- থেকে  
মনে হয় --- গেল ডেকে’  
কাননের যত কেয়াফুল!